24 C
আবহাওয়া
১০:৩৫ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ত্রি-দেশীয় চাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার?

ত্রি-দেশীয় চাপে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার?


বিএনএ ডেস্ক : প্রায় চার বছরের মিশন নিয়ে ক্ষমতাসীন হওয়া নোবেল জয়ী বিশ্ববরণ্য অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের চারমাস বয়স পূরণ হবে আগামী ৮ ডিসেম্বর। এর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য এবং সর্বশেষ ভারত, অন্তর্বর্তীকালীন এ সরকারকে ‘হলুদ কার্ড’ দেখিয়ে সতর্ক করেছে। তাছাড়া দেশের বড়ো রাজনৈতিক দল বিএনপি শুরু থেকে নির্বাচনের দাবিতে চাপ দিয়ে আসছে।

YouTube player

শুধু তাই নয়- রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ, আওয়ামী লীগ, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটকে নিষিদ্ধ করার বিষয়ে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রস্তাবনাকে নাকচ করে দিয়েছে। ফলে ঘরের রাজনীতির মাঠেও কোণঠাসা অবস্থায়, রাষ্ট্র পরিচালনা করে আসছিলেন রাজনীতিতে অনভিজ্ঞ অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।

এই অবস্থায় গত ৫ নভেম্বর অনুষ্ঠিত হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রত্যাশা ছিল ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী কমলা হ্যারিস প্রেসিডেন্ট হবেন। কিন্তু নির্বাচিত হয়েছেন, রিপাবলিক দলের প্রার্থী ডোনাল্ড ট্রাম্প। নির্বাচনের ৫দিন আগে হঠাৎ সামাজিক যোগামাধ্যম ‘এক্স’এ একটি পোস্ট দেন। এতে ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বাংলাদেশে হিন্দু, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য সংখ্যালঘুদের ওপর ‘বর্বর’ সহিংসতা চালানো হচ্ছে এবং তারা হামলা ও লুটপাটের শিকার হচ্ছেন। এসবের নিন্দা জানিয়ে তিনি বলেছেন যে বাংলাদেশ একটি সম্পূর্ণ “বিশৃঙ্খল” অবস্থার মাঝে রয়েছে।

নির্বাচনে জয়ী হওয়ার পর ডোনাল্ড ট্রাম্প আরেক চমক দেখান। সাবেক কংগ্রেস ওম্যান লেফটেন্যান্ট কর্নেল তুলসী গ্যাবার্ডকে ন্যাশানাল সিকিউরিটি এজেন্সির পরিচালক হিসেবে ঘোষণা করেন। এই তুলসী গ্যাবার্ড একজন সনাতনী অর্থাৎ হিন্দু এবং ইসকন সদস্য। ফলে আগামী বছরের মার্চ মাসের দিকে যুক্তরাষ্ট্রের ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসন থেকে একটি ধাক্কা ইউনূস সরকারের ওপর আসবে—এমন পূর্বাভাস রাজনৈতিক অঙ্গনে রয়েছে।

এই অবস্থায় বাংলাদেশে চলমান রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন যুক্তরাজ্যের একদল আইনপ্রণেতা। দেশটির একটি আন্তদলীয় পার্লামেন্টারি গ্রুপ, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডেভিড ল্যামিকে সতর্ক করে বলেছে, বাংলাদেশের পরিস্থিতি যেভাবে প্রতিনিয়ত অস্থিতিশীল হয়ে উঠছে, তাতে যুক্তরাজ্য আরও একটি ‘বৈশ্বিক উত্তেজনায়’ জড়িয়ে পড়তে পারে।

গত ২৬শে নভেম্বর যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদ মাধ্যম ইন্ডিপেনডেন্টের এক প্রতিবেদন সূত্রে জানা গেছে, দ্য অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর দ্য কমনওয়েলথের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সহিংসতা ও অস্থিরতার পরও হাসিনা সরকারের পতন অনেকের জন্য আনন্দ এবং আশার বাণী নিয়ে এসেছিল। কিন্তু অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পর বাংলাদেশে ২ হাজারের বেশি সহিংসতার ঘটনা নথিভুক্ত করা হয়েছে।

বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশোধ নিতে বিচারব্যবস্থাকে ‘অস্ত্রে পরিণত করেছে’। প্রতিবেদনে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ আরও বলেছে, আমরা এমন প্রমাণ পেয়েছি, যা বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। আইনকে রাজনৈতিক অস্ত্র হিসেবে ব্যবহারের সংস্কৃতি অবিলম্বে বন্ধ করা প্রয়োজন বলে মন্তব্য করে অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ।

