বিএনএ, ঢাকা: প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর অবসরে যাচ্ছেন। কিন্তু সেপ্টেম্বর মাসে অবকাশকালীন ছুটি থাকায় মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হিসেবে শেষ বিচারিক কর্মদিবস পালন করেন তিনি।
সুপ্রীম কোর্টের আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ৩০ আগস্ট থেকে আগামী ২৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির দায়িত্ব পালন করবেন বলে জানা গেছে।
হাইকোর্টের একটি দায়িত্বশীল সূত্র জানায়, আগামী ২৫ সেপ্টেম্বর দেশের ২৪তম বিচারপতি ওবায়দুল হাসান দেশের প্রধান বিচারপতি হিসেবে শপথ নিবেন। এর আগে ২০২১ সালের ৩০ ডিসেম্বর দেশের ২৩তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয় বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীকে।
বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০১৩ সালের ২৮ মার্চ আপিল বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি কুষ্টিয়া জেলার খোকসা উপজেলার রমানাথপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মরহুম আব্দুল গফুর মোল্লা। ১৯৭২ সালে তিনি খোকসা জানিপুর পাইলট হাইস্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন। এইচএসসি পাস করেন ১৯৭৪ সালে সাতক্ষীরার সরকারি পিসি কলেজ থেকে।
আরও পড়ুন: ২৪তম প্রধান বিচারপতি কে এই ওবায়দুল হাসান শাহীন
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী বিএ পাস করেন সাতক্ষীরা সরকারি কলেজ থেকে। এমএ পাস করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে। এলএলবি পাস করেন ধানমন্ডি ল’ কলেজ থেকে। ১৯৮১ সালে হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ঢাকা জজ কোর্টে আইন পেশায় যোগ দেন। ১৯৮৩ সালে হাইকোর্ট বিভাগে এবং ১৯৯৮ সালে আপিল বিভাগে আইনজীবী হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হন।
হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী ২০০১ সালে হাইকোর্টে অতিরিক্ত বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। পরে ২০০৯ সালে হাইকোর্ট ডিভিশনে স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। তার ভাই বিচারপতি আবু বকর সিদ্দিকীও আপিল বিভাগের বিচারপতি ছিলেন।
নতুন ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএসএস, এমএসএস ও এলএলবি ডিগ্রি অর্জনের পর ১৯৮৬ সালে জেলা আদালত, ১৯৮৮ সালে হাইকোর্ট বিভাগ এবং ২০০৫ সালে আপিল বিভাগের আইনজীবী হিসেবে তালিকাভুক্ত হন। ২০০৯ সালের ৩০ জুন তিনি হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি এবং ২০১১ সালের ৬ জুন স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এই বিচারপতি আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এরও চেয়ারম্যান ছিলেন।
দেশের ২৪তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসান ১৯৫৯ সালের ১১ জানুয়ারি নেত্রকোণা জেলার মোহনগঞ্জ থানার ছয়াশী প্রকাশ হাটনাইয়া গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা আখলাকুল হোসাইন আহমেদ ও মা বেগম হোসনে আরা হোসাইন। ওবায়দুল হাসানের পিতা ডাক্তার আখলাকুল হোসাইন আহমেদ ১৯৭০ সালের গণপরিষদের সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংগঠক ছিলেন। গণপরিষদ সদস্য হিসেবে স্বাধীনতার পর বাংলাদেশের সংবিধান রচনায় সক্রিয় অংশগ্রহণ করেন এবং গণপরিষদ কর্তৃক গৃহীত সংবিধানে স্বাক্ষর করেন। তার অনুজ প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সিনিয়র সচিব ও বিমান পরিবহন পরিচালনা পর্ষদের চেয়ারম্যান সাজ্জাদুল হাসান বর্তমানে নেত্রকোনা ৪ আসনের সংসদ সদস্য।
দেশের ২৪ তম প্রধান বিচারপতি ওবায়দুল হাসানের ডাক নাম শাহীন। তার স্ত্রী নাফিসা বানু বর্তমানে বাংলাদেশ রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকা কর্তৃপক্ষ পরিচালনা পরিষদের একজন ফিন্যান্স সদস্য হিসেবে কর্মরত আছেন। তাদের সন্তান ব্যারিস্টার আহমেদ শাফকাত হাসান। তিনি ইউনিভার্সিটি অব ডারহাম থেকে আন্তর্জাতিক আইনে এলএলএম ডিগ্রি অর্জন করেন।
আইন এবং বিচারক পেশায় বর্ণাঢ্য অভিজ্ঞ বিচারপতি ওবায়দুল হাসান শুধু বিচারক নন, লেখকও। ‘অবর্ণনীয় নির্মমতার চিত্র : একাত্তরের বুদ্ধিজীবী হত্যাকান্ড ও অন্যান্য’ এবং ‘বঙ্গবন্ধু বাংলাদেশ : একজন যুদ্ধশিশুর গল্প ও অন্যান্য’ নামক দুটি গ্রন্থ রচনা করেন।
গত এক দশকে আপিল বিভাগে বিচারপতি নিয়োগে সুপারসিডের একাধিক ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালে জ্যেষ্ঠতা লঙ্ঘন করে বিচারপতি এবিএম খায়রুল হককে প্রধান বিচারপতি নিয়োগ দেওয়া হলে আপিল বিভাগের দুই বিচারপতি ছুটিতে যান। তারা হলেন- বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন ও বিচারপতি শাহ আবু নাঈম মোমিনুর রহমান।
একইভাবে বিদায়ী প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনকে ২০১৮ সালের ২ ফেব্রুয়ারি নিয়োগ দেওয়া হলে বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহ্হাব মিয়া পদত্যাগ করেন।
আরও পড়ুন: দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৯০ (ঢাকা-১৭)
বিএনএনিউজ/ বাবর মুনাফ/ হাসনাহেনা