বিএনএ, চট্টগ্রাম:যারা নিজ দলের নেতাকর্মীদের নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, এবং নির্বাচনের জন্য যারা পাগল হয়েছেন
তারা ক্ষমতায় গিয়ে কী করবে – এ প্রশ্ন তুলেছেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আমীর ও চরমোনাই পীর মুফতি সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম।
শনিবার (২৬ এপ্রিল) সন্ধ্যায় চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলায় একটি কমিউনিটি সেন্টারে অনুষ্ঠিত ‘ওলামা ও সুধী সম্মেলনে’ তিনি একথা বলেন। জুলাই বিপ্লব পরবর্তী কল্যাণ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সংস্কারের প্রয়োজনীয়তা শীর্ষক এ সভার আয়োজন করে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা ইসলামী আন্দোলন।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘পাঁচ আগস্ট পরবর্তী যে সরকার এখন আছে, এ সরকারের অবস্থা কিন্তু নড়বড়ে। কারণ সাড়ে ১৫ বছরে ফ্যাসিস্ট সরকার এমন কোনো জায়গা বাদ রাখেনি যেখানে দলীয়করণ করেনি, সব জায়গায় ওদের গুণ্ডাদের বসিয়ে গেছে। সেই জায়গাগুলো পরিস্কার করে সুন্দর একটা পরিবেশ তৈরি না হওয়া পর্যন্ত আবার যদি নির্বাচন হয়, তাহলে সেই নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হবে বলে আমরা মনে করি।’
কোনো রাজনৈতিক দলের নাম উল্লেখ না করে তিনি বলেন, ‘যারা নির্বাচনের জন্য পাগল হয়েছেন, আপনারা ক্ষমতায় গিয়ে কী করবেন- এ প্রশ্ন রাখতে চাই। আপনারা সিগন্যাল তো আগেই দিয়ে ফেলেছেন। সারাদেশের ভেতরে কারা লুট করছে, কারা চাঁদাবাজি করছে, কারা ঘাট দখল করছে, কারা স্টেশন দখল করছে, কারা বিভিন্ন জায়গায় অশান্তি তৈরি করছে- এটা আমরা বাংলাদেশের মানুষ দেখছি। আপনারা নির্বাচন চান, অথচ এখন পর্যন্ত দলীয় লোকদেরই নিয়ন্ত্রণ করতে পারেননি। আপনারা ক্ষমতায় গিয়ে কি করবেন?’
‘আরও লুটতরাজ বাড়িয়ে দেবেন, আরও তাদের সুযোগ দেবেন, এটা বাংলাদেশের জনগণ এখন দেখে ফেলেছে। এটা আমরা বুঝে ফেলেছি। আর নয়। তারা বারবার ক্ষমতায় যাবে আর আমাদের মায়ের বুক খালি করবে, মিথ্যা মামলা দিয়ে হাজার হাজার পরিবার ধ্বংস করবে, এসব আর নয়।’
তিনি বলেন, ‘পাঁচ আগস্টের পর মানুষ কিন্তু জুলুমবাজ, খুনি, মিথ্যাবাজ, ধোঁকাবাজ, টাকা পাচারকারীদের আর ক্ষমতায় দেখতে চায় না। এখন মানুষ নীতি-আদর্শের ইসলাম অনুযায়ী দেশ পরিচালিত হবে, সেটা দেখার জন্য, সমর্থন দেয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছে। মানুষ বলছে, আমরা বিএনপি দেখেছি, আওয়ামী লীগ দেখেছি, জাতীয় পার্টি দেখেছি, আরও অনেক দেখেছি, কিন্তু ইসলাম তো দেখিনি।’
ইসলামী দলগুলো আর কারও ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘৫৩ বছর ধরে যারা এদেশের রাষ্ট্রক্ষমতা পরিচালনা করেছে, তারা বারবার ইসলামী দলগুলোকে বোকা পেয়ে ধোঁকা দিয়ে গেছে। আমাদের ক্ষমতায় যাবার সিঁড়ি হিসেবে ব্যবহার করেছে। আমরা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ কারও ক্ষমতার সিঁড়ি হতে চাই না। বাংলাদেশের ইসলামী দলগুলোর নির্বাচনে যাতে একটা বাক্স থাকে, সব ভোট যেন একটা বাক্সে যায়, সেই চেষ্টা আমরা শুরু করেছি এবং ধারাবাহিকতা চলছে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের পক্ষ থেকে আমরা পরিস্কারভাবে বলছি, আগে যৌক্তিক সংস্কার হবে, তারপর যৌক্তিক সময়ের ভেতরে জাতীয় নির্বাচন হবে। সরকারকে বলব, আপনারা আপনাদের প্রশাসনিক কাঠামো আরও মজবুত করেন। আপনারা দৃঢ়ভাবে আপনাদের কার্যক্রম পরিচালনা করবেন।’
নারীনীতি নিয়ে ভুল না করার আহ্বান জানিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের উদ্দেশ্যে সৈয়দ মুহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ‘হাজার হাজার ছাত্র-তরুণ জীবন দিয়েছে, পঙ্গু হয়েছে, চোখ হারিয়েছে, এর সুবাদেই আপনারা এখন ক্ষমতায় আছেন। আপনারা যদি নারী সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব বাস্তবায়নের চেষ্টা করেন, তাহলে এদেশের ওলামায়ে কেরাম, ধর্মপ্রিয় মানুষ রাস্তায় নামবে। আমরা যখন রাস্তায় নামবো, তখন ওই জালিমেরা সুযোগ পাবে। দয়া করে এ সুযোগটা তাদের তৈরি করে দেবেন না। এ ভুল করবেন না, পরিস্কারভাবে বলছি। ইসলামবিরোধী, মানুষের চরিত্র হননকারী এই নারীনীতি আমরা বাস্তবায়ন হতে দেব না।’
প্রতিবেশি দেশের ষড়যন্ত্র নিয়ে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, ‘একাত্তরে দেশ স্বাধীন হয়েছে, এটা ঠিক। কিন্তু আমরা দেশের মানুষ স্বাধীন ছিলাম না, আমরা ছিলাম পরাধীন। পাঁচ আগস্টের পর আমাদের স্বাধীনভাবে মতামত দেয়া, স্বাধীনভাবে কার্যক্রম পরিচালনার একটা ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে। কিন্তু আমাদের প্রতিবেশি, যারা আমাদের বন্ধু বলে আমাদের সবসময় চুষে খেয়েছে, তারা একদম শকুনের মতো আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে, যে কোনোসময় তারা ছোবল দেবে। তারা বড় ইস্যু তৈরি করবে সংখ্যালঘুর নামে নির্যাতনের কথা বলে। সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’
সভায় দলটির চট্টগ্রাম মহানগর, উত্তর ও দক্ষিণ জেলার নেতারা বক্তব্য দেন।
বিএনএনিউজ/ নাবিদ