বিএনএ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রামবাসীর বহুদিনের স্বপ্ন। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়ে। অবশেষে আলোর মুখ দেখছে। প্রকল্প পরিচালক নিয়োগ পেয়েছে। ফিজিবিলিটি স্টাডি রিপোর্ট আগামী ডিসেম্বরের ২০২১ মধ্যে পাবার কথা। চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা এক্সপ্রেসওয়েটির চারটি পয়েন্টে বাইপাস করার জন্য জমি অধিগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরু করেছে। প্রকল্পের অর্থায়ন নিয়ে জাপানের মারুবিনি কর্পোরেশনের সাথে প্রাথমিক আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ের সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগ
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো. নজরুল ইসলাম ফিজিবিলিটি স্টাডির অগ্রগতি পর্যবেক্ষণ করতে সম্প্রতি প্রকল্প এলাকা পরিদর্শন করেছেন। প্রকল্প সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী জানুয়ারিতে প্রকল্পের ডিটেইল ডিজাইন শুরুর কথা রয়েছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়ে বাস্তবায়িত হলে দক্ষিণ চট্টগ্রামের যোগাযোগ ব্যবস্থায় বড় ধরনের পরিবর্তন আসবে।যাতায়াতে কমে যাবে সময়। বাংলাদেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি বহু বছর যাবত অবহেলিত।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কে যেখানে যানজট নিত্য ঘটনা
সূত্র জানিয়েছে, পর্যটন নগরী কক্সবাজার ছাড়াও পার্বত্য জেলা বান্দরবানসহ দক্ষিণ চট্টগ্রামের ৮ উপজেলার বাসিন্দারা চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক ব্যবহার করে চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের সাথে যোগাযোগ রক্ষা করে। ১৯৯৫ সালের আগে মহাসড়কটির উন্নয়ন করা হয়। এরপর থেকে মাঝেমধ্যে মেরামত করা হলেও হলেও এই দীর্ঘ সময়ে সড়কটি সম্প্রসারণ করা হয়নি। বর্তমানে কক্সবাজারের মহেশখালী এলএনজি টার্মিনাল, মহেশখালী পাওয়ার হাব, মাতারবাড়ী পাওয়ার হাব, মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরসহ বেশ কয়েকটি মেগা প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে। অন্যদিকে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের অবস্থানের কারণে কক্সবাজারের সাথে বিদেশি কুটনীতিক, দাতা সংস্থা ও পর্যটকদের যাতায়াত বেড়েছে কয়েক গুণ। সব মিলিয়ে মহাসড়কটি দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার বাস, ট্রাক, প্রাইম মুভার চলাচল করছে। এর ফলে মহাসড়কটির অনেক স্থানে চন্দনাইশ উপজেলার দোহাজারি, সাতকানিয়ার কেরানিহাট, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ, চকরিয়ায় প্রতিনিয়ত যানজট লেগে থাকে। মহাসড়কের ৬৬ কিলোমিটারে রয়েছে ৫০টি ঝুঁকিপূর্ণ বাঁক। শাহ আমানত তৃতীয় সেতু থেকে শুরু করে পটিয়া, চন্দনাইশ, সাতকানিয়া ও লোহাগাড়া উপজেলার চুনতি পর্যন্ত এসব বাঁক রয়েছে। বাঁক ছাড়াও রাস্তার দু’পাশে অবৈধ স্থাপনা, হাট-বাজার বসার ফলে দুর্ঘটনা ও যানজট প্রতিদিনই লেগে রয়েছে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে -চারলেনের পরিবর্তে
সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিএনএনিউজ২৪কে বলেন, সড়ক ও জনপথ বিভাগ ২০১৮ সালের মাঝামাঝি চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কটি সম্প্রসারণের উদ্যোগ নেয়। ২০১৯ সালের শুরুর দিকে ১৩৯ কিলোমিটার চারলেন সড়ক করার জন্য প্রায় ১২ বাজার কোটি টাকার একটি প্রকল্প প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে জমা দেয়া হয়। সরকার পাশাপাশি একই সময়ে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয়। ফলে প্রস্তাবিত চার লেনের প্রকল্পটি আর বাস্তবায়নের সম্ভাবনা দেখছেন না সড়ক ও জনপথ বিভাগের কর্মকর্তারা।
