ধর্ম ডেস্ক: প্রতিদিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ মুসলমানদের জন্য ফরজ। জামাতে নামাজ পড়া ওয়াজিব। ইরশাদ হয়েছে, ‘আর তোমরা সালাত প্রতিষ্ঠা করো ও জাকাত দাও এবং রুকুকারীদের সঙ্গে রুকু করো।’ (সুরা বাকারা: ৪৩)
আবার জামাতে নামাজ পড়ার জন্য কাতার সোজা রাখার বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। নামাজে ধনী-গরিব, সাদা-কালো, রাজা-প্রজার মাঝে কোনো ব্যবধান থাকে না। তাই নামাজে কাতার সোজা রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ আমল। এতে সবাই ঐক্যবদ্ধ এবং পরস্পরের মধ্যে ব্যবধান নেই—এ কথারই প্রমাণ মেলে। কাতার সোজা রাখা সুন্নত, মোস্তাহাব, ওয়াজিব—এ নিয়ে বিভিন্ন মতামত থাকলেও কাতার সোজা না রাখা মাকরুহে তাহরিমি। যারা কাতার সোজা রাখেন তাদের জন্য ফেরেশতারা রহমতের দোয়া করেন।
এ প্রসঙ্গে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘নিশ্চয় আল্লাহ তাআলা এবং ফেরেশতারা তাদের প্রতি রহমত বর্ষণ করেন, যারা কাতার সোজা করে। আর যে ব্যক্তি কাতারে ফাঁক বন্ধ করে আল্লাহ তাআলা তার একটি মর্যাদা বাড়িয়ে দেন।’ (ইবনে মাজাহ: ৯৯৫; মুসনাদে আহমদ: ২৪৬৩১)
ইবনে ওমর (রা.) বর্ণিত হাদিসে রাসুলুল্লাহ (স.) বলেছেন, ‘তোমরা কাতার সোজা করো, কাঁধগুলো বরাবর রাখো, ফাঁক বন্ধ করো। তোমাদের ভাইদের হাতে তোমরা নরম হয়ে যাও এবং শয়তানের জন্য ফাঁক ছেড়ে দিও না। যে ব্যক্তি কাতার সংযুক্ত করে, আল্লাহও তাকে সংযুক্ত করে দেন। আর যে ব্যক্তি কাতার বিচ্ছিন্ন করে, আল্লাহও তাকে বিচ্ছিন্ন করে দেন।’ (আবু দাউদ: ৬৬৬)
হজরত আনাস (রা.) বলেন, ‘একদা নামাজের ইকামত দেওয়া হলে রাসুলুল্লাহ (স.) আমাদের অভিমুখী হয়ে বললেন, তোমরা তোমাদের কাতারগুলো সোজা করো এবং গায়ে গায়ে মিশে দাঁড়াও। আমি তোমাদেরকে আমার পেছন দিক থেকেও দেখতে পাই।’ (বুখারি: ৭১৯)
যে সমাজ নামাজের কাতারের প্রতি বেশি যত্নবান হবে সে সমাজ তত সুন্দর ও সুসংহত থাকবে। নোমান ইবনে বশির (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসুল (স.) আমাদের (নামাজের) কাতারগুলো সোজা করে দিতেন, মনে হতো যেন তিনি কামানের কাঠ সোজা করছেন। যতক্ষণ না বুঝতে পারতেন যে আমরা পুরোপুরি বিষয়টি বুঝতে পেরেছি। অতঃপর তিনি স্বস্থানে দাঁড়িয়ে তাকবিরে তাহরিমা বলতে যাবেন, এমন সময় দেখলেন এক ব্যক্তি কাতার থেকে সামনে এগিয়ে আছে, তখন তিনি বলেন, আল্লাহর বান্দাগণ তোমাদের লাইন সোজা করো, অন্যথায় আল্লাহ তোমাদের মাঝে মতভেদ সৃষ্টি করে দেবেন। (মুসলিম: ৮৬৫)
কাতারের মাঝখানে ফাঁকা রেখে নামাজ পড়লে শয়তান খুব সহজেই ধোঁকা দিতে সক্ষম হয়। কারণ শয়তান এই ফাঁকা জায়গায় অবস্থান করে। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (স.) বলেছেন, তোমরা কাতারে পরস্পর মিশে দাঁড়াও। কাতারগুলোকে পরস্পর নিকটবর্তী রাখো এবং কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে দাঁড়াও। যাঁর হাতে মুহাম্মদের প্রাণ তাঁর শপথ! আমি শয়তানকে দেখছি ছোট ছোট বকরির মতো কাতারের মধ্যে প্রবেশ করছে। (নাসায়ি: ৮১৫)
কাতার সোজা রাখা ফেরেশতাদের গুণ। তাই নামাজে কাতার সোজা করার মাধ্যমে ফেরেশতাদের সাদৃশ্য অবলম্বন করা হয়। জাবের ইবনে সামুরাহ (রা.) বলেন, রাসুল (স.) বলেছেন, ‘ফেরেশতারা যেরূপ তাদের প্রতিপালকের কাছে কাতারবদ্ধ হয়ে থাকে তোমরা কি সেরূপ কাতারবদ্ধ হবে না? আমরা বললাম, ফেরেশতারা তাদের প্রতিপালকের কাছে কিরূপে কাতারবদ্ধ হয়? তিনি বলেন, সর্বাগ্রে তারা প্রথম কাতার পূর্ণ করে, তারপর পর্যায়ক্রমে পরবর্তী কাতারগুলো এবং তারা কাতারে পরস্পর মিলে মিলে দাঁড়ায়।’ (আবু দাউদ: ৬৬১)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে জামাতের কাতার সোজা রাখার তাওফিক দান করুন। প্রত্যেক আমল সুন্নাহ অনুযায়ী যথাযথ আদায় করার তাওফিক দান করুন। আমিন।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