বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থী শাহরিয়ারের মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভুত পরিস্থিতি নিয়ে মুখ খুলেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বুধবার (২৬ অক্টোবর) জনসংযোগ দপ্তরের প্রশাসক অধ্যাপক প্রদীপ কুমার পান্ডে স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে পুরো ঘটনা নিয়ে প্রশাসনের বক্তব্য প্রকাশ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, গত ১৯ অক্টোবর, ২০২২ আনুমানিক রাত আনুমানিক ৮টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের মার্কেটিং বিভাগ ও শহীদ হবিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী এস জে এম শাহরিয়ার হলের তৃতীয় তলা থেকে নিচে পড়ে গিয়ে গুরুতর আঘাতপ্রাপ্ত হয়। তাৎক্ষণিকভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যাম্বুলেন্সযোগে চিকিৎসার জন্য তাঁকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের জরুরি বিভাগে নেওয়া হয়।
আহত শাহরিয়ারের আইসিইউ-এর প্রয়োজনীয়তার কথা উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন জানায়, গুরুতর আহত ও রক্তাক্ত শাহরিয়ারকে সেসময় আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন ছিল। কিন্তু জরুরি বিভাগের কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে যথাযথ চিকিৎসা না দিয়ে ৮ নম্বর ওয়ার্ডে পাঠান। ঐ ওয়ার্ডে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডাকাডাকির প্রায় আধঘন্টা পর চিকিৎসক ও নার্স আহত শাহরিয়ারের কাছে আসেন। তাৎক্ষণিক চিকিৎসা না দিয়ে চিকিৎসক ও নার্স নানা অজুহাতে কালক্ষেপণ করতে থাকেন। কিছুক্ষণ পর তাঁরা শাহরিয়ারকে মৃত ঘোষণা করেন। শাহরিয়ারের মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়লে হতবিহ্বল সহপাঠী ও বন্ধুরা রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে পৌঁছায় এবং কর্তব্যে অবহেলাজনিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে শিক্ষার্থীরা শান্তিপূর্ণভাবে বিক্ষোভ করতে থাকে।
বিজ্ঞপ্তিতে রাবি শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পেছনে রামেক হাসপাতালের কতিপয় ব্যক্তি জড়িত বলে দাবি করা হয়।
সৃষ্ট পরিস্থিতির কারণে দ্রুত তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছিলো উল্লেখ করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, মৃত্যুর খবর নিশ্চিত হবার পর পরই, সেই রাতেই বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মতিহার থানায় একটি অভিযোগ করে যা পরবর্তীতে অপমৃত্যুর মামলা হিসাবে থানা গ্রহণ করে। সঠিক ঘটনা উদঘাটন ও পরিস্থিতি উত্তরণে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগের কোনো ঘাটতি ছিলো না।
রামেকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়েরের বিষয়ে বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, একদিকে চিকিৎসক, ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং নার্সসহ হাসপাতাল সংশ্লিষ্টদের হামলায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষার্থীর আহত হওয়া…আবার ঘটনার দিনে অনুষ্ঠিত বৈঠকের আলোচনাকে গুরুত্ব না দিয়ে শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করায় পরবর্তীতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন শাহরিয়ারের মৃত্যু ও শিক্ষার্থীদের উপর হামলার ন্যায়বিচার চেয়ে রাজপাড়া থানায় অভিযোগপত্র জমা দেয়।
সেই সাথে, সাংসদ ফজলে হোসেন বাদশার বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রাজশাহীর একজন জনপ্রতিনিধি শিক্ষার্থী শাহরিয়ারকে হত্যা করে মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া, এবং শাহরিয়ারের পরিবারকে হুমকি দিয়ে ময়নাতদন্ত ছাড়াই লাশ নিয়ে পালিয়ে যাওয়াসহ হাসপাতালে উদ্ভূত পরিস্থিতির বিষয়ে গণমাধ্যমে অমূলক তথ্য প্রদান করেছেন। তিনি অনাকাঙ্খিতভাবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী-শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ষড়যন্ত্রকারী ও স্বাধীনতাবিরোধী বলে আখ্যায়িত করেন।
শাহরিয়ারের মরদেহ গ্রহণের ক্ষেত্রে তার পরিবারের ইচ্ছাকেই প্রাধান্য দেয়া হয়েছিল বলে জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। “শাহরিয়ারের পরিবারের সদস্যরা (মৃতের বড় ভাই) কোনো ধরণের অভিযোগ বা ময়নাতদন্ত ছাড়াই মরদেহ গ্রহণ করে।”
এছাড়া, বিজ্ঞপ্তিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন মরদেহ হস্তান্তর প্রসঙ্গে জানতে চেয়েছে, “ডাক্তাররা যদি এতটাই নিশ্চিত থাকেন যে, শাহরিয়ারকে পূর্বেই হত্যা করা হয়েছে তবে হত্যা ও পূর্বরাত্রীর ঘটনাবলীর কথা বিবেচনা করে কেনো বিনা ময়নাতদন্তে লাশ হস্তান্তর করলেন?”
রামেক কর্তৃপক্ষের দায়িত্বহীনতা নতুন কিছু নয় দাবি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বলেছে, ‘রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চিকিৎসক, ইন্টার্ন, নার্সসহ সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বহীনতা এমনকি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের উপর হামলা-মারধরের ইতিহাস নতুন কিছু নয়। মাঝেমধ্যেই গণমাধ্যমে সেগুলো প্রচারিত/প্রকাশিত হয়। একজন চিকিৎসাপ্রার্থীর সাথে কোনো চিকিৎসক ও সংশ্লিষ্টদের অসংগত আচরণ কখনোই কাম্য নয়।’
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ও রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল “কেউ কারো প্রতিপক্ষ নয়” উল্লেখ করে দায়িত্বশীল আচরণের মাধ্যমে উদ্ভূত পরিস্থিতির সৌহাদ্যপূর্ণ নিরসন করা সম্ভব বলে বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়।
বিএনএ/সাকিব, ওজি