18 C
আবহাওয়া
৭:০০ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ফেনী কারাগারে বাবুল আক্তারকে স্থানান্তর

ফেনী কারাগারে বাবুল আক্তারকে স্থানান্তর

ফেনী কারাগারে বাবুল আক্তারকে স্থানান্তর

বিএনএ,চট্টগ্রাম: চাঞ্চল্যকর মাহমুদা খানম মিতু হত্যা মামলায় কারাবন্দি সাবেক পুলিশ সুপার (এসপি) বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফেনী কারাগারে পাঠানো হয়েছে। কী কারণে তাকে স্থানান্তর করা হয়েছে এ বিষয়ে জানাননি কারা কর্মকর্তারা।

শনিবার (২৯ মে) সকাল সাড়ে ১০টার দিকে তাকে ফেনী কারাগারে নিয়ে যাওয়া হয়। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার দেওয়ান মো. তারিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী বাবুল আক্তারকে ফেনী কারাগারে অবস্থানের জন্য সেখানে পাঠানো হয়েছে।

বিশেষ কোনও কারণ আছে কিনা জানতে চাইলে জেলার বলেন, তেমন বিশেষ কোনও কারণ না। কর্তৃপক্ষ চেয়েছে তার অবস্থানটা ফেনী কারাগারে হোক। সেজন্য তাকে সেখানে পাঠানো হয়েছে।

তবে অভিযোগ রয়েছে, কারাগারে বসে একই মামলায় কারাবন্দি অন্য আসামিদের মধ্যে প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছিলেন তিনি। তার সম্পৃক্ততা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে মুখ না খুলতে বিভিন্ন মাধ্যমে আসামিদের চাপ দিচ্ছিলেন বাবুল আক্তার।

এর আগে গত ১৭ মে মিতু হত্যা মামলার প্রধান আসামি সাবেক পুলিশ সুপার বাবুল আক্তারকে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম আদালতে জবানবন্দি দেয়ার জন্য হাজির করা হয়। বিচারক নিয়ম অনুযায়ী স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিতে রাজি হওয়ার জন্য তাকে তিন ঘণ্টা সময় দেন। জবানবন্দি দিতে রাজি হলে বাবুলকে বিচারকের চট্টগ্রাম মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের খাসকামরায় নেয়া হয়। কিন্তু পরে জবানবন্দি দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানান। পরে আদালত তাকে কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

এরপর গত ২০ মে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সারোয়ার জাহানের আদালত কারাবন্দি শাহজাহান মিয়াকে (২৮) গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত। তিনি মামলার ৮ নম্বর আসামি। এর আগে একই ঘটনায় বাবুল আক্তার বাদী হয়ে দায়ের হওয়া প্রথম মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে কারাগারে ছিলেন শাহজাহান।

এ নিয়ে মিতু হত্যার ঘটনায় দায়ের হওয়া নতুন মামলায় বাবুল আক্তারসহ ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হলো। পাঁচজনই নতুন মামলার এজাহারভুক্ত আসামি।

তথ্যমতে, ওয়াসিম ও আনোয়ার প্রায় ৫ বছর ধরে কারাগারে আছেন। পাশাপাশি আরও দুই আসামি সাইফুল ইসলাম সিকদার এবং শাহজাহান মিয়া আছে চট্টগ্রাম কারাগারে। মিতু হত্যার পর ২০১৬ সালের ২৬ জুন আনোয়ার ও ওয়াসিমকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তারা আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেন। আর সাইফুল ইসলাম সিকদার মামলার ২ নম্বর আসামি লাপাত্তা থাকা মুসার আপন ভাই। মিতুর পিতা হত্যা মামলা দায়ের করলে রাঙ্গুনিয়া থেকে তাকে গ্রেপ্তার করে র্যা ব। অপর আসামি শাহজাহান মিয়াও আগে থেকেই কারাগারে ছিলেন। ২০ মে মহানগর হাকিম সারোয়ার জাহানের আদালত শাহজাহান মিয়াকে এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন। এর আগে ওয়াসিম ও আনোয়ারকে পিবিআইয়ের আবেদনের প্রেক্ষিতে আদালত এই মামলায় গ্রেপ্তার দেখানোর আদেশ দেন।

