বিএনএ, সাভার: ঢাকার ধামরাইয়ে মাদক তল্লাশির নামে একটি বাড়িতে ঢুকে এক পরিবারের শয়নকক্ষে ভাংচুর করার অভিযোগ উঠেছে পুলিশের বিরুদ্ধে। শনিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) রাত চারটার দিকে উপজেলার সূতিপাড়া ইউনিয়নের বাথুলি এলাকায় সুমন নামে এক ব্যক্তির বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
পরিবারটির অভিযোগ, ধামরাই থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) রাসেল ফকিরসহ ৩-৪ জন পুলিশ সদস্য এ ভাংচুর করেন।
স্থানীয় ও পারিবারিক সূত্রে জানা যায়, রাত চারটার দিকে সূতিপাড়া ইউনিয়নের বাথুলি এলাকায় সুমনের বাড়িতে পুলিশ আসে। পুলিশ এসে ওই পরিবারের সাথে অস্বাভাবিক আচরণ করেন। দীর্ঘসময় তল্লাশি করেও কিছু পায়নি। এসময় ঘরের ভিতরে বাচ্চাদের খেলনাসহ বিভিন্ন আসবাবপত্র ভাঙচুর করেন। এসময় এসআই রাসেল ফকিরের ক্ষুধা লেগেছে বলে জানান। তখন নিকটস্থ বাথুলি বাজার থেকে খাবার এনে দেন ভুক্তভোগী পরিবার। পরে সিগারেট খেতে চাইলে তাকে ২০টা সিগারেট এনে দেওয়া হয়। সবগুলো সিগারেট খেয়ে শেষ করেন তিনি। একপর্যায়ে ২লাখ টাকা দাবি করেন ওই পরিবারের কাছে। টাকা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে পুলিশ জানান টাকা না দিলে আধা ঘণ্টা পর পর এক লাখ করে বাড়বে। একপর্যায়ে ১২ লাখ টাকা পর্যন্ত দাবি করেন এসআই রাসেল ফকির। টাকা না দেওয়ায় সুমনকে থানায় নিয়ে যায়।
সুমনের স্ত্রী রৌশনারা বেগম বলেন, ভোর চারটার সময় রাসেল দারোগা আমাদের বাড়িতে আসে। তারপর তারা ঘরের ভেতরে ঢুকে বলে আমরা যদি কিছু না পাই তাহলে আসামি ধরব না। তারা কসমও খাইছে যে কিছু না পাইলে তারা আসামি ধরবে না। পরে তারা সুমনকে হ্যান্ডক্যাপ পড়িয়েছে। ওকে ঘরে বসিয়ে রেখে প্রায় তিন থেকে চার ঘণ্টা ঘর সার্চ করে কিছু পায় নাই। পরে তারা টাকা দাবি করেছে। প্রথমে ফোনে একটা ছবি ওঠিয়েছে দুই লাখের। আমরা বলেছি বুঝি নাই। পরে ৫ লিখেছে। আমরা তারপরও বুঝি নাই। পরে বলছে টাকা দেন ৭ লাখ। রাসেল দারোগা পরে বলে ৮ লাখ দেন। এইভাবে টাকা বাড়াইতে বাড়াইতে ১২ লাখ টাকা চাইছে। পরে এই ভাবে আমাদের হয়রানি করতে থাকে। তারা সার্চ করে কিছু না পেয়েও আমাদেরকে এভাবে হয়রানি করতে থাকে। পরে তারা আমাদেরকে বলে গত রাতে এক জায়গায় গেছিলাম সেখানে আমাদেরকে ৫০ হাজার টাকা দিছে। যাওয়া মাত্রই টাকা দিয়ে দিছে। পরে আমরা বলছি আমাদের চাল কেনার টাকা নাই আপনাদেরকে কিভাবে টাকা দিব।
সুমনের স্ত্রী আরও বলেন, রাসেল পুলিশ বলে যে, টাকা না দিলে মহিলা পুলিশকে ফোন করে আমাদের ফ্যামিলিসহ ধরে নিয়ে যাওয়ার হুমকি দেয়। পরে আমি বলছি আমরা কোন অপরাধ করি নাই আমাদের কে ধরবেন কেন। পুলিশ বলে আপনারা এখনো বড় গলায় কথা বলেন। পরে কি মনে করে শুধু সুমনকে ধরে নিয়ে গেছে আমাদেরকে নেয় নাই। যাওয়ার সময় স্বর্ণালংকার যা যা পাইছে সবগুলো নিয়ে গেছে রাসেল দারোগা।
