বিএনএ ডেস্ক: ঢাকায় উজবেকিস্তানের দূতাবাস প্রতিষ্ঠা, দুই দেশের মধ্যে পর্যটন খাত আরও চাঙ্গা করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক জোরদার করতে ঢাকায় উজবেকিস্তানের দূতাবাস স্থাপন এবং দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালুর বিষয়েও আলোচনার কথা জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
শুক্রবার (২৯ জুলাই) ঢাকার একটি হোটেলে ‘উজবেকিস্তান-বাংলাদেশ থার্ড ইন্টারগভর্নমেন্টাল কমিশন অন ট্রেড অ্যা ইকোনমিক কোঅপারেশন’ শিরোনামের বৈঠকে দুই দেশের প্রতিনিধিদের মধ্যে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের বিভিন্ন সম্ভাবনা নিয়েও ‘ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয় বলে জানান টিপু মুনশি।
বৈঠক শেষে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, তুলা উৎপাদনে তারা অনেক এগিয়ে আছে, সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশের টেক্সটাইল মিল খাতে তারা বিনিয়োগ করতে পারে। তারাও এ বিষয়ে আগ্রহ দেখিয়েছে। একসময় বাংলাদেশ থেকে সরাসরি উজবেকিস্তানের ফ্লাইট পরিচালিত হত উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, পুনরায় ফ্লাইট চালু করার বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।
মন্ত্রী জানান, সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে সেটা হচ্ছে, তাদের দূতাবাস এখানে প্রতিষ্ঠা করা। আমাদের দেশের দূতাবাস ওখানে আছে, কিন্তু ওদের দেশের দূতাবাস এখানে নেই। এটাতে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। শিগগিরই তারা তাদের সিদ্ধান্ত জানাবে।
বাংলাদেশ থেকে অনেক মানুষ উজবেকিস্তানে ভ্রমণ করতে যেতে চায় উল্লেখ করে বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, উজবেকিস্তানের সামারখান্দ ও বোখারায় রয়েছে ইমাম বুখারী ও ইমাম তিরমিজির মাজার। এসব এলাকায় যাওয়ার জন্য প্রচুর মানুষ অপেক্ষা করে আছে। এখন সেখানে যেতে হলে ১৭/১৮ ঘণ্টা লেগে যায়। অথচ সরাসরি ফ্লাইট চালু করলে সাড়ে ৪ ঘণ্টার মধ্যে চলে যাওয়া সম্ভব কমবে খরচও। তাছাড়া ইউরোপে প্রবেশের গেটওয়ে হিসেবেও এই দেশ ব্যবহার হতে পারে। এসব সম্ভবনা থাকার কারণে তারাও আগ্রহ দেখাচ্ছেন।
বৈঠকে বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন; সঙ্গে ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান। উজবেকিস্তান প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে ছিলেন দেশটির উপ প্রধানমন্ত্রী জামশেদ কাদজায়েভ।
বৈঠকের পর সালমান এফ রহমান বলেন, তাদের কাছে কাঁচামাল, বিশেষ করে তুলা আছে। আমাদের এখানেও এক্সপার্টিজ আছে। সুতরাং যৌথভাবে এই খাতে কীভাবে বিনিয়োগ করা যায়, সেটা নিয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন বিটিএমএ কাজ শুরু করেছে।
তিনি জানান, আরেকটা খাত হচ্ছে ওষুধ শিল্প। তাদের ওখানে ফার্মাসিটিক্যালস সেক্টর অতটা ডেভেলপ করে নাই, যেটা বাংলাদেশে হয়েছে। আমরা সেখানে সরাসরি ওষুধ শিল্পে বিনিয়োগ করতে পারি, আবার বাংলাদেশ থেকে ওষুধ রপ্তানিও হতে পারে। আমাদের চামড়া শিল্পে ও তাদের বিনিয়োগ করার সুযোগ রয়েছে, সেটা নিয়েও আমরা আলাপ করেছি।
পর্যটন খাতে দুই দেশই পারস্পরিক অংশগ্রহণে আগ্রহী জানিয়ে তিনি বলেন, “সেজন্য দুই দেশের মধ্যে সরাসরি ফ্লাইট চালু করার প্রস্তাব আমরা দিয়েছি। ওরা হচ্ছে ল্যান্ডলকড দেশ, তাদের কোনো সমুদ্রসৈকত নেই। আমরা বলেছি, আমাদের কক্সবাজার তাদের জন্য ভালো একটা ট্যুরিজম ডেস্টিনেশন হতে পারে।
“ওরা বলেছে, তাদের সামারখান্দ-বোখারা নগরীতে একটা জিয়ারা ট্যুরিজম সম্ভাবনা রয়েছে। এটা একটা প্যাকেজ হতে পারে। ওখান থেকে লোকজন আসলো কক্সবাজারে, আর আমরা এখানে থেকে গেলাম সামারখান্দ-বোখারায়।”
গত বছরের শেষের দিকে সালমান এফ রহমানের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলসহ উজবেকিস্তান সফর করেছিলেন। পরে উজবেক প্রতিনিধিদল এসেছিল বাংলাদেশে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসেবে, গত ১০ বছরে উজবেকিস্তানে বাংলাদেশের রপ্তানি ছয় গুণ বেড়েছে। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে যেখানে ৪.৩৬ মিলিয়ন ডলার রপ্তানি হয়েছিল, সেখানে ২০২১-২০২২ অর্থবছরে রপ্তানি হয়েছে ২৬ দশমিক ৩৩ মিলিয়ন ডলার।
একই সময়ে দেশটি থেকে আমদানির পরিমাণ কমতে থাকায় একসময়ের বিশাল বাণিজ্য ঘাটতি এখন প্রবৃদ্ধিতে রূপান্তরিত হয়েছে। ২০১০-২০১১ অর্থবছরে বাংলাদেশ উজবেকিস্তান থেকে ৬২২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করেছিল। ওই বছর বাণিজ্য ঘাটতি ছিল ৬১৭ মিলিয়ন ডলার। আর বিগত ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে মাত্র ৪৪ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি করার ফলে ১৯ মিলিয়ন ডলারের উদ্বৃত্ত থেকেছে।
বিএনএ/ এ আর