22 C
আবহাওয়া
১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩৫ (টাঙ্গাইল-৬)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩৫ (টাঙ্গাইল-৬)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে টাঙ্গাইল-৬ আসনের হালচাল।

টাঙ্গাইল-৬ আসন

টাঙ্গাইল-৬ সংসদীয় আসনটি দেলদুয়ার এবং নাগরপুর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ১৩৫ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির খন্দকার আবু তাহের বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬৭ হাজার ৯ শত ৯৭ জন। ভোট প্রদান করেন ৮৪ হাজার ৫ শত ৮২ জন। নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার আবু তাহের বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৮ শত ৪৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১৭ হাজার ৯ শত ৩৬ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির খন্দকার আবু তাহেরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার আবু তাহেরকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির গৌতম চক্রবর্তী বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৮ শত ৪৫ জন। ভোট প্রদান করেন ৯০ হাজার ৯ শত ২৭ জন। নির্বাচনে বিএনপির গৌতম চক্রবর্তী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৪ হাজার ২ শত ৭৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের খন্দকার আব্দুল বাতেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৩২ হাজার ৩ শত ২৯ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির গৌতম চক্রবর্তী বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮২ হাজার ১ শত ৬৪ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৩ শত ৩০ জন। নির্বাচনে বিএনপির গৌতম চক্রবর্তী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ১ শত ৭৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের খন্দকার আব্দুল বাতেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫৩ হাজার ২ শত ৯৫ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: স্বতন্ত্র প্রার্থী খন্দকার আব্দুল বাতেন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৩ হাজার ১ শত ৪১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৭৬ হাজার ৫ শত ১৩ জন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী বদল করে। এটি মেনে নেয়নি অষ্টম সংসদ নির্বাচনে নৌকার প্রার্থী খন্দকার আব্দুল বাতেন। তিনি স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়ে বিজয়ী হন। হরিণ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৩৫ হাজার ১ শত ৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আহসানুল ইসলাম টিটু। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৫ হাজার ৮ শত ৫৬ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের খন্দকার আব্দুল বাতেন বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪৭ হাজার ১ শত ৩৯ জন। ভোট প্রদান করেন ৮২ হাজার ৪ শত ৬৮ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগে ফিরে আসা খন্দকার আব্দুল বাতেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৬ হাজার ২ শত ৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী এটিএম আনিসুর রহমান বুলবুল। আনারস প্রতীকে তিনি পান ১৪ হাজার ৬ শত ২১ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আহসানুল ইসলাম টিটু বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯০ হাজার ৪ শত ৪৬ জন। ভোট প্রদান করেন ৩ লাখ ৩৬ হাজার ১ শত ৩৯ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৮ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের আহসানুল ইসলাম টিটু, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির গৌতম চক্রবর্তী, ফুলের মালা প্রতীকে তরিকত ফেডারশনের মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের মোঃ আখিনুর মিয়া, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর সুলতান মাহমুদ, আম প্রতীকে ন্যাশন্যাল পিপলস পার্টির মামুনুর রহমান, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল কাশেম ও ট্রাক প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী এম আশরাফুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আহসানুল ইসলাম টিটু বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ৮০ হাজার ২ শত ২৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির গৌতম চক্রবর্তী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৪ হাজার ৫ শত ৪৯ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, নবম সংসদে স্বতন্ত্র এবং দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর টাঙ্গাইল-৬ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-৬ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫০.৩৫% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২১.২১%, বিএনপি ৩৮.৮৩%, জাতীয় পাটি ০.৮৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩৯.১৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭০.০৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৫.৫৫%, বিএনপি ৩৭.৭০%, জাতীয় পাটি ২৪.৩৫%, জামায়াতে ইসলামী ১.৮৪%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৫৬% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭১.০০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.২১%, ৪দলীয় জোট ৪২.৬৬%, জাতীয় পার্টি ১.৮৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৪.২৬% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.৪৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৩১.৬৬%, ৪দলীয় জোট ১৬.৬৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৫১.৭১% ভোট পায়।

টাঙ্গাইল-৬ (দেলদুয়ার-নাগরপুর) আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের শিল্প ও বাণিজ্যবিষয়ক সম্পাদক আহসানুল ইসলাম টিটু। দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। এই আসনে আওয়ামী লীগ থেকে অন্তত এক ডজন নেতা মনোনয়ন চাইবেন। এরমধ্যে রয়েছেন সাবেক প্রতিমন্ত্রী ও অভিনেত্রী তারানা হালিম, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক উপকমিটির সদস্য এবং টাঙ্গাইল জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য তারেক শামস খান হিমু। নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. জাকিরুল ইসলাম উইলিয়াম, বাংলাদেশ জাতীয় ফুটবল দলের সাবেক অধিনায়ক আলহাজ্ব মো. খুরশিদ আলম বাবুল, নাগরপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারন সম্পাদক ও নাগরপুর সদর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. কুদরত আলী। দেলদুয়ার উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক লায়ন এম শিবলী সাদিক, নাগরপুর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড উপদেষ্টা খন্দকার আছাব মাহমুদ, বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবি পরিষদ সদস্য ব্যারিস্টার খন্দকার রেজা-ই-রাকিব। ব্যারিস্টার এম. আশরাফুল ইসলাম, জেলা আওয়ামী লীগের সাবেক ত্রাণ ও সমাজ কল্যাণ সম্পাদক ইনসাফ আলী ওসমানী।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন দলের কেন্দ্রীয় নেতা নুর মোহাম্মদ খান, জেলা বিএনপি সিনিয়র সহসভাপতি এ্যাড. আলী ইমাম তপন, নাগরপুর উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা এম.এ ছালাম, সহ-সভাপতি মোহাম্মদ শরিফুল ইসলাম স্বপন, উপজেলা বিএনপির সদস্য দিপালী চক্রবর্তী, অ্যাডভোকেট নাসরিন আকতার, দেলদুয়ার উপজেলা বিএনপির সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল আজিজ খান (চাঁন খা), বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আইনজীবি ফোরাম যুক্তরাজ্য ব্যারিস্টার সাজ্জাদ হোসেন।

টাঙ্গাইল জেলা কৃষক শ্রমিক জনতা লীগের সদস্য দিলিপ ধর সেন্টু, জাতীয় পার্টি থেকে কেন্দ্রীয় কমিটির সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মামুনুর রহিম সুমন দলীয় মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, টাঙ্গাইল ৬ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে পরিচিত। দলের মধ্যে কোন্দল থাকলে তা সহনীয়। কিন্তু আওয়ামী লীগে রয়েছে বেশ কয়েকটি গ্রুপ ও উপ গ্রুপ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন যতই এগিয় আসছে ততই কোন্দল তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে। যা নির্বাচনে সরাসরি প্রভাব পড়বে। সেইদিক থেকে অনেকটা নির্ভার রয়েছে বিএনপি।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৩৫তম সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-৬ আসনটি আওয়ামী লীগের হাত ছাড়া হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন।

বিএনএ/ শিরীন সুলতানা, এমএফ, ওয়াই এইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