39 C
আবহাওয়া
৬:৪৯ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৫, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ফলসহ সব জিনিসে ফরমালিন! আমরা খাচ্ছি কি?

ফলসহ সব জিনিসে ফরমালিন! আমরা খাচ্ছি কি?

ফলসহ সব জিনিসে ফরমালিন! আমরা খাচ্ছি কি?

বিএনএ ঢাকা : করোনায় সংক্রমন ও মৃত্যু ঠেকাতে টানা ১৪ দিনের লকডাউন দিয়েছে সরকার। আর এই লকডাউন ও রমজান এক সঙ্গে হওয়ায় দিন দিন বাড়ছে ফলসহ নিত্যপূর্ন জিনিসের চাহিদা। আর এই চাহিদাকে পুজি করে ফলসহ সব জিনিসে ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন। এতে করে মৃত্যু ঝুকিতে পড়ছে মানুষ। রাজধানীতে বাজার ছেয়ে গেছে ভেজাল ফলসহ হরেক রকমে জিনিসের সমারহ। দামে সস্তা পেয়ে সেই সব ক্রেতারা কিনছে দেদারসে। যে সব ফলসহ নিত্যপ্রয়োজনে জিনিসের ভেতরে ফরমালিন ব্যবহার করা হচ্ছে সেই ফলসহ জিনিসের ভেতরে দেখা যায় কালো, স্বাদ বা গ্রান কিছু নেই। আবার ভেতরে দেখা যায় বেশি ভাগই পচা। এইসব ফরমালিন যুক্ত খাবার খেলে মৃত্যু ঝুকিতে পড়তে পারে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেন আমরা খাচ্ছি কি? বছরের শুরুতে রা্যবসহ অন্যসংস্হা অভিযান তৎপর থাকলে করোনায় থেমে গেছে অভিযান। খুব একটা দেখা যাচ্ছে না অভিযান। বাজারে রাসায়নিক বিষ মেশানো ফলসহ বিভিন্ন নিত্যপ্রয়োজনিয় জিনিস বেশি দেখা যাচ্ছে।
রাজধানীর কাওরনবাজার, বাদামতলী, সায়েদাবাদ, যাত্রবাড়ি, সোয়ারীঘাট, সদরঘাট, পুরানঢাকা, গাবতলী, বৃহত্ত মিরপুর, উত্তরাসহ বেশ কিছু বাজার ঘুরে দেখা যায়, এবারে আমের উপাদন বেশি, করোনার কারনে চাহিদাও বেড়ে গেছে। এ সব কারনেই বাড়ছে ব্যাপকভাবে ফরমালিনের ব্যবহার। রাসায়নিক বিষ মেশানো ফল খেয়ে মানুষ নানা রকম রোগে আক্রান্ত হওয়া আশঙ্কা রয়েছে।
সদরঘাট এলাকার বাদামতলীর ফল ব্যবসায়ী আব্দুল বাতেন বলেন, ফল সংরক্ষণের জন্য কেমিক্যাল ব্যবহার করা না হলে কিভাবে দিনের পর দিন ভালো থাকবে। শুকনা বা পচা ফল কেউ কিনবে না তাই ফলে ফরমালিন ব্যবহার করা হয়।
সদরঘাট বাদামতলীর আড়তদার কবির হাওলাদার বলেন, কম দামি সয়াবিন বা সরিষা তেল ব্যবহার করে খেজুরকে চকচকে করা হয়। তা না হলে ক্রেতারা কিনতে চায় না। শুধু খেজুর নয়, মৌসুমি ফল কলা, পেঁপে, পেয়ারা, আনারস, আপেল, আঙুর, নাশপাতিসহ দেশি-বিদেশি ফলে মেশানো হচ্ছে কেমিক্যাল। তবে কল বাগানেই কেমিক্যাল মিশিয়ে সরবরাহ করা হয়।
কারওয়ান বাজারের কলার আড়তদার নুর মিয়া বলেন, কলা কাটা থেকে বাজারে আনা পর্যন্ত দেওয়া হয় বিষ। কলাগুলো রাজধানীতে প্রবেশের আগে পাইকাররা আরেক দফা স্প্রে দিয়ে কীটনাশক মেশায়। স্প্রের মাধ্যমে মার্শাল, হিলডন, রাইজার, বাসুডিনসহ আরো অনেক ধরনের ওষুধ ছিটানো হয়। কলা পাকানোর সময় ব্যবহার করা হয় কার্বাইড।
যে ভাবে ব্যবহার হয় কেমিক্যাল: কলা সহ বিভিন্ন ফলে স্বাদে মিস্টি করার জন্য ইনজেকশন বা ঔষধ সুচেঁর মাধ্যমে দিচ্ছে বিভিন্ন কেমিক্যাল। কৃত্রিম রং বাইক্সিন ডাই, রেড ডাই-২ মিস্টি করার জন্য দেয়া হচ্ছে সোডিয়াম সাইক্লোমেট ও স্যাকারিন। আর যারা বিষ মেশাচ্ছে এই সব ফলে তাদের বিষাক্ত উপাদানে মানবদেহে ধীরে ধীরে অকেজো হচ্ছে হার্ট, কিডনি, লিভার, ফুসফুস, ব্লাডার(মুত্রথলি) ক্যান্সার, টিউমার, উচ্চ রক্তচাপ বৃদ্ধি, মহিলাদের ব্রেস্ট ক্যান্সার। ক্যান্সারের মত ভয়াবহ মরণঘাতক রোগ বাসা বাঁধতেছে বিষ। এ ছাড়া স্যাকারিন মিশানো ফল খেলে অস্থিরতা, মাথা ও পেশীতে ব্যাথা অনুভূত হওয়া, হাত-পা কাঁপা, হাঁটা চলার ধরণ পাল্টে যাওয়া, কিডনি নষ্ট হতে পারে।
