23 C
আবহাওয়া
১০:১৯ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৮, ২০২৫
Bnanews24.com
Home » পাক-ভারত যুদ্ধে জিতবে কে?

পাক-ভারত যুদ্ধে জিতবে কে?

পাক-ভারত যুদ্ধে জিতবে কে?

।। বাবর মুনাফ ।।

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে সামরিক যুদ্ধের উত্তেজনা চলছে। ১৯৪৭ সালে বিভক্তির পর থেকে দুই দেশ একে অপরের প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে আছে। দেশ দুটির মধ্যে ৩ হাজার ৩২৩ কিলোমিটার দীর্ঘ সীমান্ত। দুদেশের মধ্যে ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৯৯ সালে প্রচলিত ঘরানার যুদ্ধের ইতিহাস রয়েছে। ভারতনিয়ন্ত্রিত জম্মু ও কাশ্মীরের জনপ্রিয় পর্যটনকেন্দ্র পেহেলগামে বন্দুকধারীদের হামলায় ২৬ জন নিহত হওয়ার পর ওই দুই প্রতিবেশী দেশের মধ্যে উত্তেজনার পারদ এখন উর্ধ্বমূখী।

এমন প্রেক্ষাপটে ভারত ও পাকিস্তান সামরিকভাবেও সংঘাতে জড়িয়ে পড়তে পারে— এ আশঙ্কা অনেকের।

প্রাসঙ্গিকভাবে উভয় দেশের সামরিক সক্ষমতার বিষয়টি আলোচনায় উঠে এসেছে। এই সক্ষমতার গুরুত্বপূর্ণ দিকগুলো নিয়ে বিশ্লেষণমূলক একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়াভিত্তিক ‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’। জনশক্তি, সামরিক সরঞ্জাম, অর্থনৈতিক ও ভৌগলিক অবস্থা ইত্যাদির ভিত্তিতে ১৪৫টি দেশকে মূল্যায়ন করা হয়েছে এই প্রতিবেদনে। সে অনুযায়ী, সামগ্রিক র‌্যাঙ্কিং এ ভারত বিশ্বের মধ্যে চতুর্থ, পাকিস্তান বিশ্বে ১২তম।

YouTube player

‘ডিফেন্স সিকিউরিটি এশিয়া’ বলেছে ভারতের জনসংখ্যা ১৪০ কোটি। সক্রিয় সেনা ১৪ লাখ ৬০ হাজার যা বিশ্বে দ্বিতীয়। রিজার্ভ সেনা ১১ লাখ ৬০ হাজার যা বিশ্বে সপ্তম। আধা সামরিক বাহিনীর সদস্য ২৫ লাখ ৩০ হাজার যা বিশ্বে দ্বিতীয়। মোট সামরিক জনবল ৫১ লাখ। অন্যদিকে পাকিস্তানের জনসংখ্যা ২৫ কোটি ২০ লাখ। যা বিশ্বে পঞ্চম। সক্রিয় জনবল ১০ কোটি ৮০ লাখ। সক্রিয় সেনা ৬ লাখ ৫৪ হাজার। যা বিশ্বে সপ্তম। রিজার্ভ সেনা ৬ লাখ ৫০ হাজার। অর্থাৎ পাকিস্থানে মোট সামরিক জনশক্তি ১৭ লাখ।

ভারতের জনবল পাকিস্তানের তুলনায় দ্বিগুণের বেশি এবং রিজার্ভ ও আধা সামরিক বাহিনীও বড়। পাকিস্তান যদিও কম জনবল নিয়ে কাজ করে, তবে তাদের মধ্যে ‘মুজাহিদ’–এর মতো আইএসআই–নিয়ন্ত্রিত অনিয়মিত বাহিনীগুলো রয়েছে।

২০২৫-২৬ সালের ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট ৭ হাজার ৯০০ কোটি ডলার। যা যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের পর তৃতীয়। অপরদিকে পাকিস্তানের বাজেট মাত্র ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ কোটি ডলার। যা শীর্ষ দেশের তালিকায় নেই।

ভারতের প্রতিরক্ষা বাজেট পাকিস্তানের ৬ থেকে ৮ গুণ। পাকিস্তান বাজেট–সংকটে ভুগলেও চীনের সহায়তায় এটিকে সামাল দিচ্ছে। পাকিস্তানের সামরিক ব্যয়ের বড় অংশ খরচ হয় বৃহৎ সেনাবাহিনী ও পারমাণবিক অস্ত্রের সুরক্ষায়। ভারত-পাকিস্তান সংঘাতের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে স্থলবাহিনী। ভারতের ট্যাংক ৪ হাজার ৬১৪টি। সাঁজোয়া যান ১ লাখ ৫১ হাজার ২৪৮টি। কামান ৯ হাজার ৭১৯টি। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে প্যারা এসএফ, ঘাতক ফোর্স, এমএআরসিওএস।

অপরদিকে পাকিস্তানের ট্যাংক ৩ হাজার ৭৪২টি। সাঁজোয়া যান আনুমানিক ৫০ হাজার। কামান ৪ হাজার ৪৭২টি। বিশেষ বাহিনীর মধ্যে আছে স্পেশাল সার্ভিস গ্রুপ (এসএসজি), এসএসজি নৌ ও স্পেশাল সার্ভিস উইং। এগুলো আকারে তুলনামূলক ছোট হলেও সমীহ করার মতো। ট্যাংক, সশস্ত্র যান ও কামানে সংখ্যাগত দিক থেকে সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে ভারত। পাকিস্তানেরও ট্যাংকবহর প্রতিযোগিতামূলক। এ বহর চীনের ভিটি–৪–এর মাধ্যমে আধুনিকায়ন করা। রয়েছে এম১১৩ ও আল–ফাহাদের মতো বৈচিত্র্যপূর্ণ নানা স্থল সমরযান।