প্রতিবেদনে হত্যা মামলার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপনের পাশাশাশি, নিরাপত্তা পরিস্থিতি, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন, আইনের শাসনের অভাব, ইসলামী উগ্রবাদীদের উত্থানসহ নানা বিষয়ের কথা উল্লেখ করা হয়েছে।
সংসদীয় গ্রুপ বলেছে, তারা তথ্য পেয়েছে যে, সাবেক মন্ত্রী, সংসদ সদস্য, আওয়ামী লীগ নেতা, সাবেক বিচারপতি, বুদ্ধিজীবী, আইনজীবী ও সাংবাদিকদের বিরুদ্ধে ‘এত সংখ্যায়’ হত্যা মামলা করা হচ্ছে যে, ‘সেগুলোর বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে’।

বাংলাদেশের একটি ইংরেজি জাতীয় দৈনিকের বরাতে গ্রুপটি তাদের প্রতিবেদনে আরও উল্লেখ করে, আওয়ামী লীগে যুক্ত প্রায় ১ লাখ ৯৪ হাজার ব্যক্তির বিরুদ্ধে ফৌজদারি মামলা হয়েছে। এর মধ্যে ২৬ হাজার ২৬৮ জনের নাম উল্লেখ এবং প্রায় ১ লাখ ৬৮ হাজার জনের নাম অজ্ঞাত রাখা হয়েছে।

এ ছাড়া বহু সাংবাদিক ও বিশিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে, তাদের ধরপাকড়ও চলছে।

আগস্টের শেষ নাগাদ বাংলাদেশে ১ হাজার মানুষ নিহত হওয়ার বিষয়টি উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘ছাত্রদের বিক্ষোভ থেকে শুরু হওয়া আন্দোলনে শেখ হাসিনা সরকারের পতন ও অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের তিন মাসের বেশি সময় পার হয়ে গেছে। কিন্তু এরপরও বাংলাদেশের কিছু কিছু জায়গায় নিরাপত্তা পরিস্থিতি খুবই বিপজ্জনক অবস্থায় পৌঁছে গেছে।

বিগত কয়েক মাসে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘুদের নিশানা করে যেসব ঘটনা ঘটেছে, তা নিয়েও উদ্বেগ জানিয়েছেন ব্রিটিশ আইনপ্রণেতারা। পাশাপাশি তাঁরা বলেছেন, ‘কট্টর ইসলামপন্থীদের এখন ক্রমশ রাজনৈতিকভাবে প্রভাবশালী ও দৃশ্যমান হওয়ার মতো প্রমাণ আসতে শুরু করেছে।

যুক্তরাজ্যের, দ্য অল-পার্টি পার্লামেন্টারি গ্রুপ ফর দ্য কমনওয়েলথের এই প্রতিবেদন যখন হাউস অব কমন্স’এ উপস্থাপন করা হয়, তার পরের দিন বাংলাদেশের সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতার ও জামিন না মন্জুরের ঘটনার জের ধরে ব্যাপক সহিংসতা ঘটে গেছে।

এর জেরে ভারতের হিন্দুত্ববাদী দল বিজেপি সরকার বাংলাদেশে অন্তবর্তীকালীন সরকারকে কড়া হুশিয়ারি দিয়েছে। মঙ্গলবার ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি বিবৃতি দিয়ে বলেছে, সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার ঘটনায় অপরাধীরা যেখানে ধরা ছোঁয়ার বাহিরে, সেখানে একজন ধর্মীয় নেতা এসব অন্যায়ের বিরুদ্ধে যখন কথা বলেছে তার বিরুদ্ধে পাল্টা অভিযোগ এনে গ্রেফতার করা হয়েছে।
বিবৃতিতে বাংলাদেশের হিন্দুসহ সকল সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত এবং স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের স্বাধীনতা নিশ্চিতের আহবান জানানো হয়।

চিন্ময় কৃষ্ণ দাসের গ্রেফতারের প্রতিবাদে কলকাতা, দিল্লী, ত্রিপুরাসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে হিন্দুরা প্রতিবাদ মিছিল ও সমাবেশ করেছে। পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার বিরোধী দলীয় নেতা শুভেন্দু অধিকারীকে কড়া প্রতিক্রিয়া দিতে দেখা গেছে। তিনি বাংলাদেশিদের ভিসা বন্ধ করার দাবি জানান এবং বানিজ্য অবরোধের ডাক দেন।

রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন আছে, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অন্তর্বতীকালীন সরকারের খুঁটির জোর ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন, সাবেক প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিনটন, বারাক ওমাবা, সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট হিলারি ক্লিনটনসহ ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রভাবশালী বেশ কিছু নীতি-নির্ধারক।

কিন্তু গত ৫ নভেম্বর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হয়েছেন রিপাবলিকান পার্টির ডোনাল্ড ট্রাম্প। এরপর থেকে আগের সব হিসাব-নিকাশ উল্টে যাচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্য এবং ভারত অন্তর্বর্তী সরকারকে অসহযোগীতার পাশাপাশি নানা বিষয়ে চাপ দিয়ে যাচ্ছে। এই চাপ সামাল দেয়ার সক্ষমতা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের আছে কীনা তা দেখতে আরও কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে বলে, রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন।

শামীমা চৌধুরী শাম্মী

Loading


শিরোনাম বিএনএ