বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে একের পর এক ছাত্র নির্যাতন ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আসছে। শোকের মাসে রাবি ছাত্রলীগের এসব কর্মকান্ড সংবাদমাধ্যমে আসায়, সমালোচনার মুখে পড়েছে সংগঠটি।
মতিহার হলে ছাত্র নির্যাতনের রেশ কাটত না কাটতেই, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের এক শিক্ষার্থী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে মারধর ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেনে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কুরিয়ারে পাঠানো শিক্ষার্থীর একটি লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, গত ১৭ আগস্ট তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলে দুই ছাত্রলীগ নেতার দ্বারা তিন ঘণ্টার বেশি সময় ধরে নির্যাতনের শিকার হন। নির্যাতনের পর তাঁর ডেবিট কার্ড থেকে অই দুই নেতা ৪৫ হাজার টাকাও ছিনিয়ে নিয়েছেন।
চিঠিটি কুরিয়ারের মাধ্যমে বৃহস্পতিবার (২৬ আগস্ট) বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অফিসে পৌঁছেছে। এ ঘটনায় তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে প্রশাসন।
নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থী মো. আল-আমিন, বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাববিজ্ঞান ও তথ্য ব্যবস্থা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী। তাঁর বাড়ি শরীয়তপুর সদর উপজেলায়। তাঁর চতুর্থ বর্ষের প্রথম সেমিস্টারের চূড়ান্ত পরীক্ষা চলছে। ১৭ আগস্ট ছিল প্রথম পরীক্ষা।
অভিযোগের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. আসাবুল হক বলেন, ‘কুরিয়ারের মাধ্যমে একটি লিখিত অভিযোগ কাছে এসেছে। আমরা ইতোমধ্যেই একটি তদন্তে কমিটি গঠন করেছি।’
লিখিত অভিযোগ থেকে জানা যায়, মো. আল-আমিন ১৭ আগস্ট বিভাগের পরীক্ষায় অংশ নেন। বিকেল সাড়ে চারটায় পরীক্ষা শেষে বের হওয়ার পরপরই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও মতিহার হল ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা তাঁকে রবীন্দ্রভবন থেকে বঙ্গবন্ধু হলের ৩৩১ নম্বর কক্ষে নিয়ে যান। কিছুক্ষণ পর সেখানে মুমিনুর রহমান, ফয়সাল আহমেদ ওরফে শশী, তাকি আহমেদসহ অনেকে আসেন। মুমিনুর রহমানের সঙ্গে আসা লোকজন তাঁকে প্রচুর মারধর করেন। মুমিনুর তাঁর মাথায় দুই লিটার পানির বোতল ও লাঠি দিয়ে আঘাত করেন।
তিনি এক পর্যায়ে অচেতন হয়ে যান। এ সময় তাঁর মুঠোফোন থেকে ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেন তাঁরা। জ্ঞান ফেরার পর রাত আটটার দিকে জোরপূর্বক তাঁর ডেবিট কার্ড নিয়ে গিয়ে ৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেন সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা। মুমিনুর ও তাঁর অনুসারীরা তাঁকে প্রাণনাশের হুমকি দেন। মৃত্যুভয়ে আতঙ্কিত হয়ে পড়েন তিনি। তাঁরা জোরপূর্বক মিথ্যা জবানবন্দি দিতে বাধ্য করেন এবং সেটির ভিডিও ধারণ করেন।
এমনকি হুমকি দিয়ে বলেন, তাঁদের কথার বিপক্ষে কোনো কথা বললে এবং কোনো পদক্ষেপ নিলে তাঁকে মেরে ফেলা হবে। তাই তিনি জীবন বাঁচানোর জন্য তাঁরা যা বলেছেন, তাই করেছেন তিনি।
আল-আমিন অভিযোগে আরও উল্লেখ করেছেন, তাঁকে ভয় দেখিয়ে স্টাম্প পেপারে স্বাক্ষর নেওয়ার চেষ্টা করেন তাঁরা। কিন্তু তাঁর বোন জাতীয় জরুরি নম্বরে (৯৯৯) কল করার পর পুলিশ আসায় স্বাক্ষর নিতে পারেননি। ওই হলে অন্য একটি ঘটনায় সাংবাদিক, পুলিশ ও অন্যরা এলে রাত নয়টার দিকে তাঁকে ছেড়ে দেওয়া হয়। সে রাতেই জীবন বাঁচাতে বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা অসম্পূর্ণ রেখে শরীয়তপুরে চলে যান তিনি। এখনো তাঁকে হুমকি-ধমকি দেওয়া হচ্ছে।
নির্যাতনের বিষয়ে মুমিনুর রহমান বলেন, আল-আমিনসহ আরও কয়েকজনকে তিনি চাকরি দিয়েছিলেন। এক-দেড় বছর চাকরি করার পর আল-আমিন বললেন, তিনি বিসিএস পরীক্ষা দেবেন। আল-আমিন চলে যান। কিন্তু তাঁরা কয়েকজন গিয়ে আরেকটি কোম্পানি খোলেন। সেখানে তাঁর কোম্পানির ক্লায়েন্টদের নিচ্ছেন তাঁরা। এতে তাঁর ১০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। এ নিয়ে তাঁরা ১৭ আগস্ট বিষয়টির সুরাহার জন্য কথা বলতে বসেছিলেন তাঁরা। তাঁকে কেউই মারধর করেননি।
৪৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, সুরঞ্জিত প্রসাদ বৃত্ত ও ভাস্কর সাহা আলোচনার সময় ছিলেন। কিন্তু পরে কী হয়েছে, এটা বলতে পারবেন না তিনি।
এদিকে, আরেক অভিযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের মতিহার হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ভাস্কর সাহা বলেন, তিনি শুধু আলোচনার সময় উপস্থিত ছিলেন। মুমিনুর ও আল-আমিনের মধ্যে ব্যবসায়িক একটি বিষয় ছিল। তাঁর বিরুদ্ধে আসা অভিযোগটি মিথ্যা। তাঁর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র চলছে।
প্রসঙ্গত, গত সপ্তাহে ভাস্কর সাহার বিরুদ্ধে মতিহার হলের আবাসিক শিক্ষার্থী — সামছুল ইসলামকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে শারীরিক নির্যাতন ও ২০ হাজার টাকা চাঁদা নেওয়ার অভিযোগ উঠেছিল । নির্যাতনের ঘটনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও সাংবাদিকদের জানালে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরারের মতো পরিণতি হবে বলে হুমকি দেওয়া হয়েছিল এই শিক্ষার্থীকে। বিষয়টি নিয়ে তদন্ত চলমান আছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের।
বিএনএ/ সাকিব,এমএফ