আধুনিক যুদ্ধে, বিশেষত দ্রুত সাড়া দেওয়া ও নির্ভুল আক্রমণের জন্য বিমান বাহিনীর শ্রেষ্ঠত্ব খুব গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের মোট বিমান ২ হাজার ২২৯টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৫১৩ থেকে ৬০৬টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এসইউ–৩০এমকেআই, রাফায়েল, তেজস। রয়েছে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এস–৪০০। হেলিকপ্টার আছে অ্যাপাচি ও চিনুক। আরও আছে চারটি ‘এয়ারবর্ন আর্লি ওয়ার্নিং অ্যান্ড কন্ট্রোল ব্যবস্থা।

পাকিস্তানের মোট বিমান ১ হাজার ৩৯৯ থেকে ১ হাজার ৪৩৪টি। এর মধ্যে যুদ্ধবিমান ৩২৮ থেকে ৩৮৭টি। আধুনিক বিমানের মধ্যে রয়েছে এফ–১৬ ফাইটিং ফ্যালকন, জেএফ–১৭ থান্ডার, মিরেজ থ্রি/ফাইভ। আরও আছে ভারতের চেয়ে বেশি যুদ্ধে ব্যবহার উপযোগী এএইচ–১এফ কোবরাসহ হেলিকপ্টার। এইডব্লিউঅ্যান্ডসি আছে সাতটি, যা ভারতের চেয়ে বেশি।

ভারত মহাসাগরে ভারতের সামুদ্রিক স্বার্থ রক্ষায় ও আরব সাগরে পাকিস্তানের অভিযানের জন্য নৌসক্ষমতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ৬৭ হাজার ৭০০। জাহাজ রয়েছে ২৯৪টি। বিমানবাহিনীর রণতরি আছে ২টি। পারমাণবিক শক্তিচালিত সাবমেরিন আইএনএস আরিহান্টসহ সাবমেরিন ১৮টি। ডেস্ট্রয়ার ১৩টি। ফ্রিগেট ১৪টি। প্যাট্রোল নৌযান ১০৬টি। নৌ যুদ্ধে ব্যবহারের উপযোগী বিমান ৭৫টি।

পাকিস্তানের নৌবাহিনীর সদস্যসংখ্যা ২৩ হাজার ৮০০। জাহাজ রয়েছে ১২১টি। সাবমেরিন ৮টি। ফ্রিগেট ৯টি। প্যাট্রোল নৌযান ১৭টি। এ বাহিনীর যুদ্ধবিমান ৮টি। নৌবাহিনী সদস্যসংখ্যা ২৩ হাজার ৮০০।

ভারতীয় নৌবাহিনী তুলনামূলক বেশি শক্তিশালী ও গভীর সমুদ্রে অভিযান চালানোর উপযোগী। পাকিস্তানের অপেক্ষাকৃত ছোট নৌবাহিনী। বিমানবাহী রণতরী না থাকা ও সীমিতসংখ্যক যুদ্ধবিমানের কারণে গভীর সমুদ্র দেশটির নৌবাহিনীর অভিযান চালানোয় সীমাবদ্ধতা রয়েছে।

ভারত ও পাকিস্তান দুই দেশই পারমাণবিক ক্ষমতার অধিকারী। তাদের প্রতিরক্ষা কৌশলে এ সক্ষমতার ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ। ভারতের পারমাণবিক অস্ত্র রয়েছে ১৩০ থেকে ১৪০টি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে রয়েছে অগ্নি–থ্রি/ফাইভ ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র। যার পাল্লা ৩ হাজার থেকে ৫ হাজার কিলোমিটার। তবে পারমাণবিক অস্ত্র আগে ব্যবহার না করার নীতির পক্ষে ভারত।

অন্যদিকে পাকিস্তানের পারমাণবিক অস্ত্রের সংখ্যা ১৪০ থেকে ১৫০। এদিক থেকে পাকিস্তানের সক্ষমতা ভারতের চেয়ে বেশি। ডেলিভারি সিস্টেমের মধ্যে আছে শাহিন–টু/থ্রি ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাত্র, এফ–১৬ যুদ্ধবিমান, বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র। পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহারের ক্ষেত্রে দেশটি ‘ফুল–স্পেকট্রাম ডেটারেন্স’ নীতি অনুসরণের পক্ষপাতী। এ নীতিতে যুদ্ধক্ষেত্রে দেশটি প্রয়োজনে আগেভাগে পারমাণবিক অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে।

ভারতের কৌশলগত জোটে রয়েছে ইসরায়েল, রাশিয়া ও ফ্রান্স। অন্যদিকে পাকিস্তানের রয়েছে চীনের সঙ্গে গভীর সম্পর্ক। আছে সীমিত পরিসরে যুক্তরাষ্ট্রের সমর্থনও।

জনবল, সামরিক ব্যয় ও প্রচলিত অন্যান্য প্রতিরক্ষা খাতে ভারতের এগিয়ে থাকার বিষয়টি স্পষ্ট হলেও পাকিস্তানের সামরিক শক্তিকে খাটো করে দেখার কোনো সুযোগ নেই। পরমাণু ও কৌশলগত অস্ত্রের সমৃদ্ধ ভান্ডার, অপ্রতিসম যুদ্ধকৌশল ও চীনের জোরালো সমর্থন দেশটিকে এক সুবিধাজনক প্রতিরক্ষা অবস্থানে রেখেছে।

বিএনএনিউজ/ শাম্মী

Loading


শিরোনাম বিএনএ