চট্টগ্রাম: মানুষের কল্যাণে বিত্তবানদের এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন।
শনিবার (২৮ ডিসেম্বর) চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলার মাদার্শা ইউনিয়নের বাবুনগর জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানে উপদেষ্টা এসব কথা বলেন। নুরে হাবীব ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশন এই শীতবস্ত্র বিতরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, রাজনৈতিক কোনো অভিলাষ আমার নেই। জনগণের সেবা করাই একমাত্র লক্ষ্য। সুদীর্ঘ কর্মজীবন শেষ করেছি। এখন জীবনের বাকি সময়টুকু মানুষের সেবায় কাটিয়ে দিতে চাই। তিনি সাতকানিয়া উপজেলাবাসীর কল্যাণে সম্ভাব্য সকল ধরনের প্রচেষ্টা চালিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
নুরে হাবীব ওয়েলফেয়ার ফাউন্ডেশনের সভাপতি ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সাঈদ আহসান খালিদের সভাপতিত্বে এ অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে তাকওয়া ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান গাজী ইয়াকুব, অঙ্গীকার এসও বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট ক্যাপ্টেন আতিক ইউ.এ. খান, আস-সিরাজ ফাউন্ডেশনের প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক তানভীর সিরাজ, আন-নাদিল ইমদাদী আল-ইসলামীর প্রতিনিধি মতিউর রহমান প্রমুখ বক্তব্য রাখেন। এসময় সাতকানিয়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মিল্টন বিশ্বাস ও অফিসার ইনচার্জ মোস্তাফা কামাল উপস্থিত ছিলেন।
এ অনুষ্ঠানে স্বেচ্ছাসেবী ৫টি সংগঠনের সহায়তায় ১ হাজার ৬০০ জন শীতার্ত গরিব-অসহায় মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেন ধর্ম উপদেষ্টা।
এর আগে ধর্ম উপদেষ্টা একই উপজেলার মাদরাসা-ই-আবু হুরাইরা (রা.) মাঠে মাদার্শা যুব উন্নয়ন পরিষদের ব্যবস্থাপনায় ১ হাজার ৩০০ জন গরিব-অসহায় মানুষের হাতে শীতবস্ত্র তুলে দেন। সেখানে অন্যান্যের মধ্যে চট্টগ্রাম মহানগর জামায়াতে ইসলামীর আমির আলহাজ্ব শাহজাহান চৌধুরী ও চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির আনোয়ারুল আলম চৌধুরী-সহ মাদার্শা যুব উন্নয়ন পরিষদের নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।
জুলাই বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না
এদিকে ধর্ম উপদেষ্টা ড. আ ফ ম খালিদ হোসেন বলেছেন, জুলাই বিপ্লবে প্রায় এক হাজারের মতো মানুষ শহিদ হয়েছেন। অনেকে আহত হয়ে দুর্বিষহ জীবনযাপন করছেন। এছাড়া, অনেকে পঙ্গুত্ব বরণ করেছেন। এ বিপ্লবকে ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না।
উপদেষ্টা ২৮ ডিসেম্বর কক্সবাজারে হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসা মাঠে ‘রিইউনিয়ন হাশেমিয়ান-২০২৪’ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় এসব কথা বলেন। এলামনাই এসোসিয়েশন অব হাশেমিয়া কামিল মাদ্রাসা এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।
ধর্ম উপদেষ্টা বলেন, মুসলিম সমাজ আজ বহুধাবিভক্ত। আমাদের এ মুহূর্তে সবচেয়ে প্রয়োজন ঐক্য। মুসলমানদের ঐক্য, বাংলাদেশি জাতি-গোষ্ঠীর ঐক্য। মুসলমানেরা যতদিন ঐক্যবদ্ধ ছিলেন ততদিন তারা পৃথিবীতে রাজত্ব করে গেছেন। যেই মুহূর্ত হতে আমরা বিভেদ, সংঘাত ও পারস্পরিক কাদা ছোড়াছুড়িতে লিপ্ত হয়েছি সেই মুহূর্ত হতে আমাদের শক্তি ক্ষয় হতে শুরু করেছে। আমাদের পতন অনিবার্য হয়ে পড়েছে। তিনি মুসলিম উম্মাহর কল্যাণে সকল ভেদাভেদ ভুলে সবাইকে একতাবদ্ধ হওয়ার অনুরোধ জানান।
উপদেষ্টা বলেন, সারা পৃথিবী আজ সংঘাত-বিক্ষুব্ধ এবং মুসলমানদের রক্ত ঝরছে। জেরুজালেম, আরাকান, সিরিয়া ও লেবাননে মুসলমানদেরকে হত্যা করা হচ্ছে। আমাদের দেশের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এ মুহূর্তে ঐক্যই আমাদের একমাত্র শক্তি। এ শক্তিকে আমাদের কাজে লাগাতে হবে। সকল মতভেদকে ভুলে আমাদেরকে কাছাকাছি আসতে হবে। স্বাধীনতার ৫৩ বছরে এদেশের আলেমসমাজ যদি কাছাকাছি আসতে পারতেন তাহলে নতুন ইতিহাস রচিত হতে পারতো। অতীতে আমরা বারবার বিভেদে জড়িয়েছি। এ অতীত থেকে শিক্ষা নিয়ে আগামীর পথ রচনা করতে হবে। তিনি আরো বলেন, মুসলমানদের অনৈক্যের কারণেই বাগদাদ ধ্বংস হয়েছে, হালাকু খান বাগদাদ দখল করতে পেরেছিল। পৃথিবীতে এখনও প্রায় ২০০ কোটি মুসলমান। মুসলমানেরা যদি এক হতে পারে, ওআইসি এবং আরব লীগকে যদি শক্তিশালী ও কার্যকর করা যায় তাহলে পৃথিবী নতুন পথে চলবে।
জুলাই বিপ্লবে আহতদের দুর্বিষহ অবস্থার কথা উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, আমরা যদি মনে করি আমাদের আন্দোলন-বিপ্লব শেষ, তাহলে ভুল হবে। আমাদের কাজ এখনও অনেক বাকি। যদি প্রয়োজন পড়ে আমাদেরকে আবারও মাঠে নামতে হবে। সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর একের পর এক নাশকতামূলক কর্মকাণ্ড চালানো হয়েছে। সরকারের পথযাত্রাকে বাধাগ্রস্ত করতে নানা অপচেষ্টা চলছে। কিন্তু সকল চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সরকার সামনে এগিয়ে যাচ্ছে। তিনি দেশ ও জাতির কল্যাণে সকলকে সোচ্চার থাকার অনুরোধ জানান।
‘রিইউনিয়ন হাশেমিয়ান-২০২৪’ এর আহ্বায়ক মাওলানা নজরুল ইসলামের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা মুহাম্মদ নশাহজাহান, জেলাপ্রশাসক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন, পুলিশ সুপার মুহাম্মদ রহমত উল্লাহ প্রমুখ।
বিএনএনিউজ২৪,এসজিএন