22 C
আবহাওয়া
৫:০৯ অপরাহ্ণ - ডিসেম্বর ২১, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৭৩ (মেহেরপুর-১)

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-৭৩ (মেহেরপুর-১)


বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত ৫ম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ওপর ভিত্তি করে রাজনৈতিক দল গুলোর আসন ভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে মেহেরপুর-১ আসনের হালচাল।

মেহেরপুর-১ আসন 

মেহেরপুর-১ সংসদীয় আসনটি মেহেরপুর সদর এবং মুজিবনগর উপজেলা নিয়ে গঠিত। এটি জাতীয় সংসদের ৭৩তম আসন। এই আসনটির সঙ্গে জড়িয়ে আছে বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস।

পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের অধ্যাপক  আব্দুল মান্নান বিজয়ী

১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৪৮ হাজার ১ শত ৩৮ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ১২ হাজার ৪ শত ৫ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অধ্যাপক  আব্দুল মান্নান বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান  ৪০ হাজার ৪ শত ৭৪ ভোট । তাঁর নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আহমেদ আলী। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৩৯ হাজার ৬ শত ৩২ ভোট।

৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আহমেদ আলীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। 

১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ৬ষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি, প্রতিহতও করে। এই নির্বাচনে বিএনপি, ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। নির্বাচনে বিএনপির আহমেদ আলীকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

সপ্তম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির আহমেদ আলী বিজয়ী 

১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম  সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৫৮ হাজার ৫শত ৮৯ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৩৮ হাজার ৮৮ জন। নির্বাচনে বিএনপির আহমেদ আলী বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬০ হাজার ৬ শত ২১ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সৈয়দ জোহরা তাজউদ্দিন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৫১ হাজার ৩ শত ৬৬ ভোট।

অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির মাসুদ অরুন বিজয়ী হন

২০০১ সালের ১ অক্টোবর  অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬ শত ৯৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৭৯ হাজার ১শত ৪৩ জন। নির্বাচনে বিএনপির মাসুদ অরুন বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২ হাজার ২৮ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের অধ্যাপক (অধ্যাপক) আব্দুল মান্নান। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৬৯ হাজার ৯ শত ৭১ ভোট।

নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের জয়নাল আবেদীন বিজয়ী হন

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন   ২ লাখ ২৩ হাজার ৪ শত ২৩ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৬ হাজার ৬ শত ১৩ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের জয়নাল আবেদীন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭ হাজার ৪ শত ৯২ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মাসুদ অরুন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৬২ হাজার ৭ শত ৪৫ ভোট।

দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ফরহাদ হোসেন বিজয়ী হন

২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফরহাদ হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮০ হাজার ১ শত ৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন না পাওয়া স্বতন্ত্র প্রার্থী ও তৎকালীন শহর আওয়ামী লীগের সভাপতি মোহাম্মদ ইয়ারুল ইসলাম। ফুটবল প্রতীকে তিনি পান ১৩ হাজার ৯ শত ১৯ ভোট। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেনি।

YouTube player

একাদশ সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের ফরহাদ হোসেন বিজয়ী হন

২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৬৯ হাজার ৬ শত ৫ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ১৬ হাজার ৯ শত ১৩ জন।

নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৫ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের ফরহাদ হোসেন, ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির মাসুদ অরুন, লাঙ্গল প্রতীকে জাতীয় পার্টির আব্দুল হামিদ, গোলাপ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির সাইদুল আলম ও হাত পাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের  আবুল কালাম কাছেমী প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ফরহাদ হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা  প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৯৭ হাজার ৯৭ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মাসুদ অরুন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১৪ হাজার ১ শত ৯২ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।

পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, মেহেরপুর-১ (সদর ও মুজিবনগর উপজেলা) নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনে পঞ্চম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ এবং ষষ্ঠ, সপ্তম ও অষ্টমে সংসদ নির্বাচনে বিএনপি বিজয়ী হয়।

দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর মেহেরপুর-১ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।

