বিএনএ, ডেস্ক : ভারতের ‘র’ এর এজেন্টের সঙ্গে জামায়াত ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের ঘনিষ্ঠতার স্বীকারোক্তি দিলেন একুশে টেলিভিশনের সাবেক সাংবাদিক, জনপ্রিয় ইউটিউবার ইলিয়াস হোসাইন। কিন্তু তার সেই প্রিয়দলটি এখন ক্ষমতার জন্য আর্দশকে বির্সজন দিয়েছেন। ইলিয়াসের অভিযোগ, জামায়াত ইসলামী এখন ভারতের গোয়েন্দা সংস্থার ‘র’ খপ্পড়ে পড়েছে। দলটি ক্ষমতায় যেতে দিল্লীর প্রেসক্রিপশনে বাংলাদেশে রাজনীতি করছে।
শুধু তাই নয়, জামায়াত ইসলামী পাকিস্তানী অপশক্তি। তাদের এদেশে রাজনীতি করার অধিকার নেই। এমন মন্তব্য করেছেন একুশে টেলিভিশনের সাবেক সাংবাদিক, বর্তমানে নিউইয়র্কে বসবাসকারি ইলিয়াস হোসাইন।
কট্টর ভারত ও আওয়ামী লীগ বিরোধী ইলিয়াস হোসাইন জামায়াত ইসলামীর নায়েবে আমির ডা. আবু তাহেরকে ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের (র’) এজেন্ট বলে উল্লেখ করেন। গণ আন্দোলনের পর জামায়াতে ইসলামীর সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল এটিএম আজাহারুল ইসলাম কারামুক্ত না হওয়ার পিছনে অনেক জামায়াত নেতার হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
সাবেক সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন জামায়াত ইসলামীর সমালোচনা করার পাশাপাশি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এবং স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ ভারতের গোয়োন্দার সংস্থা ‘র’ এর প্রেসক্রিপশন অনুযায়ি কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন।
প্রসঙ্গত, গত ২৩ এপ্রিল রাজধানীর একটি মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর প্রীতি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এই প্রীতি সমাবেশে ভিন্নধর্মাবলম্বীদের প্রতিনিধিরা অংশ নেন। এতে দৈনিক কালবেলা সম্পাদক সন্তোষ শর্মার উপস্থিতি ও বক্তব্য প্রদান নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইন।
সন্তোষ শর্মার জামায়াতের অনুষ্ঠানে উপস্থিতি নিয়ে শুধু ইলিয়াস হোসাইন ক্ষোভ প্রকাশ করেনি, জামায়াত ইসলামী নেতাকর্মী ও তাদের সমর্থক আলেমরাও ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাদের দাবি, ভারতীয় গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালাইসিস উইংয়ের তথা ‘র’ সঙ্গে তার দীর্ঘদিনের ঘনিষ্ঠতা রয়েছে। তাছাড়া তার ব্যাংক অ্যাকাউন্টে বিপুল পরিমাণ টাকার লেনদেন হয়েছে।
এই ক্ষোভ বিশেষত জামায়াতের তৃণমূল এবং ইসলামী রাজনৈতিক ঘরানার তরুণদের মধ্যে বেশি দেখা দিচ্ছে, যারা মনে করছেন জামায়াত আদর্শ বিসর্জন দিয়ে ‘নির্বাচনভিত্তিক মেইনস্ট্রিম রাজনীতির’ অংশ হতে গিয়ে নিজের শত্রুকে বন্ধুতে পরিণত করছে।
হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী ফেসবুক পোস্টে লেখেন, ‘জামায়াতে ইসলামী নিকৃষ্ট মুনাফেকিতে লিপ্ত হয়েছে। দিল্লির ওই কুত্তাগুলোর সঙ্গে ওরা সংসার শুরু করেছে। হে শিবির! হে শহীদ নেতাদের উত্তরসূরিরা! তোমাদের সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় এখন।’
২০১৮ সালে মধ্যরাতের নির্বাচনের আগে ও পরে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে শত শত আলেমকে গ্রেপ্তার ও গুম করেছিল শেখ হাসিনার সরকার। গ্রেপ্তার ও গুমের পর ডিবি অফিসে গোয়েন্দাদের সঙ্গে পাশাপাশি উপস্থিত থেকে ভুক্তভোগীদের জিজ্ঞাসাবাদ করতেন কালবেলা সম্পাদক ও প্রকাশক সন্তোষ শর্মা। এ নিয়ে অতীতে অভিযোগ করেছেন হেফাজতে ইসলামের যুগ্ম মহাসচিব মুফতি হারুন ইজহার চৌধুরী এবং প্রবাসী হাফেজ আতিকুল্লাহ জুলফিকার।
আলোচিত ইসলামী বক্তা রফিকুল ইসলাম মাদানীও এ ঘটনায় ফেসবুকে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন । তিনি লেখেন, ‘যে সন্তোষ শর্মা আমাকে, শায়খ হারুন ইজহার হাফিজাহুল্লাহ এবং আরো অনেক আলেমকে রিমান্ডে নির্যাতন করেছে, সে যে বাংলাদেশের এক চিহ্নিত ‘র’ এজেন্ট, এটা কে না জানে। তাকে দাওয়াতি সেমিনারে আমন্ত্রণ জানানো হলে আমাদের মনে কষ্ট আসাটাই স্বাভাবিক। যারা আমাদের সহযোগিতা করেছে, তাদের আমরা যখন আমাদের নির্যাতনকারীদের সম্মানের সঙ্গে বক্তব্য দিতে দেখি, তখন তা অত্যন্ত কষ্টদায়ক হয়— যা সহজে বোঝানো যায় না।’
তিনি আরো লেখেন-‘এটাও মনে রাখবেন, এই ভারতীয় গোষ্ঠী কখনো আপনাদের ক্ষমতায় দেখতে চাইবে না। যতই তাদের সঙ্গে মিল দেওয়ার চেষ্টা করেন, কোনো লাভ হবে না। বরং তাদের সঙ্গে ওঠাবসা আপনাদের প্রতি দেশের মানুষের ভালোবাসা কমিয়ে দেবে। এমনকি আপনাদের দলের অনেকেও বিষয়টি সমর্থন করবেন না। জামায়াত নেতাদের বলছি—সতর্ক থাকুন, এদের থেকে দূরে থাকুন এবং হিতাকাঙ্ক্ষীদের সমালোচনাকে গুরুত্ব দিন।’
এই সব সমালোচনার জবাব দিতে গিয়ে ঢাকা মহানগর উত্তর জামায়াতের প্রচার সম্পাদক আতাউর রহমান সরকার বলেন, সন্তোষ শর্মা হিন্দু কল্যাণ পরিষদ ও পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক। একটি ধর্মের প্রতিনিধি হিসেবে অংশগ্রহণ করেছেন। জামায়াতের দাওয়াতি সমাবেশ ছিল এটা। ১১-২৫ এপ্রিল গণসংযোগ কর্মসূচি চলছে, তারই ধারাবাহিকতায় বুধবার এ সমাবেশ আয়োজন করা হয়, যেখানে সব ধর্মের প্রতিনিধিদের আমন্ত্রণ জানানো হয়।
এদিকে সাবেক সাংবাদিক ইলিয়াস হোসাইনের অভিযোগকে ভিত্তিহীন এবং মিথ্যা আখ্যা দিয়ে ডা. তাহের বলেন, “আমার দল উচ্চ নৈতিকতা ও জবাবদিহিতার ভিত্তিতে পরিচালিত একটি সংগঠন। ভারত বা কোনো বিদেশি গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে আমার বা দলের কোনো সংযোগ নেই। এই ধরনের অভিযোগের কোনো সত্যতা নেই।”
রেহানা ইয়াছমিন