নেই অভিযান: ফলের মৌসুমে রাজধানী ঢাকায় জোরালো অভিযান চালায়নি তদারকি সংস্থাগুলোর কেউই। বিএসটিআই, কৃষি অধিদপ্তর, খাদ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর, ঢাকা সিটি করপোরেশন কেউই জোরালো অভিযান পরিচালনা করেনি। মাঝে মধ্যে ঝটিতা অভিযান করলেও এখন নিরব ভুমিকায় তারা।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা) পরিচালিত ফরমালিন পরীক্ষার একটি সমীক্ষা থেকে এ চিত্র পাওয়া যায়।
আপেল: ৩৯টি নমুনা আপেলের মধ্যে ২৩টিতে ফরমালিনের উপস্থিতি রয়েছে। আপেলগুলোর মধ্যে ফরমলিনের উপস্থিতি ছিল (০ দশমিক ১০-৬ দশমিক ৪২ পিপিএম)। ফরমালিন মেশানোর হার ৫৮ দশমিক ৯৭ শতাংশ। মালটায় পরিক্ষা করে দেখা গেছে ফরমালিনের পরিমাণ ছিল (০ দশমিক ১৭৩০ দশমিক ০২ পিপিএম)। ফরমালিন মেশানের হার ৬৮ শতাংশ। ৫টি মালটায় ফরমালিন ছিল না। এছাড়া জামরুল, পেয়ারা, আনারস ও লেবুতে ফরমালিনের উপস্থিতি পরীক্ষা করা হয় এবং এ সব ফলেও ফরমালিন পাওয়া যায়।
পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন পবা’র নেতা প্রকৌশলী মো. আব্দুস সোবহান বলেন, বেশির ভাগ ফলেই ব্যবহার করা হচ্ছে ফরমালিন জাতীয় বিষ। এই ভাবে চলতে থাকলে মানুষের মুত্যু ঝুকি বাড়বে। তাই অভিযান অব্যহত রাখতে হবে। না হলে ফলসহ নিত্যপ্রয়োজনিয় জিনিসপত্র বিষ মুক্ত করা সম্ভব নয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাসি বিভাগের শিক্ষক ড. মুনীরউদ্দিন আহমদ বলেন, কেমিক্যালমিশ্রিত ফলে নানা রোগব্যাধি ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি রয়েছে। প্রতি কেজি আপেলে ৬.৩ থেকে ২২.৩ মিলিগ্রাম, কলায় ১৬.৩ মিলিগ্রাম, আঙুরে ২২.৪ মিলিগ্রাম, নাশপাতিতে ৩৮.৭ থেকে ৬০ মিলিগ্রাম ফরমালডিহাইড থাকে। মাত্রাতিরিক্ত ফরমালডিহাইড শরীরের জন্য ক্ষতিকর।
জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আবদুল জব্বার মন্ডল বলেন, অসাধুদের সুযোগ দেয়া হবে না। ফরমালিন শনাক্ত করার বিষয়ে হাইকোর্টের একটি নির্দেশনা রয়েছে। ফরমালিন শনাক্ত করতে পারলেই ব্যবস্হা নিবো। কোনো ছাড় দেওয়া হবে না।
কনজুমার এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান বলেন, ভেজাল ও মেয়াদোত্তীর্ন ফলমুলে ব্যাপকতা নিয়ে বিভিন্ন সময় অভিযোগ উঠেছে। দোকানদার যদি বেশিমুনাফার জন্য ভেজাল ও বিষযুক্ত ফল বিক্রি করে তাদের শাস্তির প্রয়োজন।
সম্প্রতি বাদামতলীতে পচা ও মেয়াদোত্তীর্ণ খেজুর মজুত ও বিক্রির বিরোদ্ধে অভিযান চালায় র্াব। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করছেন রাব সদর দফতরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোঃ আক্তারুজ্জামান।
তিনি বলেন, কোনো অসাধু ব্যবসায়ী যেন পচা ও মানহীন খেজুরসহ অন্যান্য ফলমূল বাজারজাত করতে না পারে সেই জন্য রার্বের অভিযান। এই অভিযান অব্যাহত থাকবে।
র্া বের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, খাবারের নামে বিষ খাওয়াচ্ছেন তাদের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স নীতি নেওয়া হবে। ভেজালের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আরও শক্ত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।
বিএনএনিউজ/আজিজুল হাকিম, জেবি

Loading


শিরোনাম বিএনএ