অনুসন্ধানে দেখা যায়, ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৫.৮৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৬.০১%, বিএনপি ৩৫.২৬%, জামায়াতে  ইসলামী ০.৯৬%, জাতীয় পার্টি ২৬.২৩ %,  স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ১.৫৪% ভোট পায়।

১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৭.০৭% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৭.২০%, বিএনপি ৪৩.৯০%, জামায়াতে ইসলামী ১৭.৩৩%, জাতীয় পাটি ১.২০%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৩৭% ভোট পায়।

২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৮৯.২৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.০৬%, ৪দলীয় জোট ৫৬.৯৫%, জাতীয় পার্টি ৩.০৯%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯০%  ভোট পায়।

২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৯০.৯৬% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৫২.৮৯%, ৪ দলীয় জোট ৩০.৮৮%, স্বতন্ত্র ও অন্যান্য দল ১৬.২৩% ভোট পায়।

মেহেরপুর-১ (সদর-মুজিবনগর) আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য, জেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি ও জনপ্রশাসন প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ থেকে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন।

এ ছাড়া মনোনয়ন চাইবেন সাবেক সংসদ সদস্য প্রফেসর আব্দুল মান্নান, সাবেক সংসদ সদস্য জয়নাল আবেদীন, সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সাবেক জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মিয়াজান আলী, জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারন সম্পাদক অ্যাডভোকেট ইব্রাহীম শাহিন, সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি ও সাবেক জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আলহাজ¦ গোলাম রসুল, সদর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট ইয়ারুল ইসলাম।

বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন মেহেরপুর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য মাসুদ অরুণ এবং পেশাজীবি সংগঠন শিক্ষক কর্মচারী ঐক্যজোটের অতিরিক্ত মহাসচিব জাকির হোসেন।

জাতীয় পার্টি থেকে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন জেলা আহ্বায়ক আব্দুল হামিদ।

তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণে দেখা যায়, মেহেরপুর-১ (সদর ও মুজিবনগর) আসনে ২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ফরহাদ হোসেন সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর এই আসনটিতে ব্যাপক পরিবর্তন আসে। সন্ত্রাসী, অপরাধমূলক কর্মকান্ড, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজিসহ নানা ধরনের অপরাধমূলক কার্যক্রম হ্রাস পেয়েছে। নদী খনন, মুজিবনগর বিশ্ববিদ্যালয় অনুমোদন, মুজিবনগর কমপ্লেক্সের উন্নয়নে ১০০০ কোটি টাকা অর্থ বরাদ্ধ, রেল সংযোগের কার্যক্রম শুরু, স্কুল কলেজের ভবন উন্নয়নের কাজ, রাস্তাঘাটের উন্নয়ন, শতভাগ বিদ্যুৎ সংযোগ, মেহেরপুর জেনারেল হাসপাতালের মান উন্নয়ন, শেখ কামাল আইটি ইনকিউবেশন সেন্টারের নির্মান কাজ করা্‌ জনপ্রশাসন মন্ত্রী ফরহাদ হোসেনের ব্যক্তিগত জনপ্রিয়তা বেড়েছে।

তবে আওয়ামী লীগে চরম অন্ত:কোন্দল রয়েছে। অর্ধডজন নেতা দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। অন্তকোন্দল নেই বিএনপিতে।  যার সুফল পাবে দীর্ঘদিন ক্ষমতার বাইরে থাকা দলটি। জাতীয় পার্টি ও জামায়াতে ইসলামীর সাংগঠনিক তৎপরতা কাগজে কলমে। বিএনপি ও আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক অবস্থা সুদৃঢ়।

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ৭৩তম মেহেরপুর-১ সংসদীয় আসনটিতে আওয়ামী লীগ ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারবে কীনা তা নির্ভর করছে দলীয় কোন্দল নিরসনের ওপর।

বিএনএ/শিরীন সুলতানা, রেহেনা ইয়াসমিন, ওয়াইএইচ

Loading


শিরোনাম বিএনএ