এছাড়া এই মামলায় কামরুল ইসলাম শিকদার প্রকাশ মুসা শুরু থেকেই রয়েছে আড়ালে। আরেক আসামি খায়রুল ইসলাম কালুরও কোনো খোঁজ পায়নি পুলিশ কিংবা পিবিআই।

মুসার পরিবারের দাবি, ২০১৬ সালে মিতু হত্যাকাণ্ডের কয়েকদিন পর পুলিশ মুসাকে ঘর থেকে তুলে নিয়ে যায়। কিন্তু পুলিশ তা অস্বীকার করছে শুরু থেকে। কারাগারে থাকা ওয়াসিম আর আনোয়ারের আদালতে দেয়া স্বীকারোক্তিমুলক জবানবন্দিতে উঠে এসেছিল মুসার নির্দেশেই তারা হত্যাকাণ্ডে অংশ নেয়।

এদিকে মিতু হত্যাকাণ্ডের ২৩ দিনের মাথায় মনির নামে এক সহযোগীসহ এহতেশামুল হক ভোলাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। সেসময় পুলিশ জানিয়েছিল, হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত অস্ত্র সরবরাহ করেছিল ভোলা। ভোলার বিরুদ্ধে মিতু হত্যা ছাড়াও ডবলমুরিংয়ে ট্রাকচালক হত্যা, পাঁচলাইশে নার্সিং কলেজের জ্যেষ্ঠ শিক্ষক অঞ্জলী রাণী দেবী হত্যাসহ দুই ডজনের কাছাকাছি মামলা রয়েছে। সব মামলায় জামিন নিয়ে করোনার মধ্যে কারাগার থেকে বের হয় ভোলা। এরপর থেকে ভোলাও উধাও।

সবমিলিয়ে মিতুর বাবা সাবেক পুলিশ পরিদর্শক মোশারফ হোসেনের দায়ের করা মামলার ৮ আসামির মধ্যে দুইজন শুরু থেকেই লাপাত্তা। জামিনে গিয়ে উধাও একজন। অপর চার আসামি আছে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে।

উল্লেখ্য, ২০১৬ সালের ৫ জুন সকালে চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচলাইশ থানার ওআর নিজাম রোডে ছেলেকে স্কুলবাসে তুলে দিতে যাওয়ার পথে বাসার অদূরে গুলি ও ছুরিকাঘাত করে হত্যা করা হয় মাহমুদা খানম মিতুকে। স্ত্রীকে খুনের ঘটনায় পুলিশ সদর দপ্তরের তৎকালীন এসপি বাবুল আক্তার বাদী হয়ে নগরীর পাঁচলাইশ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। জিজ্ঞাসাবাদসহ নানা নাটকীয়তার পর ওই বছরের আগস্টে বাবুল আক্তারকে চাকরি থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।

২০২০ সালের জানুয়ারিতে মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। এরপর মামলার তদন্তে গতি আসে। ১৫ মাস পর গত ১১ মে বাদী বাবুল আক্তারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেয় পিবিআই। তবে এর আগেই ঘটনার সঙ্গে বাবুল আক্তারের সম্পৃক্ততা থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হন তদন্তসংশ্লিষ্টরা। পরদিন আদালতে চূড়ান্ত প্রতিবেদন দাখিল করা হয় বাবুল আক্তারের মামলার।

এরপর মিতুর বাবা মোশাররফ হোসেন নগরীর পাঁচলাইশ থানায় বাবুল আক্তারকে প্রধান আসামি করে নতুনভাবে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলায় আরও ৭ জন আসামি আছেন। এরা হলেন- মো. কামরুল ইসলাম সিকদার ওরফে মুসা (৪০), এহতেশামুল হক ওরফে হানিফুল হক ওরফে ভোলাইয়া (৪১), মো. মোতালেব মিয়া ওরফে ওয়াসিম (২৭), মো. আনোয়ার হোসেন (২৮), মো. খায়রুল ইসলম ওরফে কালু (২৮), সাইদুল ইসলাম সিকদার (৪৫) ও শাহজাহান মিয়া (২৮)। এই মামলাও তদন্ত করছে পিবিআই।

মোশাররফ হোসেনের মামলায় গ্রেপ্তার দেখিয়ে ১২ মে বাবুল আক্তারকে আদালতে হাজির করে পিবিআই। আদালত তার ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। বাবুল আক্তারকে পিবিআই হেফাজতে রেখে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়।

বিএনএনিউজ/মনির

Loading


শিরোনাম বিএনএ