ফিজিবিলিটি শেষে নির্ধারণ হবে কর্ণফুলীর সাথে কীভাবে যুক্ত হবে
কর্মকর্তারা বলেন, বেশ কয়েকটি রুট নিয়ে সম্ভাব্যতা যাচাই চলছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়েতে। বর্তমান মহাসড়ক সম্প্রসারণ করার মাধ্যমে ডেটিকেটেড এক্সপ্রেসওয়ে লেন রেখে প্রকল্প বাস্তবায়ন, কিংবা আলাদা লেইন করে এক্সপ্রেসওয়ে হবে কিনা সে বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি কেউ। তবে নতুন এক্সপ্রেসওয়েটি শাহ আমানত সেতু কিংবা নতুন প্রস্তাবনাধীন কর্ণফুলী চতুর্থ সেতু দিয়ে সংযুক্ত হবে কিনা, সেটি ফিজিবিলিটি শেষে নির্ধারণ করা হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীরা।
এক্সপ্রেসওয়ের বিষয়ে দোহাজারী সড়ক ও জনপথ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী সুমন সিংহ বলেন, ফিজিবিলিটি স্টাডি চলছে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণের জন্য। ফিজিবিলিটি স্টাডির কার্যক্রম দেখে গেছেন সচিব মহোদয়। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ডিসেম্বরের মধ্যেই ফিজিবিলিটি স্টাডির রিপোর্ট পাওয়ার কথা রয়েছে।
বাইপাস ও ফ্লাইওভারে হবে যেখানে
তিনি বলেন, এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে বাইপাস হবে পটিয়া, দোহাজারী, লোহাগাড়ার আমিরাবাদ ও চকরিয়া অংশে। ফ্লাইওভার হবে কেরানিহাট এলাকায়। ফিজিবিলিটি স্টাডির পর জানা যাবে বাইপাস ও ফ্লাইওভারের সাথে এক্সপ্রেসওয়ে কীভাবে যুক্ত হবে। প্রকল্পের জন্যে পটিয়া বাইপাস সম্প্রসারণের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে বাইপাসের জন্য জমি অধিগ্রহণ শুরু হয়েছে। প্রাথমিক আলোচনা শুরু হয়েছে এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পে অর্থায়নের জন্য জাপানের মারুবিনি কর্পোরেশনের সাথে।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক শ্যামল কুমার ভট্টাচার্য্য গণমাধ্যমকে বলেন, এখনো বিভিন্ন ধরনের স্টাডি চলছে। একটি চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানা যাবে ফিজিবিলিটি স্টাডি শেষ হলে। বিভিন্ন ধরনের প্রপোজল থাকে ফিজিবিলিটি স্টাডিতে । যে প্রপোজলটি সরকার গ্রহণ করবে, তখন বিষয়টি সম্পর্কে পুরোপুরি ধারণা দেয়া সম্ভব হবে এবং প্রকল্পের ডিটেইল ডিজাইনের পর প্রকল্প ব্যয় নির্ধারণ করা সম্ভব হবে। বুয়েটের প্রকৌশলীরা কাজ করছেন ফিজিবিলিটি স্টাডিতে। টিম লিডার হিসেবে কাজ করছেন বুয়েটের সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ড. ইশতিয়াক আহমেদ।
চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়কের দৈর্ঘ্য ১৫৫ কিলোমিটার। দুই ঘণ্টায় এই দূরত্ব অতিক্রম করার সুযোগ থাকলেও সময় লেগে যায় চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা। রাস্তাটির বেহাল দশা দেশের সেরা পর্যটন কেন্দ্রের বিকাশে বড় অন্তরায়। তাছাড়া প্রায়শ দুর্ঘটনা ঘটায় চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক মৃত্যুফাঁদও বলা যায়। চট্টগ্রাম-কক্সবাজার এক্সপ্রেসওয়ে প্রকল্পটি যতদ্রুত বাস্তবায়িত হবে ততই দেশের জন্য ও দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর জন্য মঙ্গলজনক হবে।
বিএনএনিউজ২৪/আমিন,জিএন