সুমনের মা সুরাইয়া বলেন, ফজরের আজানের সময় হয়েছে। দরজা খুলে আমি ওযু করতে যামু তখন পুলিশ আইসা লাইট জ্বলাইছে। তারা আইসা বলে, দরজা খোলেন। সুমন কোথায়? তখন আমি বলছি না আমি দরজা খুলতে পারব না। পরে তারা দরজা খোলবেন না বলেই দরজায় লাথি দিয়ে ঘরে ঢুকে। পুলিশরা বলে আল্লাহর কসম ওরে আমরা ধরব না। শুধু সার্চ করে আমরা চলে যাব। পরে পুলিশরা তন্ন তন্ন করে আমাদের ঘর সার্চ করে আমার নাতির ছোট একটা খেলনা পায় সেটাকে একদম ভেঙে চুরমার করে। পরে পুলিশ অন্য ঘরে যেয়ে সার্চ করে। কাপড় চোপড় দেখে বলে এগুলো চুরি করা কাপড়। সে ঘর তন্ন তন্ন করে সার্চ করে স্বর্ণালংকার দেখে বলে যে এগুলো সব চোরাই জিনিস। যখন বার বার চুরির অপবাদ দিচ্ছিল তখন আমার বড় ছেলে একটু রেগে যায়৷ রেগে গিয়ে বলে যে আপনারা একটা অপবাদ দিয়ে আসছেন। সেইটার তদন্ত করেন৷ চুরির অপবাদ দিবেন না৷ তারপর আমাদের স্থানীয় মেম্বার সহ সবাই পুলিশদেরকে বলে যে সে আগে এগুলো (মাদক) সেবন করত। কিন্তু জেল থেকে আসার পর তার হার্টে, ফুসফুসে দাগ ধরা পড়ছে। সে এখন এগুলো খায় না একদম ভাল হয়ে গেছে। সে এখন হার্টের রোগী। পরে পুলিশরা বিভিন্ন অংকের টাকা দাবি করে। দুই লাখ, পাঁচ লাখ, আট লাখ সহ বিভিন্ন অংকের টাকা দাবি করে আর এর মধ্যে তারা সমস্ত স্বর্ণালংকার নিয়ে চলে যায়।
সূতিপাড়া ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য লাবনী আক্তার জানান, আজকে আমাদের বাথুলী গ্রামে একটা ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটেছে একটি বাড়িতে। এটা সত্যিই খুবই অমানবিক এবং ন্যাক্কারজনক একটি ঘটনা। পুলিশ তাদের বাড়িতে যেয়ে সমস্ত আসবাবপত্র খেলনাসহ যা যা কিছু সামনে পেয়েছে সবকিছুই তারা সার্চ করার নামে তছনছ করে দিয়েছে। এভাবে তল্লাশি করার নাম করে মানুষের বাড়িতে হয়রানির তীব্র নিন্দা জানাই। একজন দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা রাসেল দারোগা আসামির বাড়িতে অভিযান পরিচালনার সময় দায়িত্বরত অবস্থায় কিভাবে আসামির ঘরের বেডে শুয়ে থাকে এবং নাস্তাও করে এটা আমার প্রশ্ন। আমি এই ঘটনার একটি সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করছি।
ধামরাই থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) হারুন অর রশীদ বলেন, এ কথাটা ওরা আমাকে জানাইছে। ওরা আসতেছে। ঘটনা সত্য কিনা মিথ্যা এটাতো জানি না। সুমনের বিরুদ্ধে একাধিক মামলা আছে। তাকে ১টার দিকে থানায় নিয়ে আসছে।
তিনি জানান, এগুলোর কোন সত্যতা নাই।
মাদক খুঁজতে গিয়ে ঘরের আসবাবপত্র ভাংচুর ও স্বর্ণালংকার লুটের বিষয়ে জানতে চাইলে ওসি অপারেশন নির্মল কুমার দাস বলেন, এগুলো বলার দরকার নেই।
বিএনএ/ইমরান, এমএফ/ হাসনাহেনা