বিএনএ,চট্টগ্রাম: চট্টগ্রাম বিভাগের করোনা ভাইরাসের জিনের বিন্যাস উন্মোচন করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) একদল গবেষক। প্রথমবারের মতো পুরো বিভাগের করোনা ভাইরাসের জিনের বিন্যাস উন্মোচনের কাজ সম্পন্ন করেছেন তারা। এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এ তথ্য জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
গবেষকদলে ছিলেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ ওমর ফারুক রাসেল এবং মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ড. ইমরানুল হক ও ড. এইচ এম আবদুল্লাহ আল মাসুদ। এছাড়া গবেষণায় সম্পৃক্ত ছিলেন, উদ্ভিদ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. খন্দকার রাজিউর রহমান, ইমাম হোসেন, মো. আরিফ হোসাইন ও সজীব রুদ্র, মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের শান্তা পাল এবং বায়োকেমিস্ট্রি এন্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের মো. ওমর ফারুক।
গবেষণায় পাওয়া তথ্য মতে, চট্টগ্রাম বিভাগের ভাইরাসটির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ, সৌদি আরব, তাইওয়ান, ভারত ও অস্ট্রেলিয়ার ভাইরাসের প্রায় হুবহু মিল রয়েছে। তবে একেক জেলার সঙ্গে অন্য জেলায় করোনার ধরনে বেশ কিছুটা কিছুটা ভিন্নতা আছে।
করোনার নমুনা সংগ্রহ করে পরিচালিত এই গবেষণায় দেখা গেছে, চট্টগ্রাম মহানগরীসহ জেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, ইতালি, চেক রিপাবলিক, সৌদি আরব ও তাইওয়ানের করোনা ভাইরাসের মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি ও বান্দরবানের করোনার সঙ্গে মিলেছে যুক্তরাষ্ট্র, সিয়েরা লিওন, জার্মানি, ইতালি, তাইওয়ান ও চেক রিপাবলিকের ধরন। তবে খাগড়াছড়িতে অস্ট্রেলিয়া, সৌদি আরব ও তাইওয়ানের নমুনার সঙ্গে বেশি সাদৃশ্য লক্ষ করা গেছে।
ফেনী,নোয়াখালী ও লক্ষীপুর জেলার করোনার সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, অস্ট্রেলিয়া, ভারত ও জাপানের ধরন মিলেছে। কুমিল্লা ও চাঁদপুর জেলায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, চেক রিপাবলিক, ভারত ও জাপানের সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া গেছে। ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়ায় যুক্তরাষ্ট্র, জার্মানি, সৌদি আরব ও ভারতের করোনার ধরনের সঙ্গে সাদৃশ্য দেখা গেছে।
সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গবেষক দল প্রথমে প্রত্যেক উপজেলা কিংবা থানা থেকে করোনা পজিটিভ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করে তার আরএনএ-এর পরিমাণ (কনসেনট্রেশন) ও গুণের (কোয়ালিটি) ওপর ভিত্তি করে ৪৬টি নমুনা জিনোম সিকোয়েন্সিংয়ের জন্য নির্বাচন করে। এর মধ্যে ৩৩টি নমুনার জিনোম সিকোয়েন্স ৯৯% এর ওপরে উন্মোচিত হয়েছে। ইতোমধ্যে ১২টি নমুনার জিনের বিন্যাস গ্লোবাল ইনিশিয়েটিভ অন শেয়ারিং অল ইনফ্লুয়েঞ্জা (জিআইএসএআইডি) ডাটাবেজে জমা দেয়া হয়েছে।
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বায়োকেমিস্ট্রি অ্যান্ড মলিকুলার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও প্রক্টর ড. রবিউল হাসান ভুঁইয়া বলেন, ‘কিছু প্রশ্নকে সামনে রেখে এই গবেষণা কাজ সাজানো হয়েছিল। এরমধ্যে অন্যতম একটি হলো চট্টগ্রামে ভাইরাসটি সম্ভাব্য কোন পথে প্রবেশ করে থাকতে পারে এবং এর মিউটেশন সম্পর্কে জানা।পুরো কাজটি সম্পন্ন করার জন্য সকল ধরনের লজিস্টিকস, টেকনিক্যাল সাপোর্ট এবং প্রয়োজনীয় যন্ত্রাংশ যেমন অত্যাবশ্যক ছিল। তেমনিভাবে প্রয়োজনীয় রিএজেন্ট, কেমিক্যাল এবং বিভিন্ন ধরনের কিটসের সরবরাহ সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। আর এই বিষয়গুলোর ওপর যথাযথভাবে নজর দিতে গিয়ে কাজটি শেষ করতে প্রচুর সময় লেগেছে।উন্মোচনকৃত জিনের এই বিন্যাস চট্টগ্রাম বিভাগের সকল জেলায় ভাইরাসের প্রকৃতি, বিস্তার, উৎপত্তিস্থল, বৈচিত্রতা ও মিউটেশনের মাধ্যমে জিনগত পরিবর্তন সম্পর্কে ধারণা দেবে, যেটি ভবিষ্যতে করোনা মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
গবেষকদলের সদস্য ড. এইচ. এম. আবদুল্লাহ আল মাসুদ জানান, গত জুলাই মাসে তারা এ গবেষণা শুরু করেন। প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি ও রি-এজেন্টের অপ্রতুলতার কারণে পুরো গবেষণা শেষ করতে দুই-তিন মাস বেশি সময় লেগেছে। পুরো গবেষণা বিশ্ববিদ্যালয়ের ল্যাবরেটরিতে সম্পন্ন করার ইচ্ছে ছিল। এ জন্য বিদেশ থেকে অনেক কিছুই আনাতে হয়েছে। যেহেতু, বিশ্বব্যাপী করোনার ভ্যাকসিন অনুমোদন পাচ্ছে, বাংলাদেশেও ভ্যাকসিন আসবে। তাই, এর জিনোম সিকোয়েন্স জানা থাকা খুব জরুরি। তাতে করে এদেশের জন্য কোন ভ্যাকসিন বেশি কার্যকর হবে, সেটি নিরূপণ করা যাবে। এছাড়া, নিজেদের ভ্যাকসিন তৈরি করার সময়, ভাইরাসের রূপ-প্রকৃতি তো জানতে হবে। সে জন্য জিনোম সিকোয়েন্স জানাটা জরুরি বলে জানান তিনি।
এর আগে গত মে মাসে চট্টগ্রাম বিভাগে করোনা ভাইরাস আক্রান্ত সাত ব্যক্তির নমুনা নিয়ে ভাইরাসের পূর্ণাঙ্গ জিন বিন্যাস উন্মোচনের করার কথা জানিয়েছিলেন চট্টগ্রামের আরেক দল গবেষক।ওই সাতটি নমুনার মধ্যে তিনটি সৌদি আরব, দুটি সিঙ্গাপুর, একটি অস্ট্রেলিয়া ও একটি রাশিয়ার ভাইরাসের সঙ্গে মিল পাওয়া যায়।
চট্টগ্রাম ভেটেরিনারি অ্যান্ড অ্যানিম্যাল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু), বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) এবং ফৌজদারহাটের বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিক্যাল অ্যান্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) যৌথ গবেষণায় ওই জিন বিন্যাস উন্মোচন করা হয়েছিল।
বিএনএনিউজ/আরকেসি