বিএনএ, ডেস্ক : রাজ্জাক বিন সুলাইমান রিয়াদ। এক সময় ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। গত বছরে যুক্ত হন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে। দায়িত্ব পান বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক হিসাবে। এরপর তাকে আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি।
কোটা বিরোধী আন্দোলন করে রিয়াদ চাকুরি না পেলেও, পেয়েছেন বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কের পদ।আর সেই সঙ্গে পেয়েছেন ‘আলাদিনের চেরাগ। অর্থাৎ চাঁদাবাজির অঘোষিত লাইসেন্স! জায়গা মতো গিয়ে গ্রেপ্তারের হুমকি দিলেই আসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা!

রিয়াদের চাঁদাবাজি হাতিয়ার ছিল, এনসিপির শীর্ষ নেতাসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল এবং অন্তর্বর্তী সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টাদের সঙ্গে তোলা ছবি। নিজের ফেসবুকে রাজনৈতিক নেতাদের সঙ্গে ছবি পোস্ট করে নিজের শক্তির জানান দিতেন এবং চাদাবাজির কাযে ব্যবহার করতেন। বিশেষ করে তার র্টাগেট ছিল জুলাই হত্যা মামলার আসামি।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, জুলাইযোদ্ধা রিয়াদের বাড়ি নোয়াখালীর সেনবাগ উপজেলার নবীপুর ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের নবীপুর বাজারের দক্ষিণ পাশে। রিয়াদের দাদা ওয়ালীউল্যাহ ছিলেন রিকশাচালক। দাদার মতো তার বাবা আবু রায়হানও রিকশাচালক ছিলেন আট বছর আগে। তবে বেশ কিছুদিন ধরে কাজ করছেন দিনমজুর হিসেবে। দৈনিক দিনমজুরের কাজ থেকে যে টাকা আয় হয়, তার পাশাপাশি পরিবারের অন্য সদস্যদের দিনমজুরের কাজ করে পাওয়া টাকা দিয়েই সংসার চালাতেন আবু রায়হান।
রিয়াদের মা নাজমুন নাহার একজন গৃহিণী। তিনি একসময় সংসার চালাতে অন্যের বাড়িতে ‘বুয়া’র কাজ করতেন। দারিদ্র্য, অনটন লেগেই থাকত তাদের পরিবারে। দুই ভাই ও দুই বোনের মধ্যে সবার ছোট রিয়াদ। বড় ভাই চট্টগ্রাম একটি ফিশারিজ কোম্পানিতে চাকরি করেন।
বাবা আবু রায়হান রিকশা চালিয়ে, দিন মজুরির করে ছেলে রিয়াদকে পড়াশোনা করিয়েছেন। স্বপ্ন ছিল ছেলে একদিন বড় চাকরি করে সংসারের হাল ধরবেন। পরিবারের হাল ধরে বাবাকে দীর্ঘদিনের কষ্ট থেকে মুক্তি দেবেন।
হ্যাঁ, রিয়াদ সংসারের হাল ধরেছেন, মা-বাবাকে পরিশ্রমের কষ্ট থেকে মুক্তি দিয়েছেন। গত বছরের জুলাই আন্দোলনের পর বাবা দিন মজুরের কাজ করেন না।
পাল্টে গেছে রিয়াদের গ্রামের বাড়ির আগের পরিবেশ। নেই আগের ভাঙা-চোরা ঘর। আগের ঘরের পাশে নির্মিত হচ্ছে পাকা দালান। নতুন দালান নির্মাণ করার পাশাপাশি রিয়াদ কিনেছেন দামি গাড়িও। ‘রিকশা চালানোর মাধ্যমে যে পরিবার চলতো, দিন এনে দিন খেতে হতো; সেখানে ৫ আগস্টের পর রিয়াদের বিলাসী জীবনযাপন দেখে অবাক হয়েছেন এলাকবাসী।
স্থানীয়রা জানায়, স্থানীয় নবীপুর হাই স্কুল থেকে এসএসসি পাস করেন রিয়াদ। পরে ভর্তি হন কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয়ে। সেখানে গিয়ে ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত হন। সাবেক সড়ক ও যোগাযোগ মন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের ছোট ভাই বসুরহাট পৌরসভার মেয়র আবদুল কাদের মির্জার হাতে ফুল দিয়ে ছাত্রলীগে যোগ দিয়েছিলেন। যুক্ত হয়েছেন তার ক্যাডার বাহিনীতেও।
সরকারি মুজিব মহাবিদ্যালয়ে থেকে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করে ঢাকায় গিয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। একপর্যায়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনে যোগ দেন। হয়ে ওঠেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতা।
জানা যায়, রিয়াদ ছিলেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক। গত জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর সমন্বয়ক পরিচয়ে হয়ে ওঠেন ভয়ংকর এক চাঁদাবাজ।
সমন্বয়কের মুখোশ পরে কীভাবে গ্রামের এক হতদরিদ্র রিকশাওয়ালা পরিবারের ছেলে, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়েন? এবং কিভাবেই বা এমন বিলাসী জীবন যাপন করেন— তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন গ্রামবাসী। যদিও তার ভয়ে, এতদিন কেউ মুখ খোলার সাহস পায়নি।
গত শনিবার গুলশানে আওয়ামী লীগের সাবেক মহিলা এমপি শাম্মী আহমেদের বাড়িতে চাঁদাবাজি করতে গিয়ে গ্রেপ্তার হওয়ার পর সংগঠন থেকে রিয়াদকে বহিস্কার করা হয়েছে। সেই সঙ্গে বিলুপ্ত করা হয়েছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কেন্দ্রীয় কমিটি ছাড়া সারাদেশের সকল কমিটি।
বিএনএ/ সৈয়দ সাকিব