20 C
আবহাওয়া
১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮৩ (ঢাকা-১০)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮৩ (ঢাকা-১০)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮৩ (ঢাকা-১০)

বিএনএ, ঢাকা : বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে  ঢাকা-১০ আসনের হালচাল।

YouTube player

ঢাকা-১০ আসন

ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনটি ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের ১৪,১৫,১৬,১৭,১৮ ও ২২ নং ওয়ার্ড- নিয়ে গঠিত। এই আসনটি কলাবাগান, ধানমণ্ডি, নিউমার্কেট ও হাজারীবাগ নামে পরিচিত।  এটি জাতীয় সংসদের ১৮৩ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান  বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৬১ হাজার ৭ শত ৬২ জন। ভোট প্রদান করেন ৭৭  হাজার ৯ শত ৯১ জন। নির্বাচনে বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৪৫ হাজার ৭ শত ১১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের শেখ হাসিনা। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৪ শত ৫১ ভোট।

ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান কে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ১ শত ২৩ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৫৭ হাজার ৯৫ জন। নির্বাচনে  আওয়ামী লীগের  এইচ বি এম ইকবাল  বিজয়ী হন।  নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ২ শত ১৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন  বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান। ধানের শীষ প্রতীকে  তিনি পান ৬৩  হাজার ৬ শত ৩১ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১০ হাজার ২ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৩ হাজার ৯ শত ৫৪ জন। নির্বাচনে বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান বিজয়ী হন। ধানের শীষ  প্রতীকে তিনি পান ৯৪ হাজার ৯ শত ৯৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের এইচ বি এম ইকবাল  । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭৩ হাজার ৪৩ ভোট।

২০০৪ সালে এই আসনের সংসদ সদস্য অবসরপ্রাপ্ত মেজর আবদুল মান্নান পদত্যাগ করে সাবেক রাষ্ট্রপতি একিউএম বদরুদোজ্জা চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন বিকল্পধারায় যোগদান করেন এবং মহাসচিব হন। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত উপ-নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক সচিব মোহাম্মদ মোসাদ্দেক আলী ফালু সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের এ,কে,এম রহমত উল্লাহ বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪৯ হাজার ১ শত ৯০ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৮ হাজার ৭ শত ২৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের এ,কে,এম রহমত উল্লাহ বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৬৫ হাজার ৫ শত ৪৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির এম এ কাইয়ুম। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৮৯ হাজার ৭ শত ৯৮ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  ফজলে নুর তাপস বিনা প্রাতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের  ফজলে নুর তাপস বিনা প্রাতিদ্বন্দিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধিনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয়  জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহন করেনি

একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নুর তাপস  বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ১৩ হাজার ৭ শত ৪৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২৯ হাজার ৩ শত  জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৬ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নুর তাপস  ,ধানের শীষপ্রতীকে বিএনপির আবদুল মান্নান, লাঙ্গল প্রতীকে হেলাল উদ্দিন , হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের আবদুল আউয়াল, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস্‌ পার্টির কেএম শামসুল আলম, বাঘ  প্রতীকে প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক দল-পিডিপির বাহারানে সুলতান বাহার  প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শেখ ফজলে নুর তাপস  বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৬ হাজার ৬ শত ৫৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আবদুল মান্নান । ধানের শীষ  প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৪৪ হাজার ৯ শত ৩২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পরবর্তীতে শেখ ফজলে নূর তাপস পদত্যাগ করে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে নির্বাচন করে জয়ী হন। ২০১৮ সালের ১৮ এপ্রিল অনুষ্ঠিত উপ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঢাকা-১০ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-১০ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৪৮.২১% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.৭৬%, বিএনপি ৫৮.৬১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৬৩%ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৫.৭০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৭.২৪%, বিএনপি ৪০.৫০%, জাতীয় পাটি ৭.০৭%, জামায়াত ইসলামী ৩.১৭% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২.০২%ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৬.১২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪১.৯৯%, ৪ দলীয় জোট ৫৪.৬১%, জাতিয় পার্টি ২.৫৬%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৮৪% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৫৩% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬১.৯৫%, ৪ দলীয় জোট ৩৩.৬১%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৪.৪৪% ভোট পায়।

ঢাকা-১০ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। মনোনয়ন চাইবেন বঙ্গবন্ধুর ছোট মেয়ে শেখ রেহানার ছেলে রাদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি। বঙ্গবন্ধুর এই দৌহিত্র আওয়ামী লীগের গবেষণা প্রতিষ্ঠান সিআরআইয়ে সমন্বয়কের দায়িত্ব পালন করছেন। আরও মনোনয়ন চাইতে পারেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজী জাফরউল্লাহ এবং আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবীর নানক।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য আব্দুল মান্নান, তার জামাতা ব্যারিস্টার নাসিরউদ্দিন অসীম এবং ২০২০ সালের উপ-নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শেখ রবিউল আলম।

জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন চাইবেন হাজী মো. শাহজাহান। এছাড়া বাংলাদেশ মুসলিম লীগের নবাব খাজা আলী হাসান আসকারী, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মিজানুর রহমান চৌধুরী এবং পিডিপির কাজী মো. আব্দুর রহীম দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনেও প্রার্থী হবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণ দেখা যায়,  ঢাকা-১০ আসনটি বিএনপির দূর্গ হিসাবে পরিচিত ছিল। তবে আওয়ামী লীগও এই আসনে সাংগঠনিক অবস্থা আগের চেয়ে মজবুত করেছে। ২০০৮ সালে নবম সংসদ নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন যুবলীগ চেয়ারম্যান শেখ ফজলুল হক মনির ছেলে ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস। পরবর্তীতে অনুষ্ঠিত দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকে। কিন্তু তিনি মেয়র হওয়ার পর আসনটির চিত্র পাল্টে গেছে। দলীয় কোন্দল ও নেতৃত্ব বিরোধ দেখা দিয়েছে। যা নির্বাচনে প্রভাব পড়বে।

বিএনপি’র সাংগঠনিক অবস্থা বেশ  মজবুত। বিএনপি চায় অআসনটি পুরুদ্ধার। অন্যদিকে আওয়ামী লীগ চায় ধরাবাহিকতা ধরে রাখতে।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৮৩ তম সংসদীয় আসন (ঢাকা-১০)এ আওয়ামী লীগ ও বিএনপির মধ্যে হাড্ডাহাডি লড়াই হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।

বিএনএ/ শাম্মী, রেহেনা, ওজি, ওয়াইএইচ

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