ধর্ম ডেস্ক: যারা সন্তানকে নামাজের নির্দেশ দেবে এবং তাদের নামাজে অভ্যস্ত করার চেষ্টা করবে, তাদের জন্য সবচেয়ে বড় পুরস্কার হলো আল্লাহর সন্তুষ্টি। আল্লাহ তাআলা পবিত্র কোরআনে ইসমাইল (আ.)-এর প্রশংসা করে বলেছেন, ‘সে তার পরিবারকে নামাজ ও জাকাতের নির্দেশ দিত এবং সে ছিল আল্লাহর সন্তোষভাজন বান্দা।’ (সুরা মরিয়ম: ৫৫)
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রা.) বলেন, ‘আল্লাহর আনুগত্যে অবিচলতা ও পরিবারকে নির্দেশ দেওয়ার কারণেই আল্লাহ এই উচ্চতর প্রশংসা করেছেন।’ ইসমাঈল (আ.) চাননি তার পরিবারের লাকেরা জাহান্নামে প্রবেশ করুক। এ ব্যাপারে তিনি কোনো ছাড় দেননি। (ইবনে কাসির)
কোরআনুল কারিমে সাধারণ মুসলিমদেরকে বলা হয়েছে—‘তোমরা নিজেদেরকে এবং নিজেদের পরিবারবর্গকে আগুন থেকে রক্ষা করো..’ (সুরা তাহরিম: ৬)। পরিবার পরিজনকে আগুন থেকে রক্ষার উপায় এই যে—আল্লাহ তাআলা যেসব কাজ করতে নিষেধ করেছেন, তোমরা তাদেরকে সেসব কাজ করতে নিষেধ করো এবং যেসব কাজ করতে আদেশ করেছেন, তোমরা পরিবার-পরিজনকেও সেগুলো করতে আদেশ করো। এই কর্মপন্থা তাদেরকে জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করতে পারবে। (ইবনে কাসির)
রাসুলুল্লাহ (স.) ইরশাদ করেছেন, ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদেরকে সাত বছর বয়সে পৌঁছলেই নামাজের নির্দেশ দাও, আর তাদেরকে ১০ বছর হলে এর জন্য দণ্ড দাও। আর তাদের শোয়ার জায়গা আলাদা করে দাও।’ (আবু দাউদ: ৪৯৫, মুসনাদে আহমদ: ২/১৮০)
প্রিয়নবী (স.) সেসকল উম্মতের জন্য রহমতের দোয়া করেছেন, যারা নিজেদের এবং পরিবার পরিজনের নামাজের ব্যাপারে খুব সজাগ। ইরশাদ হয়েছে, ‘আল্লাহ ওই ব্যক্তিকে রহমত করুন, যে নিজে রাতে নামাজ আদায় করতে দাঁড়িয়েছে, এবং তার স্ত্রীকে জাগিয়েছে, সে যদি দাঁড়াতে অস্বীকার করে তার মুখে পানি ছিটিয়েছে। আল্লাহ ওই মহিলাকেও রহমত করুন, যে নিজে রাতে নামাজ আদায় করতে দাঁড়িয়েছে এবং তার স্বামীকে জাগিয়েছে, যদি সে দাঁড়াতে অস্বীকার করে তার মুখে পানি ছিটিয়েছে।’ (আবু দাউদ: ১৪৫০; ইবনে মাজাহ: ১৩৩৬)
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘যদি কেউ রাতে জাগ্রত হয়ে তার স্ত্রীকে জাগিয়ে দুরাকাত নামাজ আদায় করে তাহলে তারা দুজনের নাম অধিকহারে আল্লাহর জিকিরকারী ও জিকিরকারিনীদের মধ্যে লেখা হবে।’ (আবু দাউদ: ১৩০৯, ইবন মাজাহ: ১৩৩৫)
হাদিসের ভাষ্য অনুযায়ী, সন্তান ঠিকমতো নামাজ পড়ছে কি না, সেদিকে মা-বাবাকে লক্ষ্য রাখতে হবে এবং নামাজে অলসতা করলে জবাবদিহির আওতায় আনতে হবে (আবু দাউদ: ১৩৫৬০)। সন্তান যেন নামাজের প্রতি যত্নবান হয়, সেজন্য মা-বাবা দোয়াও করবে। (সুরা ইবরাহিম: ৪০)
মনে রাখতে হবে, মা-বাবা একজন নেক সন্তানের মাধ্যমে সমাজের বুকে যেমন সম্মানিত হন, তেমনি আখিরাতেও তাঁদের মর্যাদা বাড়িয়ে দেওয়া হয়। রাসুল (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয়ই মহান আল্লাহ জান্নাতে নেককার বান্দার মর্যাদা বুলন্দ করবেন, তখন সে বলবে, হে আমার রব, কেন আমার জন্য এই উচ্চ মর্যাদা? তখন আল্লাহ বলবেন, তোমার জন্য তোমার সন্তানের ক্ষমা প্রার্থনা করার কারণে।’ (মুসনাদে আহমদ: ১০৬১০)
সুতরাং সন্তানকে নামাজি ও নেককার সন্তান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। অন্যদিকে, পরিবার-পরিজনের নামাজ ও অন্যান্য ইবাদতের ব্যাপারে উদাসীন হলে ফল খুবই খারাপ হবে। কেননা রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা প্রত্যেকেই রাখাল বা দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেককেই তার অধীনস্থ লোকদের সম্পর্কে জবাবদিহি করতে হবে। শাসকও রাখাল বা দায়িত্বশীল, তাকে তার অধীনস্থ লোকদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে। নারী তার স্বামীর বাড়ী এবং তার সন্তান-সন্ততির তত্ত্বাবধায়িকা, তাকে তাদের ব্যাপারে জবাবদিহি করতে হবে।’ (বুখারি: ৮৯৩, ৫১৮৮)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে সন্তানাদি ও পরিবার-পরিজনের ব্যাপারে সতর্কতার সঙ্গে দীনি দায়িত্ব পালনের তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