26 C
আবহাওয়া
৯:৪৭ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩৪ (টাঙ্গাইল-৫)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৩৪ (টাঙ্গাইল-৫)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে টাঙ্গাইল – ৫ আসনের হালচাল।

YouTube player

টাঙ্গাইল-৫ আসন

টাঙ্গাইল-৫ সংসদীয় আসনটি সদর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এই সদর উপজেলায় রয়েছে ১টি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন। এটি  জাতীয় সংসদের ১৩৪ তম আসন।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান বিজয়ী হন

১৯৯১ সালের ২৭ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৩৩ হাজার ১ শত ৫৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯২ হাজার ৮ শত ৫১ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ১ শত ৪৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৭১ হাজার ৪ শত ৫৫ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগদান করা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। ভোটারবিহীন এই নির্বাচনে জাতীয় পার্টি থেকে বিএনপিতে যোগদান করা অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসানকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান বিজয়ী হন

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮ হাজার ৪ শত ৭৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৩৯ হাজার ৯ শত ৮১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৯৫ হাজার ৯শত ৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন জাতীয় পার্টির আবুল কাশেম। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৪ শত ৩০ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান বিজয়ী হন

২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯১ হাজার ৫ শত ৪৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯৯ হাজার ৭ শত ৬১ জন। নির্বাচনে বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান বিজয়ী হয়। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯৬ হাজার ৫ শত ৪৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের আব্দুল মান্নান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৩ হাজার ৪ শত ৫৮ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: জাতীয় পার্টির আব্দুল কাশেম বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৬ হাজার ১৭ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬৭ হাজার ২ শত ১৪ জন। নির্বাচনে জাতীয় পার্টির আব্দুল কাশেম বিজয়ী হন। লাঙ্গল প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৫০ হাজার ৯শত ৪৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল মাহমুদুল হাসান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৪ হাজার ৪ শত ৫৫ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন বিজয়ী হন 

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৪০ হাজার ১ শত ৬৫ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ২৯ হাজার ৫ শত ৭২ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৭ হাজার ৯শত ৫৯ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সিদ্দিকী। টিয়াপাখি প্রতীকে তিনি পান ৫৯ হাজার ৩ শত ৯৮ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৮০ হাজার ৩ শত ৩৮ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮২ হাজার ৯ শত ৯১ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৯ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মাহমুদুল হাসান, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির সফিউল্লাহ আল মুনির, বটগাছ প্রতীকে খেলাফত আন্দোলনের সৈয়দ খালেকুজ্জামান মোস্তফা, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের খন্দকার ছানোয়ার হোসেন, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর শামীম আল মামুন, আম প্রতীকে ন্যাশন্যাল পিপলস পার্টির আবু তাহের, সিংহ প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মোহাম্মদ আবুল কাশেম ও মাথাল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মুরাদ সিদ্দিকী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ছানোয়ার হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৪৯ হাজার ৩ শত ৬২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মাহমুদুল হাসান। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৭৮ হাজার ৯ শত ৯২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম ও নবম সংসদে জাতীয় পার্টি, ষষ্ঠ ও অষ্টম সংসদে বিএনপি এবং সপ্তম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর টাঙ্গাইল-৫ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-৫ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৭.৮৯% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.০৫%, বিএনপি ১৫.৬৪%,জাতীয় পাটি ৩৮.৪৫%, জামায়াতে ইসলামী ১.৮৩%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৭.০৩% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৭.৮০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.৯৬%, বিএনপি ২৮.৩৫%, জাতীয় পাটি ২৮.৯৩%, জামায়াতে ইসলামী ১.৬৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.০৯% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৬.৫৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ২৭.৮৪%, ৪দলীয় জোট ৩২.২১%, জাতীয় পার্টি ১৬.৭৭%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ২৩.১৮% ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৫.৯০% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫৫.৯৯%, ৪দলীয় জোট ২৭.৭০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১৬.৩১% ভোট পায়।

টাঙ্গাইল-৫ (সদর) : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য মো. ছানোয়ার হোসেন। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। আওয়ামী লীগ থেকে আরও মনোনয়ন চাইবেন যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মামুনুর রশিদ, উপজেলা চেয়ারম্যান খোরশেদ আলম, টাঙ্গাইল পৌরসভার মেয়র জামিলুর রহমান মিরন। এ আসনে আওয়ামী লীগ থেকে মুরাদ সিদ্দিকী ও মনোনয়নপ্রত্যাশী বলে গুঞ্জন রয়েছে।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন সাবেক মন্ত্রী ও বেগম খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল (অব.) মাহমুদুল হাসান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ ইকবাল, সাবেক ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ছাইদুল হক ছাদু ও কেন্দ্রীয় সদস্য আহসান হাবিব।

জাতীয় পার্টি থেকে প্রার্থী সাবেক সংসদ সদস্য ও জেলা সভাপতি আবুল কাশেম ও সাধারণ সম্পাদক আবদুস সালাম চাকলাদার মনোনয়ন চাইবেন।

তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, টাঙ্গাইল-৫ সংসদীয় আসনটি একক কোন রাজনৈতিক দলের ঘাঁটি নয়। স্বাধীনতার পর আওয়ামী লীগ, পরবর্তীতে জাতীয় পার্টি ও বিএনপির ঘাটিতে পরিণত হয়। কিন্তু ২০০৮ সালের পর থেকে আসনটি বিএনপির হাত ছাড়া হয়ে যায়। বর্তমানে আসনটি আওয়ামী লীগের দখলে হলেও সাংগঠনিক অবস্থা তেমন সুদৃঢ় নয়। তার ওপর রয়েছে দলীয় কোন্দল। আওয়ামী লীগের ভরসা উন্নয়ন কর্মকান্ড।

বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ় হলেও দলীয় কোন্দল তীব্র ও প্রকট। আগামি নির্বাচনে যার বিরূপ প্রভাব পড়বে, এটা স্পষ্ট। জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক অবস্থায় ভাটার টান রয়েছে। তবে জাতীয়পার্টির প্রেসিডিয়াম মেম্বার আবুল কাশেমের ক্লিন ইমেজ রয়েছে। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি মহাজোটের প্রার্থী হিসাবে বিজয়ী হন। কিন্তু একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তাকে ছাড় দেয়নি আওয়ামী লীগ। দ্বাদশ জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনৈতিক রসায়ন কেমন হয়, তার ওপর নির্ভর করছে এই আসনের ভবিষ্যৎ।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৩৪ তম সংসদীয় আসন টাঙ্গাইল-৫ আসনে ত্রি-মূখী লড়াই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা।

বিএনএ/ শিরীন, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