বিএনএ,চট্টগ্রাম: সারা দেশের ন্যায় কক্সবাজারের টেকনাফেও একদল ছাত্রদের নেতৃত্বে চলছিল বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলন। সেই আন্দোলনে ছাত্রদের পাশাপাশি যোগ দেন বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ । আন্দোলনে যোগ দেয়া লোকদের লাঠি পেটা করতেন এবং আন্দোলন কারীদের আটক করে মোটা অংকের টাকা আদায় করতেন বলে অভিযোগ উঠেছে এএসআই মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে। এমনকি স্থানীয় সাংবাদিকদেরও আওমীলীগের পক্ষে প্রচারণা চালানোর জন্য চাপ প্রয়োগ করতেন বলেও অভিযোগ ওঠেছে তার বিরুদ্ধে। এএসআই মোশাররফ হোসেন টেকনাফ মডেল থানায় দীর্ঘদিন ধরে কর্মরত রয়েছেন। তখন ভয়ে কেউ মুখ খুলেনি । জুলাই গণঅভ্যুত্থানের আন্দোলনের ফলে আওয়ামী লীগ সরকার পতনের পরেও এএসআই মোশাররফ হোসেন টেকনাফ মডেল থানায় রাজার হালতে বহাল থাকায় হতাশ হয়ে পড়েছেন তার হাতে নির্যাতিত আন্দোলন কারীরা।
সরেজমিন খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় স্টেশনের দোকানে বসা অবস্থায়ও বিএনপি জামায়াতের কোনো লোকজন দেখলেই পেটাতেন এই পুলিশ কর্মকর্তা । এমনকি দোকানে বিএনপি জামায়াতের লোকদের বসার সুযোগ দিলে দোকান বন্ধ করে দেয়ার হুমকি দিতেন বলেও অভিযোগ করেন স্থানীয় দোকানদাররা । মোশাররফ আওয়ামী লীগ সরকারের লাঠিয়াল হিসাবে জনগণের উপর লাঠিচার্জ করেও কীভাবে এখনো টেকনাফ থানায় বহাল থাকে এমনি প্রশ্ন স্থানীয় সচেতন মহলের । পতিত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এএসআই মোশারফের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েছিল টেকনাফের সাধরণ মানুষ । তার ভয়ে বিএনপি জামায়াতের অনেক নেতাকর্মী বাড়িছাড়া হয়ে পথেঘাটে নির্ঘুম রাত কাটিয়েছেন। এত এত অত্যাচারের পরেও সগৌরবে টেকনাফ থানায় এখনো বহাল তবিয়তে রয়েছে এই পুলিশ কর্মকর্তা।
টেকনাফের স্থানীয় বাসিন্দা জিয়াউল ইলহাম নামে এক ছাত্র জানান, ছাত্র আন্দোলনে যোগ দেয়ার কারণে তাকে আটক করে নিয়ে যায় মোশাররফ। পরে ২০ হাজার টাকার বিনিময়ে ফজরের আগে আগে তাকে ছেড়ে দেয়া হয়। এএসআই মোশাররফ কে আওয়ামী লীগের দালাল উল্লেখ করে তিনি আরো জানান,পরবর্তীতে আন্দোলনে যোগ দিলে তাঁর মা-বাবা কে গ্রেপ্তার করবে বলেও হুমকি দেয় মোশাররফ। এখন সে ভিন্ন রূপ ধারণ করে টেকনাফ থানায় বহাল রয়েছে । শুধু জিয়াউল নয়,এভাবে অনেক আন্দোলন কারী ও বিএনপিসহ রাজনৈতিক নেতাকর্মীদের কাছ থেকে মামলা দেওয়ার হুমকি দিয়ে টাকা আদায় করতেন বলেও অভিযোগ রয়েছে মোশাররফের বিরুদ্ধে।
ওসামা নামে স্থানীয় এক দোকানদার বলেন, প্রতিনিয়ত মোশাররফ দোকানে এসে হুমকি দিতেন। কোনো বিএনপির নেতাকর্মীকে দোকানে বসার সুযোগ দিলে দোকান বন্ধ করে দেবেন বলেও সাফ জানিয়ে দেন।
টেকনাফ উপজেলা বিএনপির দপ্তর সম্পাদক নুরুল হুদা ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেন,কন্ট্রাকে মানুষের দোকান দখলসহ বাজারের এক চায়ের দোকানে ওপেন ঘুস বাণিজ্যের হাট বাসাতেন এবং ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছিল এএসআই মোশাররফ। এমনকি ৩ আগস্টেও সে আন্দোলন কারী ছাত্র-জনতার উপর লাঠি দিয়ে হামলার চেষ্টা চালায়। সে কীভাবে এখনো বহাল থাকে,এমন প্রশ্ন তোলেন এবং তার খুঠির জোর কোথায় তাও জানতে চান তিনি।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক ভূক্তভোগী মহিলা বলেন,প্রতিবেশী কিছু দুর্বৃত্তের হাতে মারধরের শিকার হয়ে টেকনাফ মডেল থানায় একটি অভিযোগ করেছিলাম গত ২১ সেপ্টেম্বর। সেই অভিযোগের তদন্তের দায়িত্ব দেয়া হয় এএসআই মোশাররফ কে। তাকে কিছু খরচ দিয়েছি। এক মাস পেরিয়ে গেলেও রহস্যজনক কারণে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি মোশাররফ। হয়তো তাকে মোটা অংকের টাকা দিতে পারিনি বলেই তাই ব্যবস্থা নিচ্ছে না।
তার বিরুদ্ধে আরো অভিযোগ রয়েছে, পুলিশের চাকরি যেন এএসআই মোশাররফের জন্য টাকার মেশিন। টাকা ছাড়া তিনি কোনো কাজই করেন না। ভূক্তভোগীরা তার কাছে খুবই অসহায়। আওয়ামী লীগের লাঠিয়াল ও ছাত্র-জনতার উপর হামলাকারী জনশত্রু এএসআই মোশাররফ হোসেনকে দ্রুত চাকরিচ্যুত করে আইনের আওতায় আনার জোর দাবি জানিয়েছেন টেকনাফের ভূক্তভোগী জনতা।
জানতে চাইলে এএসআই মোশাররফ হোসেন অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন,উনার বিরুদ্ধে উঠা অভিযোগগুলো সত্য নয় এবং সত্যটা লিখার অনুরোধ করেন।
টেকনাফ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মুহাম্মদ গিয়াস উদ্দিন বলেন, ৫ আগস্টের আগে যারা করছে করছেই,অফিসার নাই তো আস্তে আস্তে চেইঞ্জ করতেছি। এখনো কীভাবে সে বহাল থাকে এমন প্রশ্নে ওসি বলেন,এটা তো উপরের কর্তৃপক্ষ জানে, আমার তো আর বদলি করার ক্ষমতা নাই। বিষয়টি তার নলেজেও আছে বলেও জানান। কক্সবাজারের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহর সরকারি মোবাইল নাম্বারে কয়েকবার কল দিলেও রিসিভ না করায় বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি ।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ/এইচমুন্নী