25 C
আবহাওয়া
২:০৬ অপরাহ্ণ - জানুয়ারি ৩০, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » অপরাধের স্বর্গরাজ্য যেন পটিয়া

অপরাধের স্বর্গরাজ্য যেন পটিয়া

অপরাধের স্বর্গরাজ্য যেন পটিয়া

বিএনএ, চট্টগ্রাম: চট্টগ্রামের পটিয়ায় সাম্প্রতিক সময়ে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতি ঘটেছে। প্রায় প্রতিদিনই ঘটছে অপরাধমূলক নানা কর্মকাণ্ড। খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, বসতবাড়িতে চুরি-ডাকাতি, গরু চুরি, অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় ছাড়াও বিভিন্ন এলাকায় জায়গা দখল-বেদখলের হিড়িক পড়েছে। এ যেন এক মগের মুল্লুক! গত এক মাসে উপজেলায় এ রকম বেশ কয়েকটি চাঞ্চল্যকর ঘটনা ঘটেছে।

স্থানীয়দের অভিযোগ, অপরাধীরা অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হয়ে দিনে ও রাতে শোডাউন করলেও পুলিশ যেন নীরব দর্শক! এমন পরিস্থিতিতে ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষ ভয়ে আতঙ্কিত। গত ৫ আগস্ট দেশে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের পর পটিয়ায় যেসব রাজনৈতিক মামলা হয়েছে তার মধ্যে এজাহারনামীয় আসামিদের গ্রেপ্তার না করে সাধারণ লোক ধরে নিয়ে বাণিজ্য করছে পুলিশ। পটিয়াজুড়ে মাটিখেকোদের তাণ্ডব থামছেই না। প্রতিদিন কৃষিজমির টপসয়েল, পাহাড় কেটে সাবাড় করে দেওয়া হচ্ছে। ইউএনও, এসি ল্যান্ড এর বিরুদ্ধে তৎপর হলেও পটিয়া থানা পুলিশের ভূমিকা রহস্যজনক। গণঅভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে পটিয়ায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমেই ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাইয়ের পাশাপাশি পটিয়ার পাহাড়ি এলাকায় অপহরণ আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা কৃষকসহ বিভিন্ন লোকজনকে ধরে গহিন পাহাড়ে নিয়ে ভয়ভীতি দেখিয়ে মোটা অঙ্কের মুক্তিপণ আদায় করছে। মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে মুক্তিপণের টাকা দিতে কেউ দেরি করলে অপহৃতকে হাত-পা বেঁধে শারীরিক নির্যাতন করা হয়। গত ২২ জানুয়ারি রাতে উপজেলার বড়লিয়া ইউনিয়নের সুমন শীলের বাড়িতে প্রবাসীর চালানি নিয়ে আসেন রনি শীল। এ সময় তাকে মারধর করে সৌদি রিয়াল, আই ফোন ও বিকাশে মুক্তিপণ আদায় করে পরে ছেড়ে দেওয়া হয়। পাহাড়ি এলাকায় হঠাৎ করে অপহরণ বেড়ে যাওয়ায় লোকজন আতঙ্কের মধ্যে দিনযাপন করছে। ভয়ে এলাকার অসংখ্য পাহাড়ে কৃষিকাজ ছেড়ে দিয়েছে স্থানীয় কৃষকরা। গত এক মাসে উপজেলার কেলিশহর ইউনিয়নের খিল্লাপাড়া ও মৌলভীবাজার এলাকা থেকে ৭ থেকে ৮ জনকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায় করা হয়েছে। তাদের মধ্যে রয়েছেন হাইদগাঁও গ্রামের হামিদ (৬০) ও মুজিব (৩০)। তাদের একজন ৩০ হাজার টাকা মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পেয়েছেন এবং অন্যজন পালিয়ে এসেছেন। এ ছাড়া মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাওয়া কৃষক মামুন মিয়া (৪২) জানান, তার বড় ভাই আবদুল মান্নান পটিয়া থানায় এজাহার করলেও পুলিশের গড়িমসির কারণে অপরাধীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়ে গেছে।

পটিয়া খামার মালিক সমিতির সভাপতি কপিল উদ্দিন বলেন, গরু চুরি পটিয়ায় কোনোভাবেই থামানো যাচ্ছে না। চোরের ভয়ে অনেকে খামার ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছেন। সমিতির পক্ষ থেকে ইতিপূর্বে চট্টগ্রাম পুলিশসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের লিখিতভাবে জানানো হলেও গরু চুরি বন্ধ করতে পারেনি পুলিশ।

স্থানীয়রা জানায়, প্রায় প্রতিদিনই বিশেষ করে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলে বেপরোয়া হয়ে ওঠে অপরাধীরা। পটিয়া বাইপাস সংলগ্ন আনসার ভিডিপি ক্যাম্প থেকে শ্রীমাই ব্রিজ পর্যন্ত এলাকা যেন অপরাধীদের স্বর্গরাজ্যে পরিণত হয়েছে। বাইপাসের বিভিন্ন পয়েন্টে চুরি, ছিনতাইয়ের ঘটনা মানুষকে দিনদিন আতঙ্কিত করছে। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার আজিমপুর গ্রামে খুনের ঘটনা ঘটে। চালক আলমগীর আলমের হাত, পা ও মুখ বেঁধে খুন করে তার অটোরিকশা ছিনতাই করে ছিনতাইকারীরা। চাঞ্চল্যকর এ খুনের ঘটনায় পুলিশ এখনও কাউকে গ্রেপ্তার ও অটোরিকশাটি উদ্ধার করতে পারেনি। খুনের ঘটনার পরদিনই শুক্রবার সকালে উপজেলার ধলঘাট ইউনিয়নের রেলস্টেশন এলাকা থেকে রাজন দত্ত (৩০) নামের এক শিক্ষকের মরদেহ উদ্ধার করে পুলিশ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (পটিয়া সার্কেল) আরিফুল ইসলাম বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ কাজ করছে। অপরাধের সুনির্দিষ্ট তথ্য পেলে অবশ্যই আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

বিএনএনিউজ/ নাবিদ/শাম্মী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