বিএনএ, ঢাকা: নির্বাচনের নামে যাত্রাপালা চলছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আব্দুল মঈন খান। তিনি বলেন, আজকে নির্বাচনের নামে প্রকাশ্য গরুর হাটের মতো প্রাথীদের কেনা-বেচা হচ্ছে। এটা অত্যন্ত লজ্জার। বিশ্বের কোথাও বাহাদুরি করে এভাবে আসন কেনাবেচা ও ভাগাভাগি হয় বলে দেখিনি।
বুধবার (২৭ ডিসেম্বর) দুপুরে ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্য তিনি এসব কথা বলেন। গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়া, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ সকল রাজবন্দিদের মুক্তির দাবিতে এ আলোচনা সভার আয়োজন করে জাতীয়তাবাদী সমমনা জোট।
আব্দুল মঈন খান বলেন, সরকার আজকে নির্বাচনের নৈতিকতার খেলায় পরাজিত হয়েছে। সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে তারা ১০ শতাংশ ভোট পাবে না। এজন্য নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে ভয় পায়। সরকার হুমকি-ধামকি দিয়ে সাহস সঞ্চার করতে চাইছে, কিন্তু তারা ভেতরে ভেতরে ভয়ে আছে।
জনগণকে নির্বাচন বর্জনের আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আপনারা কেউ ৭ জানুয়ারি ভোটকেন্দ্র যাবেন না। পাতানো নির্বাচন ইতোমধ্যে জনগণ বর্জন করেছে। কারণ ৭ জানুয়ারি নির্বাচনের ফলাফল আগেই তৈরি করা হয়েছে। কে কতো ভোট পাবে, কত পার্সেন্ট ভোট পড়বে তা রেডি আছে। কম্পিউটার টিপ দিলেই জেলায় জেলায় চলে যাবে এবং নির্বাচন কমিশনও সেই ফলাফল প্রকাশ করবে। তাই নির্বাচনের বর্জনের পাশাপাশি এই সরকারকে সব ধরণের অসহযোগিতা করতে হবে।
বিএনপির এই নেতা আরও বলেন, আওয়ামী লীগ রাজনীতিতে বিশ্বাস করে না। তারা রাজতন্ত্রে বিশ্বাস করে। তারা রাজতন্ত্র কায়েম করতে চায়। মুখে স্মার্ট বাংলাদেশ গড়তে চান, তাহলে রাজতন্ত্র চান কেন। সরকার চিরস্থায়ী ক্ষমতা বন্দোবস্ত করতে চায়।
আব্দুল মঈন খান বলেন, বিএনপিসহ ৫৯টি বিরোধী রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশ নেয়নি। তারা দেশে গণতন্ত্র, মানুষের ভোটের অধিকার, মৌলিক অধিকার ফিরিয়ে দিতে ঐক্যবদ্ধ হয়েছে। সেই জন্য রাজপথে আন্দোলন সংগ্রাম অব্যাহত রেখেছে। আমরা বাকশাল করি না। লগি-বইঠা দিয়ে মানুষকে হত্যা করে সরকারের পতন ঘটাতে হবে- এমন কথায় বিশ্বাস করি না। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত গণতান্ত্রিক ধারায় আন্দোলন চলবে।
বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর জুলুম নির্যাতনের চিত্র তুলে ধরে তিনি বলেন, গত দুই মাসে বিএনপি মহাসচিবসহ ২৫ হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের কি অপরাধ? একতরফা নির্বাচন করতে এদের গ্রেফতার করা হয়েছে। বিগত ১৫ বছরে লক্ষাধিক মামলায় ৫০ লাখ নেতাকর্মীকে আসামি করা হয়েছে। পৃথিবীর আর কোনো দেশে বিরোধীদলের ওপর এমন নির্যাতন হয়নি বলেও দাবি করেন তিনি।
আলোচনা সভায় এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদ বলেন, এই দেশ শেখ হাসিনার একার দেশ নয়। এই দেশে বাকশাল ও প্রথম ভোট ডাকাতি করেছিল তার বাবা শেখ মুজিব। আগামী ৭ জানুয়ারি ভোট হচ্ছে নৌকা, ডামি, বিরোধী ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সবাই আওয়ামী লীগের। মেনন সাহেব এতদিন ধরে দালালি করেছেন, আর আজকে আপনাকে বরিশাল পাঠিয়েছে দিয়েছে। ইনু সাহেবের একই অবস্থা। জাতীয় পার্টিকে ২৬টি আসন দিয়েছে কিন্তু জয়লাভ করতে পাবে কিনা সন্দেহ আছে। কারণ এখানেও স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগের। আগামী দিনে এদের বিচার করা হবে। বিএনপির ডাকা অসহযোগ আন্দোলনে সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান তিনি।
আয়োজক জোটের প্রধান সমন্বয়ক ও এনপিপি চেয়ারম্যান ড. ফরিদুজ্জামান ফরহাদের সভাপতিত্বে এবং এনপিপি মহাসচিব মোস্তাফিজুর রহমান মোস্তফার পরিচালনায় এতে আরও বক্তব্য রাখেন জাগপা সভাপতি খন্দকার লুৎফর রহমান, সাধারণ সম্পাদক শাহাদাত হোসেন, গণদলের চেয়ারম্যান গণদলের চেয়ারম্যান এটিএম গোলাম মাওলা চৌধুরী, মহাসচিব আবু সৈয়দ, বিকল্প ধারা চেয়ারম্যান কমরেড অধ্যাপক নুরুল আমিন বেপারী, মহাসচিব অ্যাডভোকেট শাহ আলম বাদল, সাম্যবাদী দলের চেয়ারম্যান কমরেড সৈয়দ ডা. নুরুল ইসলাম, এনডিপি চেয়ারম্যান ক্বারী আবু তাহের, বাংলাদেশ ন্যাপের চেয়ারম্যান শাওন সাদেকী প্রমুখ।
সভা শেষে সমমনা জোট নেতৃবৃন্দকে নিয়ে নির্বাচন বর্জন ও অসহযোগ আন্দোলনের পক্ষে জনসাধারণের মাঝে লিফলেট বিতরণ করে ড. আব্দুল মঈন খান।
বিএনএ/এমএফ