16 C
আবহাওয়া
১০:০৭ পূর্বাহ্ণ - ডিসেম্বর ২২, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » ঢাবিতে শিবিরের আত্মপ্রকাশে ‘বিব্রত ও বিভক্তি’তে সমন্বয়করা!

ঢাবিতে শিবিরের আত্মপ্রকাশে ‘বিব্রত ও বিভক্তি’তে সমন্বয়করা!


বিএনএ, ঢাকা: বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্য সমন্বয়কদের সঙ্গে এক দফার মিছিলে ডান থেকে তৃতীয়, কালো পাঞ্জাবি পরা এই সমন্বয়কের নাম সাদিক কায়েম। যিনি শেখ হাসিনা সরকার পতন এবং ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন অর্ন্তবতীকালীন সরকার গঠনের দেড় মাসের মাথায় অনেকটা নাটকীয়ভাবে নিজের আসল পরিচয় প্রকাশ করলেন। জানালেন, তিনিই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্র শিবিরের সভাপতি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী সাদিক কায়েম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সকল গুরুত্বপূর্ণ সময়ে সম্মুখ সারিতে ছিলেন।

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রথম সারির এই সমন্বয়কের আসল পরিচয় প্রকাশের পরদিন ২২ সেপ্টেম্বর রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক আব্দুল কাদের ঐতিহাসিক ৯ দফা সম্পর্কে একটি পোস্ট দেন।

ওই স্ট্যাটাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিবিরের সেক্রেটারির প্রসঙ্গ টেনে আনেন তিনি। সেখানে স্ট্যাটাসে প্রসঙ্গ ক্রমে ফরহাদ নামে এক সমন্বয়কের নাম নেন। আর এই সমন্বয়কই ইসলামী ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সেক্রেটারি হিসাবে আত্ম প্রকাশ করেছেন। যার একাডেমিক নাম এস এম ফরহাদ। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের ২০১৭-১৮ সেশনের এবং কবি জসিম উদদীন হলের আবাসিক শিক্ষার্থী। ফরহাদ ২০২২-২৩ সেশনে জসীম উদদীন হল ডিবেটিং ক্লাব ও পার্বত্য চট্টগ্রাম পরিষদের সভাপতি ছিলেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র শিবির সভাপতি সাদিক কায়েম তার পরিচয় প্রকাশের দিন বলেছেন, শিগগির পুরো কমিটি সামনে আনা হবে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সামনে থেকে নেতৃত্বদানকারি দুইজন সমন্বয়ক ছাত্র শিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারির আসল সাংগঠনিক পরিচয় প্রকাশ করার পর দেশ জুড়ে শুরু হয় তুমুল আলোচনা-সমালোচনা।

প্রশ্ন উঠেছে, যারা এতদিন রাজনৈতিক লেজুড় না করার প্রতিশ্রুতি দিয়ে কোটা বিরোধী আন্দোলনকে এক দফার আন্দোলনে নিয়ে গেছেন আসলে তারা কোন এজেন্ডা নিয়ে কোন রাজনৈতিক দলকে ক্ষমতায় আনার জন্য মাঠে নেমেছিলেন?

ছাত্রশিবিরের প্রকাশ্যে আসা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠকে অংশ নেওয়ার ঘটনায় ইতোমধ্যেই নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি’র ছাত্র সংগঠন জাতীয়তাবাদী ছাত্রদলসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সক্রিয় অন্য রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনগুলো।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের সভাপতি ও সেক্রেটারিকে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চিনতেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের একজন সক্রিয় নেতা হিসেবে। ফলে তাদের নেতৃত্ব মেনে যারা মাঠে আন্দোলন করেছেন, তাদের অনেকেই এখন “প্রতারিত” বোধ করছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সভাপতি সাদিক কায়েম বলছেন, পরিস্থিতির কারণেই এতদিন তিনি নিজের রাজনৈতিক পরিচয় গোপন রাখতে বাধ্য হয়েছেন।

তবে ছাত্র শিবিরের প্রকাশ্যে আসা নিয়ে নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে বিএনপি’র সহযোগী ছাত্র সংগঠন ছাত্রদলসহ বিভিন্ন ছাত্র সংগঠন। ছাত্রদলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যায় শাখার সাধারণ সম্পাদক নাহিদুজ্জামান শিপন জানিয়েছে “ক্যাম্পাসের সবাই মিলে যে সিদ্ধান্তটি নেওয়া হয়েছিল, সেটি এখনও অপরিবর্তত রয়েছে।

