35 C
আবহাওয়া
১:০৮ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৭৫ (কুষ্টিয়া-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৭৫ (কুষ্টিয়া-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে কুষ্টিয়া-১ আসনের হালচাল।

কুষ্টিয়া-১ আসন 

কুষ্টিয়া-১ সংসদীয় আসনটি দৌলতপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৭৫ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আহসানুল হক মোল্লা বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫ হাজার ১ শত ৬১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ৪ শত ৬২ জন। নির্বাচনে বিএনপির আহসানুল হক মোল্লা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৬  হাজার ৮ শত ৭ ভোট। তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির কোরবান আলী। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ২৬ হাজার ১ শত ৪০ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আহসানুল হক মোল্লাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে।  এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করে। নির্বাচনে বিএনপির আহসানুল হক মোল্লাকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়।  ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম  সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আহসানুল হক মোল্লা বিজয়ী

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৯১ হাজার ৪ শত ৪১ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৬৯ হাজার ৮শত ৯৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির আহসানুল হক মোল্লা বিজয়ী হন।  ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬৪ হাজার ৬ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আফাজ উদ্দিন আহমেদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৪৭ হাজার ৫৩ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: আহসানুল হক মোল্লা নির্বাচিত

২০০১ সালের ১ অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৫৬ হাজার ৬ শত ৮১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২০ হাজার ৮শত ২১ জন। নির্বাচনে বিএনপির আহসানুল হক মোল্লা বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৮ হাজার ৩শত ২৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আফাজ উদ্দিন আহমেদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩ হাজার ৪শত ৯১ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আফাজ উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন   ২ লাখ ৭১ হাজার ৩৯ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৪৯ হাজার ৮ শত ৯৪ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আফাজ উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৫ হাজার ৬৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আলতাফ হোসেন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২ হাজার  ৪শত ১২  ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন  ৩ লাখ ৬ হাজার ১ শত ১২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১৫ হাজার ৪ শত ৩৭ জন।  নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী রেজাউল হক চৌধুরী বিজয়ী হন। আনারস প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৫ শত ২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আফাজ উদ্দিন আহমেদ। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫২ হাজার ৯ শত ৯ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন:  আওয়ামী লীগের আ.ক.ম সরওয়ার জাহান বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১ শত ১৯  জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮৭ হাজার ১ শত ৭৪ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আ.ক.ম সরওয়ার জাহান, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির রেজা আহাম্মেদ, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির শাহরিয়ার জামিল, হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নাজমুল হুদা ও টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর আশরাফুল আলম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আ.ক.ম সরওয়ার জাহান বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৯৬ হাজার ৬ শত ৭৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির রেজা আহমেদ, ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৬ হাজার ১ শত ৩ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, কুষ্টিয়া-১ সংসদীয় আসনে পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে টানা বিএনপি এবং নবম,  দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

YouTube player

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর কুষ্টিয়া-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭২.৩৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ১৩.৬৯%, বিএনপি ৩৮.২৬%, জামায়াতে ইসলামী ২.৬৮%, জাতীয় পার্টি ২১.৬৬ % , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৩.৭১% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.৭৪% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৭.৭০%, বিএনপি ৩৮.০৮%, জামায়াতে ইসলামী ২১.৬৬%, জাতীয় পাটি ২.৬৮% , স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৯.৮৮% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৮.০৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৬.৮৭%, ৪দলীয় জোট ৪৯.০৬%, জাতীয় পার্টি ২.৭৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৩৩%  ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯১.৪৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৫.৩৪%, ৪ দলীয় জোট ৩৮.৯৫%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ৫.৭১% ভোট পায়।

কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য আওয়ামী লীগের আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশা । দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এবারও তিনি মনোনয়ন চাইবেন।

এছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন চাইবেন প্রয়াত সংসদ সদস্য আফাজ উদ্দিনের ছেলে উপজেলা চেয়ারম্যান এজাজ আহমেদ মামুন, সাবেক সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতা রেজাউল হক চৌধুরী, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরীফ উদ্দিন রিমন, সাবেক অবসরপ্রাপ্ত অতিরিক্ত সচিব বীর মুক্তিযোদ্ধা মো. আনছার আলী খান এবং আওয়ামী লীগ নেতা ড. মোফাজ্জেল হক।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য রেজা আহাম্মেদ বাচ্চু মোল্লা, দৌলতপুর উপজেলা বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আলতাফ হোসেন এবং  বিএনপি নেতা রমজান আলী।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন  সাবেক খাদ্য প্রতিমন্ত্রী কোরবান আলীর ছেলে জেলা জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক শাহরিয়ার জামিল জুয়েল।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, একসময়ের বিএনপির শক্ত ঘাঁটি ছিল  কুষ্টিয়া -১ (দৌলতপুর সংসদীয় আসনটি। কিন্তু বিএনপির সেই দুর্গ এখন আর নেই। ২০০৮ সালের নির্বাচনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য আলতাফ হোসেনকে পরাজিত করে এ আসনে সংসদ সদস্য হন দৌলতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আফাজ উদ্দিন আহমেদ। ২০১৪ সালের ৫ই জানুয়ারির নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন পান। কিন্তু দলের বিদ্রোহী প্রার্থী উপজেলা আওয়ামী লীগের সহসভাপতি রেজাউল হক চৌধুরী আনারস প্রতীক নিয়ে বিজয়ী হন। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এ আসন থেকে বিএনপি প্রার্থী আলতাফ হোসেনকে পরাজিত করে সংসদ সদস্য হন আ ক ম সরওয়ার জাহান বাদশা।

২০১৪ সাল থেকে আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে দ্বিধাবিভক্তি আর দ্বন্দ্ব রয়েছে।  বিএনপিতে দ্বিধাবিভক্তি আর দ্বন্দ্ব থাকলেও তা আওয়ামী লীগের মতো তীব্র নয়। বিএনপি চায় তাদের দুর্গ পুনরুদ্ধার। আওয়ামী লীগ চায় দখল ধরে রাখতে। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৭৫তম কুষ্টিয়া-১ সংসদীয় আসনটি আওয়ামী লীগ ধরে রাখতে পারবে কীনা তা নিয়ে সংশয় রয়েছে।

বিএনএ/শিরীন, ওজি, ওয়াইএইচ 

Loading


শিরোনাম বিএনএ