বিএনএ, সাভার ,ইমরান খান: ঢাকার ধামরাইয়ে বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে আকর্ষণীয় বেতনে চাকুরি দেয়ার নামে কয়েক কোটি টাকা হাতিয়ে লাপাত্তা হয়েছে সংঘবদ্ধ প্রতারকচক্র। ওই প্রতারক চক্রের এক সদস্যের নাম মোঃ রোবেল হোসেন। তিনি উপজেলার বালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সূত্রাপুর গ্রামের মোহাম্মদ হযরত আলীর ছেলে। ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের সাবেক কার্গো শ্রমিক। তবে এলাকায় বড় অফিসার হিসাবেই পরিচিত।
ওই প্রতারকচক্রের চার সদস্যরা হলো, উপজেলার গাঙ্গুটিয়া ইউনিয়নের কাওয়ালীপাড়া গ্রামের মোঃ উসমান গণি মিয়ার ছেলে মোঃ শাখাওয়াত হোসেন(৫৫), বালিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম সূত্রাপুর গ্রামের মোঃ হযরত আলীর দুই ছেলে মাহমুদুল হক হাসান মাহিদুল(৩০) ও মোঃ রোবেল হোসেন, সানোড়া ইউনিয়নের চড়কুন্ড গ্রামের মোঃ আব্দুল কাইয়ুম(৫৫)।
রোববার চাকুরি প্রত্যাশীদের ইন্টারভিউ দিতে নেয়ার কথা বলে শনিবার সকালে তার বাড়ীতে আসতে বলে সবাইকে। তারা তার কথা মতই শনিবার সকাল ৭টায় তার বাড়ীতে এসে উপস্থিত হয়ে দেখে বাড়ীতে কোন লোকজন নেই। পুরো বাড়ীই ফাাঁকা। ঘরের দরজায় ঝুলছে বড় বড় তালা। তার মুঠোফোন নম্বরটিও বন্ধ রয়েছে। শতাধিক ব্যক্তি দিনভর ওই বাড়ীর উঠানেই খোলা আকাশের নীচে অবস্থান করে। সকাল থেকে দুপুর ও দুপুর গড়িয়ে বিকাল হয়ে যায় কিন্ত রোবেল স্যার আর বাড়ী ফিরেনা। হতাশ হয়ে তারা নিজ নিজ বাড়ী ফিরে যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, রোবেল এলাকায় আসে নামীদামী ব্র্যান্ডের প্রাইভেট গাড়ীতে চেপে। পরণেও থাকে দামী পোশাক পরিচ্ছদ। এলাকাবাসীর কাছে তিনি রোবেল স্যার হিসাবে পরিচিত। এ সুবাদে সে উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের শত শত মানুষের কাছ থেকে চাকুরি দেয়ার নামে টাকা হাতিয়ে নেয়। গ্রামের মানুষ চাকুরি পাওয়ার আশায় সরল বিশ্বাসে তাকে মোটা অংকের টাকা দেয়। কেউ স্ত্রীর সোনার গহণা, পালের বড় গরু কিংবা ভিটেমাটি বিক্রি করে আবার অনেকেই এনজিও কিংবা ব্যাংক থেকে লগ্নি করে তাকে টাকা দেয়। এভাবে টাকা হাতিয়ে নিয়ে সে রাতরাতি এলাকা ছেড়ে লাপাত্তা হয়ে যায়।
অভিযোগকারিদের মধ্যে মধুডাঙা গ্রামের কলার বেপারি মোঃ আব্বাস আলীর কাছ থেকে সাড়ে ৪লাখ টাকা, কেরানীগঞ্জের মোঃ করি মেম্বারের কাছ থেকে আড়াই লাখ টাকা, পশ্চিম সূত্রাপুর গ্রামের মোঃ মামুন হোসেনের কাছ থেকে ৭লাখ টাকা, আমতা গ্রামের মোঃ আব্দুর রহমানের কাছ থেকে ৫লাখ টাকা, কুশুরা গ্রামের মোঃ আলমিন হোসেনের কাছ থেকে ৭লাখ টাকা, পশ্চিম সূত্রাপুর গ্রামের মোঃ জুয়েল হোসেনের কাছ থেকে ৫লাখ টাকা, চরকুন্ড গ্রামের মোঃ আলমগীর হোসেনের কাছ থেকে ৬লাখ টাকা, কুশুরা ইউনিয়নের কুনি কুশুরা গ্রামের মানিক সাহার ছেলে সাগর সাহার কাছ থেকে ৪লাখ টাকা, হাতকোড়া গ্রামের মোঃ মানিক মিয়ার কাছ থেকে ৯লাখ টাকা, কাওয়াখোলা গ্রামের রতনের কাছ থেকে ৬লাখ টাকা, কাওয়ালীপাড়া গ্রামের মোঃ শওকত হোসেনের কাছ থেকে ২০লাখ টাকা, বাসনা গ্রামের সুজনের কাছ থেকে ৬লাখ টাকা, পশ্চিম সূত্রাপুর গ্রামের পীর মোঃ শহরআলী চিশতির কাছ থেকে ৭লাখ টাকা, মোঃ শফিকুল ইসলামের কাছ থেকে ৫লাখ ৫০হাজার টাকা, মোঃ শাহীনুর ইসলামের কাছ থেকে ৫লাখ টাকা, মাদারপুর গ্রামের মহসীন মিয়ার কাছ থেকে ৬লাখ টাকা ও সানোড়া ইউনিয়নের আলমগীরের কাছ থেকে ৪লাখ ৫০হাজার টাকা চাকুরি দেয়ার নামে ওই প্রতারক রোবেল হোসেন হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানান। এছাড়া আরও বিভিন্ন এলাকার শত শত ব্যক্তির কাছ থেকে হাতিয়ে নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
ভুক্তভোগিরা আরও জানায়, রোবেল হোসেন এলাকার ছেলে। তাই সরল বিশ্বাসে চাকুরির জন্য তার কাছে টাকা দেই। সে আমাদের রোববারে ইন্টারভিউ দিতে নেয়ার কথা। শনিবার সকালে সে আমাদের সকল চাকুরি প্রত্যাশীদের তার বাড়ীতে যেতে বলে। আমরা তার কথামত তার বাড়ীতে গিয়ে তাকে বাড়ীতে পাইনি। অন্যকোন মানুষজনও বাড়ীতে ছিলনা। পুরো বাড়ীই ফাঁকা ছিল ও ঘরের দরজায় তালাবদ্ধ। সে আমাদের টাকা নিয়ে উধাও হয়ে গেছে। তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটিও বন্ধ রয়েছে। বিকাল সাড়ে ৫টার পর্যন্তও তার দেখাে মেলেনি এবং মোবাইলফোনেও সংযোগ মেলেনি। এখন আমাদের চোখে হতাশা ছাড়া আর কিছুই দেখছিনা।
এ ব্যাপারে রোবেল হোসেনের পিতা হযরত আলী বলেন, রোবেলকে টাকা দেয়ার বিষয়ে আমি কিছুই জানিনা। আমাকে জানিয়ে কেউ তাকে টাকা দেয়নি। এখন আমাকে এসব বলেকয়ে কোন লাভ নেই। আমি এব্যাপারে কিছুই বলতে পারবো না।
বিএনএ/ওজি