বিএনএ, ঢাকা: মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রী শ ম রেজাউল করিম বলেছেন, স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মৎস্য খাত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। জাতীয় অর্থনীতিতে, বিশ্বের বুকে মাথা তুলে দাঁড়াবার সমৃদ্ধ-স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মৎস্য খাতের ভূমিকা হবে অনন্য-অসাধারণ। স্মার্ট ব্যবস্থা প্রয়োগের জন্য মৎস্য খাতে বিশাল সুযোগ রয়েছে। সমুদ্র থেকে শুরু করে উন্মুক্ত ও বদ্ধ জলাশয়ে মৎস্য খাতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের সুযোগ রয়েছে। মাছের উৎপাদন, আহরণ, পরীক্ষা, বিপণন ও বহুমুখী ব্যবহারে স্মার্ট পদ্ধতি ব্যবহার করতে হবে।
বৃহস্পতিবার(২৭ জুলাই) রাজধানীর বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল মিলনায়তনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ ২০২৩ উপলক্ষ্যে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মৎস্য খাত’ শীর্ষক কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী এসব কথা বলেন। বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএফআরআই) এ কর্মশালার আয়োজন করে।
বিএফআরআই-এর মহাপরিচালক ড. ইয়াহিয়া মাহমুদের সভাপতিত্বে কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব ড. নাহিদ রশীদ। স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মোঃ আব্দুল কাইয়ূম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন মৎস্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক খন্দকার মাহবুবুল হক। কর্মশালায় মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বিএফআরআই-এর ঊর্ধ্বতন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ মশিউর রহমান।
মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-গবেষকবৃন্দ, মৎস্য চাষী ও উদ্যোক্তাগণ এবং মৎস্য খাতের অংশীজনরা কর্মশালায় উপস্থিত ছিলেন।
কর্মশালায় মন্ত্রী আরো জানান, মৎস্য খাত আজ আর গতানুগতিক কোনো বিষয় নয়। মৎস্য খাতে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে নিরাপদ মাছ উৎপাদন করতে হবে। প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের খাদ্য উপাদান, মাছ চাষের জন্য জলাশয়ের পানির উপাদান সব নিরাপদ রাখতে হবে। মৎস্য খাতের প্রতিটি পর্যায়ে স্মার্ট পদ্ধতি, যন্ত্রপাতি ও গবেষণার সমন্বয়ে কাজ করতে হবে।
তিনি আরো বলেন, বর্তমানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার লক্ষ্য স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা। সেই স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে মৎস্য খাত কীভাবে ভূমিকা রাখবে, সেটা নিয়ে মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও আওতাধীন দপ্তর-সংস্থা কাজ করছে।
মন্ত্রী বলেন, স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছের বহুমুখী ব্যবহার বাড়াতে হবে। মাছের গতানুগতিক ব্যবহারের বাইরে স্মার্ট প্রযুক্তি ব্যবহার করে মৎস্যজাত বিভিন্ন খাবার তৈরি করতে হবে। মাছ থেকে পুডিং, বিস্কিট, চকলেট বা অন্য কোনো সুস্বাদু খাবার তৈরি করলে সেটা নতুন প্রজন্ম সহজেই মৎস্যজাত খাবার গ্রহণ করবে।
মন্ত্রী আরো যোগ করেন, মৎস্য খাতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে প্রায় এক কোটি ৯৫ লাখ মানুষ সম্পৃক্ত। মাছ উৎপাদন, আহরণ, বিপণন, প্রক্রিয়াজাতকরণ, রপ্তানিসহ মৎস্য খাতে এ মানুষরা কাজ করেন। এক সময় মাছ চাষে অনেকের অনাগ্রহ ছিল। এখন শিক্ষিত জনগোষ্ঠী মাছ চাষ, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও রপ্তানিতে সম্পৃক্ত হয়েছে। মৎস্য খাতকে বিকশিত করার স্বপ্ন বঙ্গবন্ধু দেখেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, মাছ হবে বাংলাদেশের বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত।
শ ম রেজাউল করিম আরো বলেন, মাছে-ভাতে বাঙালির কৃষ্টি বাঙালি জাতির বড় অংশ। এটি নষ্ট হয়ে গেলে আমাদের অনেক ক্ষতি হবে। খাবারের একটি বড় যোগান ক্ষতিগ্রস্ত হবে। মানুষের পুষ্টি ও আমিষের চাহিদা পূরণ ক্ষতিগ্রস্ত হবে। বেকারত্ব বৃদ্ধি পাবে, উদ্যোক্তা তৈরি হবে না। মাছ রপ্তানির মাধ্যমে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন বন্ধ হয়ে যাবে। মাছের প্রয়োজনীয়তা ও উপযোগিতা ব্যাপক। দেশের অর্থনীতিতে অবদান রাখার ক্ষেত্রে, পুষ্টি চাহিদা পূরণের মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে, উদ্যোক্তা তৈরিতে, বেকারত্ব দূর করতে, গ্রামীণ অর্থনীতি সচল রাখতে সবক্ষেত্রে মৎস্য খাতের অবদান রয়েছে।
মন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সেরা কূটনৈতিক প্রচেষ্টায় আমরা বাংলাদেশের সমপরিমাণ সমুদ্রসীমা পেয়েছি। সেখানে সুনীল অর্থনীতির একটি বড় অংশ হবে প্রচলিত ও অপ্রচলিত মাছসহ অন্যান্য জলজ সম্পদ। এই সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদের সংরক্ষণ, আহরণ ও উন্নয়নে স্মার্ট প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে। মাছ উৎপাদনে শুধু স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনে সন্তুষ্ট থাকলেই হবে না বরং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে মাছ উৎপাদনে উদ্বৃত্ত হতে হবে। একইসাথে উৎপাদিত মাছের মান নিশ্চিত করতে হবে।
বিএনএনিউজ২৪,জিএন