বিএনএ, ঢাকা : পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন দৃঢ়ভাবে আশা প্রকাশ করেছেন যে বাংলাদেশের আসন্ন নির্বাচন বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়াই যদি অবাধ ও সুষ্ঠু হয়, তবে, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য দেশগুলো তা গ্রহণ করবে, যেমনটি তারা অন্যান্য কয়েকটি দেশের ক্ষেত্রে করেছে।
সোমবার (২৭ নভেম্বর) পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিকদের তিনি বলেন “যদি এটি (নির্বাচন) অবাধ ও সুষ্ঠু হয় . . . বিদেশিদের অবশ্যই মেনে নিতে হবে। (এমনকি) একটি বৃহৎ দল (বিএনপি) এতে অংশ না নিলেও।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, সাম্প্রতিক অতীতে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এবং বিশেষ করে পশ্চিমা দেশগুলো কিছু আরব দেশের নির্বাচন মেনে নিয়েছে। মিশরের নির্বাচন ইসলামিক ব্রাদারহুডের মতো বড় কিছু চরম ডানপন্থী দলের অনুপস্থিতি সত্ত্বেও তা মেনে নিয়েছে।
“ব্রাদারহুড মিশরের একটি বড় দল, তারা আসেনি (নির্বাচনে যোগ দেয়নি)। . . কিছু যায় আসে না,” মোমেন যোগ করে বলেন, প্রতিবেশী আফগানিস্তানে বিদেশীরা তালেবানদের বাদ দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রায় অভিন্ন অবস্থান নিয়েছে।
তিনি বলেন, ভোটাররা উপস্থিত হয়ে ভোট দিলে নির্বাচনকে অংশগ্রহণমূলক বলা যেতে পারে। সরকার অবশ্য চায় সব রাজনৈতিক দল উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুক।
মোমেন বলেন, “আমরা (সরকার) বিশ্বকে দেখাতে চাই যে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠুভাবে এবং সহিংসতামুক্ত হতে পারে।’’
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে বিদেশি নজরদারি সম্পর্কে আজকের মন্তব্যের বিষয়ে মন্তব্য জানতে চাইলে মোমেন বলেন, বাংলাদেশ ‘‘তাদের উপেক্ষা করেনি এমনকি তাদের উপেক্ষা করার কোনো ইচ্ছাও নেই।”
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র যে একটি পরাশক্তি এবং ‘‘আমরা তাদের (মার্কিন) উপেক্ষা করি না, তাদের উপেক্ষা করার কোনো উদ্দেশ্য আমাদের নেই” এই সত্যকে অস্বীকার করার কিছু নেই।
তিনি বলেন, বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রসহ বিদেশি দেশগুলোর পরামর্শকে গুরুত্বের সঙ্গে স্বীকার করে। তবে ‘আমরা বিজয়ী জাতি’ বলে চাই না যে কেউ আমাদের প্রভু হয়ে বসুক।
“আমাদের বন্ধুত্বপ্রতীম দেশগুলো আমাদের সুপারিশ দেয় এবং তারা যদি সহায়ক ভূমিকা পালন করে তাহলে আমরা সেই পরামর্শগুলোকে স্বাগত জানাই,” উল্লেখ করে মোমেন বলেন, ঢাকা সবসময় বিদেশিদের গঠনমূলক পরামর্শকে স্বাগত জানায় এবং উন্নত দেশগুলোকে কখনো উপেক্ষা করে না।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ঢাকা ও ওয়াশিংটন উভয়ই গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে এবং বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চায়। “যুক্তরাষ্ট্র গণতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তারা (মার্কিন) আমাদের সঙ্গে আছে। আমরাও তাদের সঙ্গে আছি।”
মন্ত্রী বলেন, ইতিহাস থেকে বোঝা যায় যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার নীতিকে অবিচলিতভাবে অনুসরণ করেছে যাকে তিনি ‘বাস্তবতার মতবাদ’ বলে অভিহিত করেছেন যা ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতার সাথে সাথে দেখা গিয়েছিল। ওয়াশিংটন প্রাথমিকভাবে স্বাধীনতার বিরোধিতা করেছিল।
তিনি স্মরণ করেন যে, বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানের দিকে ঝুঁকে পড়েছিল কিন্তু ঢাকা স্বাধীন দেশের স্বাধীন রাজধানী হওয়ার পর দেশটি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয় এবং সমর্থন করতে শুরু করে।
“আমাদের স্বাধীনতার পর থেকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কখনোই আমাদের বিরুদ্ধে যায়নি। এর মানে কী? যেহেতু দেশ তৈরি হয়েছে, তাই আমরা (মার্কিন) তাদের সঙ্গে আছি,” মোমেন বলেন।
‘‘যখন কিছু করা হয়ে যায়, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এতে সমর্থন দেয়।’’
আসন্ন নির্বাচনের আগে ঢাকা কোনো বিদেশি চাপের মুখে পড়েছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, সরকার কোনো চাপ অনুভব করছে না।
বিএনএনিউজ/এইচ.এম।