বিএনএ, টাঙ্গাইল: বাংলাদেশের স্বাধীনতা পূর্ব প্রাচীন ও সমৃদ্ধ জেলাগুলোর একটা। আয়তনের দিক থেকে ঢাকা বিভাগের বৃহত্তম এবং জনসংখ্যার দিক থেকে দ্বিতীয় বৃহত্তম( প্রায় ৪০ লাখ )জেলা । জেলা শহরের প্রাণকেন্দ্রে অবস্থিত ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের পাশাপাশি একই ক্যাম্পাসে অবস্থিত শেখ হাসিনা মেডিকেল কলেজেও চিকিৎসা সেবা দান কার্যক্রম শুরু হয়েছে। জেলার ১২ টি উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিনই এখানে চিকিৎসা সেবা নিতে আসেন হাজার হাজার মুমূর্ষু রোগী ও তাদের স্বজনরা।
সরকারি এই হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজকে ঘিরে টাঙ্গাইল শহর জুড়ে ব্যাঙের ছাতার মত গড়ে উঠেছে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার। গ্রাম থেকে আসা সহজ- সরল মানুষগুলোর সাথে পরীক্ষা-নিরীক্ষার নামে প্রতিনিয়ত প্রতারণা করছে এসব নাম সর্বস্ব ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারগুলো।
কমিশন এবং বেতনভুক্ত দালাল নিয়োগ দিয়ে তারা নানা প্রলোভনে রোগীদের নিয়ে আসছে তাদের ক্লিনিক বা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে । টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতাল ও মেডিকেল কলেজে সরজমিনের গিয়ে দেখা যায়- দুই পাশের প্রবেশ পথ, জরুরী বিভাগসহ হাসপাতালের বিভিন্ন অংশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে ওত পেতে ঘোরাঘুরি করছে দালালরা। বিভিন্ন অংশে জটলা করছে বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির মার্কেটিং প্রতিনিধিরা। জরুরী বিভাগসহ হাসপাতালের প্রায় সব কয়টি ইউনিটের সামনেই তাদের অবস্থান। এমনকি ডাক্তারের চেম্বারে ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি এবং রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দালালদের কথা বলতেও দেখা যায়। রোগীরা ডাক্তারের রুম থেকে বের হওয়া মাত্রই আশেপাশের ওষুধের দোকানদার বা ওষুধ কোম্পানির লোকজন প্রেসক্রিপশন নিয়ে কাড়াকাড়ি শুরু করে। রোগীর অনুমতি না নিয়েই সমানে প্রেসক্রিপশন এর ছবি তুলতে থাকে তারা। এতে রোগী ও তাদের স্বজনরা সংকোচ বা বিব্রত বোধ করলেও যেন তাদের কিছুই আসে যায় না। আবার ডাক্তার রোগীকে কোন রোগের জন্য পরীক্ষা- নিরীক্ষা করতে লিখে দিলেই চেপে ধরে ক্লিনিক ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালালরা।
রোগীদের বা তাদের স্বজনদের হাতে কাগজ ধরিয়ে দিয়ে তারা তাদের ক্লিনিকে বা ডায়গনস্টিক সেন্টারে আসতে বলে। না যেতে চাইলে জোরজবরদস্তি বা হুমকি দেয়ার অভিযোগও পাওয়া গেছে। কোন কোন দালাল আবার গ্রাম থেকে আসা নিরক্ষর মানুষগুলোকে ভুলভাল বুঝিয়ে হাসপাতালের ভেতর পর্যন্ত আসতেই দেয় না। বাইরে থেকেই রোগীদের তাদের নিয়োগকৃত ক্লিনিকে নিয়ে যায় ।
টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে প্রেগনেন্সির সমস্যা নিয়ে আসা জনৈক রোগীর স্বামী ফরিদুল ইসলাম বলেন- এখানে আসার পর থেকেই দালালরা খুব বিরক্ত করছে। বারবার বলছে, হাসপাতালে ভালো ডাক্তার নাই। চিকিৎসা নাই।
শহরের আদালত পাড়া থেকে আসা শোয়েব আহমেদ বলেন- শরীর ব্যথার জন্য আব্বাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলাম। ডাক্তার কিছু ওষুধ লিখে প্রেসক্রিপশন করে দেয়ার পর থেকেই ওষুধ কোম্পানির লোকজন আর আশেপাশের ওষুধের দোকানদাররা খুব বিরক্ত করছে।
রিক্তা সাহা নামে একজন রোগী বলেন- আমি এখানে হাতের ফ্রেকচার নিয়ে এসেছি। কিন্তু নার্স বলছে- এখানে এখন পরীক্ষা নিরীক্ষা সম্ভব না। সে একজন দালালকে দেখিয়ে প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা করে নিয়ে আসতে বলছে।
ছোট ভাইকে নিয়ে চিকিৎসা সেবা নিতে আসা জুনায়েদ ইসলাম বলেন- ছোট ভাইকে ডাক্তার দেখিয়ে রুমের বাইরে আসা মাত্রই নামি- বেনামী ক্লিনিক এর দালালরা হাজির হতে থাকে। তারা একেকজন একেক রকমের অফারের কথা বলছে।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে হাসপাতালের দায়িত্বপ্রাপ্ত কেউ ক্যামেরার সামনে কথা বলতে রাজি হয়নি। তবে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন কর্মকর্তা বলেন- হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সমন্বয়ে মাঝে মাঝেই অভিযান চালায়।তবে দালাল ও মেডিকেল রিপ্রেজেন্টিভদের পুরোপুরি দমন করা সম্ভব হচ্ছে না ।এ বিষয়ে মাননীয় জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার এবং টাঙ্গাইল জেলা সিভিল সার্জন মহোদয়ের সজাগ দৃষ্টি আছে । আশা করি শীঘ্রই ভাল একটা রেজাল্ট পাওয়া যাবে।
বিএনএ/ লুৎফর রহমান উজ্জ্বল, ওজি