ইসলামী ছাত্র শিবিরকে মত বিনিময় শাখায় আমন্ত্রণ জানিয়ে বিপাকে পড়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য। মার্ক্সবাদী সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সাংগঠনিক সম্পাদক মোজাম্মেল হক বলেছেন, মতবিনিময় সভায় ইসলামী ছাত্র শিবিরকে দেখে “প্রতিবাদ জানানোর সঙ্গে সঙ্গে আমরা উপাচার্যকে এই প্রশ্নও করেছি যে, আমরা কেউ যেখানে ক্যাম্পাসে শিবির নেতাদের চিনি না, সেখানে আপনি চিনলেন কীভাবে? এই প্রশ্নের উত্তর দেয়নি নব নিযুক্ত উপাচার্য।

প্রকাশ্যে কার্যক্রম না চালালেও ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের সাংগঠনিক কার্যক্রম থেমে ছিল না বলে জানিয়েছেন ছাত্রশিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিবির সভাপতি আবু সাদিক কায়েম। তিনি বলেছেন “আমরা আগে থেকেই ছিলাম। “শেখ হাসিনা ক্ষমতায় থাকা অবস্থায় ছাত্রলীগ ক্যাম্পাসে আমাদের নেতাকর্মীদের উপর নির্যাতন চালিয়ে যেভাবে ভয়ের সংস্কৃতি গড়ে তুলেছিলো, সেটির কারণেই আমরা এতদিন প্রকাশ্যে আসতে পারিনি বলেন সম্প্রতি আত্মপ্রকাশ করা শিবির সভাপতি।

২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে ভর্তি হওয়া কায়েম সম্প্রতি রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ থেকে মাস্টার্স সম্পন্ন করেছেন। গত পাঁচবছর তিনি হলে থেকেই পড়াশোনা করেছেন, গোপনে চালিয়েছেন সাংগঠনিক কার্যক্রমও। কোটা সংস্কার আন্দোলন শুরুর আগে খাগড়াছড়ির বাসিন্দা সাদিক কায়েমকে ক্যাম্পাসে অনেকে চিনতেন পার্বত্য চট্টগ্রাম ছাত্র সংসদের সাবেক সভাপতি এবং হিল সোসাইটির প্রতিষ্ঠাতা হিসেবে। তবে তিনি স্কুলজীবন থেকেই ছাত্রশিবিরের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন বলে নিজেই জানিয়েছেন। এরপর চলতি বছরের শুরুতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতির দায়িত্ব পান।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যম্পাসে ছাত্রশিবিরের আত্ম প্রকাশের পর থেকে বেশ ‘অস্বস্তি ও বিব্রতকর পরিস্থিতিতে রয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতারা। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক আরিফ সোহেল বলেছেন, ছাত্র শিবিরের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সভাপতি ও সেক্রেটারি রাজনৈতিক পরিচয় সম্পর্কে আমার কোনো ধারণা ছিল না।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ১৯৮৯ সালে হামলায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একজন ছাত্রদল নেতা নিহত হন, যেটার জন্য ছাত্রশিবিরকে দায়ী করা হয়। ওই ঘটনার জেরে পরবর্তীতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রশিবিরের কার্যক্রম নিষিদ্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এরপর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও একইপথে হাঁটে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শিবিরের রাজনীতি বন্ধ করা হলেও তারা যে রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠন, সেই জামায়াতে ইসলামীর সঙ্গে পরবর্তীতে আওয়ামী লীগ এবং বিএনপি- উভয় রাজনৈতিক দলকে একসাথে আন্দোলন করতে দেখা গেছে। এমনকী ২০০১ সালে বিএনপির নেতৃত্বাধীন জোটের শরিক হয়ে মন্ত্রীও হতে দেখা গিয়েছিল জামায়াত নেতাদের। তখনও ক্যাম্পাসটিতে ছাত্রশিবিরের নেতাকর্মীরা প্রভাব বিস্তার করতে পারেনি।

আওয়ামী লীগের গত দেড় দশকের শাসনামলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ছাত্রশিবিরের রাজনীতির বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে ছিল ছাত্রলীগ। কিন্তু গণ-আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনা ক্ষমতার্চ্যুত হওয়ার পর ছাত্রসংগঠনটির নেতাকর্মীরা নিজেরাই এখন ‘আত্মগোপনে’ চলে গেছে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশের সাম্প্রতিক গণ-আন্দোলনে নেতৃত্ব দানকারী বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটি সাধারণ মানুষের কাছে পরিচিতি পেয়েছিল একটি অরাজনৈতিক ছাত্রসংগঠন হিসেবে। গত জুলাইয়ে আত্মপ্রকাশের সময় প্ল্যাটফর্মটি নিজেও একই দাবি করেছিল। সাধারণ শিক্ষার্থীরা প্রতিক্রিয়ায় বলেছেন, “যত দিন যাচ্ছে, ততই অবাক হচ্ছেন, সমন্বয়কদের রাজনৈতিক পরিচয় প্রকাশের পর সামনে আরও কত কী দেখতে হবে!

বিএনএনিউজ/ শামীমা চৌধুরী শাম্মী/ বিএম

Loading


শিরোনাম বিএনএ