বিএনএ, ঢাকা: ছাগলকাণ্ডে আলোচিত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সাবেক কর্মকর্তা মতিউর রহমানকে তিন দিন জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য অনুমতি পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
সোমবার (২৭ জানুয়ারি) ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত সাত দিনের রিমান্ড শুনানি শেষে রিমান্ড ও জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে এ আদেশ দেন।
এদিন সকালে মতিউর রহমানকে কারাগার থেকে আদালতে আনা হয়। এরপর গত ২১ জানুয়ারি দুদকের পক্ষ থেকে সাত দিনের রিমান্ড চেয়ে করা আবেদনের ওপর শুনানি হয়। দুদকের পক্ষে প্রসিকিউটর মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর তাকে রিমান্ডে নেওয়ার যৌক্তিকতা তুলে ধরেন। আসামিপক্ষের আইনজীবী মো. ওয়াহিদুজ্জামান লিটন রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে শুনানি করেন। শুনানিতে তিনি বলেন, আসামি মতিউর নিজ যোগ্যতাবলে এনবিআরের কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ পান। তিনি কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সরকারের দেওয়া উপহারে অনেক টাকা অর্জন করেছেন। তার অবৈধ কোনো সম্পদ নেই।
এসময় মতিউর আদালতের অনুমতি নিয়ে বলেন, ২০০৪ সালে আমি কাস্টমসে থাকাকালীন কাস্টমের অটোমেশন হয়। আমি আওয়ামী লীগ সরকারের সুবিধা নিইনি। বরং আওয়ামী সরকার ক্ষমতায় আসার পর প্রথম কর্মকর্তা হিসেবে আমাকে ওএসডি করা হয়। আমাকে শিবির ক্যাডার হিসেবে তকমা দিয়ে প্রায় দেড় বছর ওএসডি করে রাখে সরকার। সেই সময়ে আমি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করি। পরে আমি পুনরায় চাকরিতে যোগদান করি। আমার দেওয়া সিদ্ধান্তে পোশাক খাতে সরকারের ২৫ হাজার কোটি টাকা রাজস্ব আয় বৃদ্ধি পায়। আমার উদ্যোগের জন্য তৎকালীন সরকারের প্রভাবশালীদের রোষানলে পড়তে হয়। আমাকে বিভিন্ন জায়গায় বদলি করা হয়। একপর্যায়ে আমাকে জোর করে রাজস্ব আপিলেট ট্রাইব্যুনালে বসায়। এখানে কোনো আইনজীবী বলতে পারবে না ট্রাইব্যুনালে থাকাবস্থায় আমি এক টাকার দুর্নীতি করেছি। ট্রাইব্যুনালের ১২ হাজার মামলার জট নিষ্পত্তি করেছি। ভালো কাজের স্বীকৃতি হিসেবে সরকার আমাকে ৩৪ লাখ টাকা উপহার হিসেবে দেয়। সেগুলো আমি শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করি। আমার যাবতীয় আয় ট্যাক্স ফাইলে উল্লেখ আছে। আমি আদালতের কাছে ন্যায়বিচার চাই।
উল্লেখ্য, গত ৬ জানুয়ারি মতিউর রহমান ও তার পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে তিনটি মামলা দায়ের করে দুদক। প্রত্যেক মামলায় মতিউর রহমানকে আসামি করা হয়েছে। তিন মামলার মধ্যে একটিতে আসামি করা হয়েছে মতিউরের প্রথম স্ত্রী লায়লা কানিজকে। সে মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, লায়লা কানিজ দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে অসৎ উদ্দেশ্যে ১ কোটি ৫৩ লাখ ৬৩ হাজার ৬৯০ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন এবং জ্ঞাত আয়বহির্ভূত ১৩ কোটি ১ লাখ ৫৮ হাজার ১০৬ টাকার সম্পদ অর্জন করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইনে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন। এসব সম্পদ অর্জনে সহায়তা করেছেন মতিউর রহমান। তাই তাদের বিরুদ্ধে দুদক আইন, ২০০৪ এর ২৬(২), ২৭ (১) ধারা, দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭ এর ৫(২) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করা হলো।
আরেক মামলায় আসামি করা হয়েছে মতিউর রহমানের মেয়ে ফারজানা রহমান ইপ্সিতা এবং স্ত্রী লায়লা কানিজকে। এ মামলার এজাহারে দুদকে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে মিথ্যা তথ্য প্রদান এবং ৫৩ কোটি ৪১ লাখ ৩৮ হাজার ৩৯৩ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪ এর ২৬(২), ২৭(১) ধারা এবং দণ্ডবিধির ১৮৬০ এর ১০৯ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়েছে।
অপর মামলায় মতিউর রহমানের ছেলে ছাগলকাণ্ডে আলোচিত আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবকে আসামি করা হয়েছে। এ মামলার এজাহারে আহমেদ তৌফিকুর রহমান অর্ণবের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে অসৎ উদ্দেশ্যে মিথ্যা ও ভিত্তিহীন তথ্য-প্রমাণসহ ৪২ কোটি ২২ লাখ ৫৮ হাজার ২৭১ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে।
গত ১৪ জানুয়ারি ভোরে রাজধানীর বসুন্ধরা আবাসিক এলাকা থেকে মতিউর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়। ওইদিন অস্ত্র আইনে দায়ের করা মামলায় তার তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করে এবং রিমান্ড শেষে ১৮ জানুয়ারি তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন আদালত।
বিএনএনিউজ / আরএস/শাম্মী