24 C
আবহাওয়া
৩:২৪ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮২

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ: দলিলপত্র

৩০ জুলাই, ১৯৭১
একটি বিদেশী বার্তা প্রতিষ্ঠানের খবরে জানা যায় যে, এবারে পাকিস্তানী সামরিক কর্তৃপক্ষ বাংলাদেশের অধিকৃত এলাকায় রেডিও বাজেয়াফত করতে শুরু করেছে। অপরাধ? সেখানকার মানুষ শত্রুকবলিত ঢাকা বেতারের কোন অনুষ্ঠান শোনে না- তারা শোনে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিবিসি, আকাশবাণী ও ভয়েস অব আমেরিকার অনুষ্ঠান।
খবরটি ছোট্ট হলেও তাৎপর্যপূর্ণ। বুঝতে কষ্ট হবার নয় যে, অধিকৃত এলাকার জনগণকে যুদ্ধ পরিস্থিতি এবং বিশ্বজনমত সম্পর্কে অন্ধকারে রাখবার জন্যই জঙ্গীশাহী রেডিও বাজেয়াফত করতে শুরু করেছে। আর এই প্রচেষ্টা থেকে বাংলাদেশে হানাদারদের নাজেহাল অবস্থারই স্বীকৃতি পাওয়া যায়।

যুদ্ধের সবচেয়ে বড় বলি হচ্ছে সত্য। মারণাস্ত্র মানুষের জানমালের মত সত্যকেও নির্দয়ভাবে হত্যা করে। বাংলাদেশে মুক্তিযুদ্ধ শুরু হওয়ার পর জঙ্গীশাহীও তাই করেছে। প্রকৃত ঘটনা যাতে কেউ জানতে না পারে সেজন্য সংবাদপত্রের ওপর কড়া সেন্সরশীপ আরোপ করা হয়েছে। অধিকৃত এলাকায় বর্তমানে যেসব সংবাদপত্র প্রকাশিত হয় তাতে প্রকৃত ঘটনার কোন বিবরণ থাকে না, নিরপেক্ষ সত্যনিষ্ঠ মতামত প্রকাশের কোন সুযোগ সেখানে নেই। প্রতিটি শব্দ ছাপা হবার আগে সামরিক কর্তৃপক্ষের অনুমতি লাগে। সব কাগজে একই খবর ও মন্তব্যের কার্বন কপি ছাপা হয়। ফলে সংবাদপত্র নামে যে কাগজগুলি অধিকৃত এলাকায় প্রকাশিত হয়, তা বস্তূত সংবাদপত্র নয়- জঙ্গীশাহীর প্রচার বুলেটিন মাত্র। তাই সেগুলো কেউ কেনে না, পড়ে না। জালেমশাহীর প্রচার দফতর ওগুলো বিনামূল্যে বিলি করে।

এই তো গেল সংবাদপত্রের কথা। এরপর থাকে রেডিও। এবং সেটাই আজকের দিনের সবচেয়ে শক্তিশালী প্রচার মাধ্যম। ঢাকা বেতারকেন্দ্র এখন শত্রুবাহিনীর দখলে। শত্রুকবলিত এই বেতারযন্ত্রটি থেকে যা প্রচারিত হয়, তা জঘন্য জালিয়াতি আর মিথ্যার বেসাতি ছাড়া কিছুই নয়। জল্লাদ বাহিনীর বর্বর অত্যাচারে রক্তের গঙ্গা বয়ে চলেছে বাংলার দিকে দিকে। ভস্মীভূত ঘরবাড়ি, বিধ্বস্ত জনপদের ধ্বংসস্তূপ সাক্ষী হয়ে আছে ওদের পাশবিক নির্যাতনের। হানাদার দস্যুরা নারীর ইজ্জত কেড়ে নিচ্ছে, দুধের শিশুকে খুন করছে, দলে দলে মানুষকে করছে ঘরছাড়া, দেশছাড়া। অধিকৃত এলাকার মানুষ নিজের চোখে দেখেছে, দেখছে এ দৃশ্য। কিন্তু ঢাকা বেতারে শুনছে এর উল্টো কথা।

ঢাকা বেতার সুকৌশলে প্রচারণার মারপ্যাচে সত্যটাকে হত্যা করে মিথ্যার পুতুল সাজিয়ে খাড়া করছে মানুষের কাছে। তাই তারা আস্থা হারিয়েছে- বীতশ্রদ্ধ, অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছে ঢাকা বেতারের উপর। আর সেই কারণেই আজ আর কেউ ঢাকা বেতারের অনুষ্ঠান শুনছে না। তারা সত্য খবরের জন্য, নির্ভুল তথ্যের জন্য, বাংলাদেশ সম্পর্কে বিশ্ব জনমতের ধারা সম্পর্কে অবহিত হওয়ার জন্য শুনছে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র, বিবিসি, আকাশবাণী, ভয়েস অব আমেরিকার অনুষ্ঠান। জঙ্গীশাহী এ খবর জানে।

তারা জানে যে, এসব বেতার কেন্দ্রের মারফত জনগণ হানাদারদের নির্যাতন-নিপীড়ন-গণহত্যার লোমহর্ষক কাহিনী জেনে নিচ্ছে। জেনে নিচ্ছে বাংলাদেশের যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের গৌরবময় সাফল্য এবং হানাদারদের ক্রমাগত বিপর্যয়ের বৃত্তান্ত। ফলে ওদের জারিজুরি ফাঁস হয়ে যাচ্ছে। ধরা পড়ে যাচ্ছে ওদের মিথ্যাবাজি আর জালিয়াতির বেসাতি। তাই শঙ্কিত, বিব্রত হয়ে উঠেছে জঙ্গীশাহী। ওরা জানে, লোকের হাতে যদি রেডিও থাকে, ঢাকা বেতারের জাল-জুয়াচুরি অনুষ্ঠান তারা শুনবে না- শুনবে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র ও বিদেশী বেতারের অনুষ্ঠান। তাই আক্রোশে ক্রোধে দিশেহারা হয়ে জল্লাদরা এখন কেড়ে নিতে শুরু করেছে সকল রেডিও। উদ্দেশ্য – মিথ্যা যদি না শুনতে চাও, সত্য কথাও শুনতে দেবো না।……

(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ১০৭) চলবে।

আরও পড়ুন: 

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮১

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৮০

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭৯

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭৮

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭৭

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭৬

বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭৫

সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা

Loading


শিরোনাম বিএনএ