বিএনএ, ঢাকা: বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে ধারাবাহিক নির্বাচনী হালচাল প্রচার করছে। এতে ১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত পঞ্চম জাতীয় সংসদ থেকে ২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ সংসদ নির্বাচনের ভিত্তিতে রাজনৈতিক দলগুলোর আসনভিত্তিক সাংগঠনিক হালচাল তুলে ধরার চেষ্টা করে যাচ্ছে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ডটকম। আজ থাকছে ঢাকা-৯ আসনের হালচাল।
ঢাকা-৯ আসন
ঢাকা-৯ সংসদীয় আসনটি ঢাকা দক্ষিন সিটি কর্পোরেশনের ১,২,৩,৪,৫,৬,৭,৭১,৭২,৭৩,৭৪ ও ৭৫ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত। এই আসনটি খিলগাঁও, সবুজবাগ,মুগদা নামে পরিচিত । এটি জাতীয় সংসদের ১৮২ তম আসন।
পঞ্চম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিজয়ী হন
১৯৯১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি পঞ্চম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এই আসনে ভোটার ছিলেন ১ লাখ ৮৪ হাজার ৩ শত ৫০ জন। ভোট প্রদান করেন ৯২ হাজার ৭ শত জন। নির্বাচনে বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৫৫ হাজার ৯ শত ৪৬ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের সাজেদা চৌধুরী। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২৯ হাজার ৪ শত ৬৪ ভোট।
ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: বিএনপির খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়
১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারি ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের দাবিতে আওয়ামী লীগসহ সব বিরোধী দল এই নির্বাচন শুধু বর্জন করে ক্ষান্ত হয়নি,প্রতিহতও করে। নির্বাচনে বিএনপি,ফ্রিডম পার্টি এবং কিছু নামসর্বস্ব রাজনৈতিক দল, অখ্যাত ব্যক্তি প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন। এই নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। ষষ্ঠ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে গঠিত এই সংসদের মেয়াদ ছিল মাত্র ১১ দিন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার বিল পাশ হওয়ার পর এই সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।
সপ্তম সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন বিজয়ী হন
১৯৯৬ সালের ১২ জুন সপ্তম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ২ লাখ ৮৫ হাজার ৬ শত ৫৭ জন। ভোট প্রদান করেন ১ লাখ ৯০ হাজার ১১ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৪ হাজার ১ শত ৫০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির মীর শওকত আলী। ধানের শীষ তিনি পান ৭৫ হাজার ৮ শত ৫৫ ভোট।
অষ্টম সংসদ নির্বাচন: বিএনপির খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন
২০০১ সালের পহেলা অক্টোবর অষ্টম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৯৩ হাজার ৫ শত ২৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ২১ হাজার ৬ শত ৫১ জন। নির্বাচনে বিএনপির খন্দকার মাহবুব উদ্দিন আহমেদ বিজয়ী হন। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ২৬ হাজার ৯ শত ৮৫ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন আওয়ামী লীগের মকবুল হোসেন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ৮৬ হাজার ৯ শত ৮ ভোট।
নবম সংসদ নির্বাচন: আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হন
২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর নবম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৩ লাখ ৫৬ হাজার ২ শত ৬১ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৮২ হাজার ৫শত ৫৬ জন। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হন। নৌকা প্রতীকে তিনি পান ১ লাখ ৭৮ হাজার ৯ শত ৫৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির শিরীন সুলতানা। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান ৯২ হাজার ৩ শত ২৩ ভোট।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে সাবের হোসেন চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে সাবের হোসেন চৌধুরী বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় বিজয়ী হন। তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে র্নিবাচনের দাবিতে বিএনপি নেতৃত্বাধীন ২০ দলীয় জোট এই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করেনি।
একাদশ সংসদ নির্বাচন: নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হন
২০১৮ সালের ৩০ ডিসেম্বর একাদশ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। নির্বাচনে ভোটার ছিলেন ৪ লাখ ২৫ হাজার ৪ শত ৯৪ জন। ভোট প্রদান করেন ২ লাখ ৯২ হাজার ২ শত ৬৯ জন।
নির্বাচনে প্রার্থী ছিলেন ৭ জন। নৌকা প্রতীকে আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী , ধানের শীষ প্রতীকে বিএনপির আফরোজা আব্বাস, আম প্রতীকে ন্যাশনাল পিপলস্ পার্টির মাহফুজা আক্তার, হাতপাখা প্রতীকে ইসলামী আন্দোলনের মোহাম্মদ মানিক মিয়া, টেলিভিশন প্রতীকে বিএনএফ এর শফি উল্লাহ চৌধুরী, হারিকেন প্রতীকে মুসলিম লীগের আব্দুল মোতালেব, গোলাফ ফুল প্রতীকে জাকের পার্টির হুমায়ন কবীর প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেন।
নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সাবের হোসেন চৌধুরী বিজয়ী হন । নৌকা প্রতীকে তিনি পান ২ লাখ ২৪ হাজার ২ শত ৩০ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন বিএনপির আফরোজা আব্বাস। ধানের শীষ প্রতীকে তিনি পান মাত্র ৫৯ হাজার ১ শত ৬৫ ভোট। কারচুপির অভিযোগে বিএনপি নেতৃত্বাধীন জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট নির্বাচন বর্জন ও ফলাফল প্রত্যাখান করে।
পর্যবেক্ষণে দেখা যায়, পঞ্চম, ষষ্ঠ, অষ্টম, সংসদে বিএনপি, সপ্তম, নবম, দশম ও একাদশ সংসদে আওয়ামী লীগ বিজয়ী হয়।
দৈবচয়ন পদ্ধতিতে জরিপ
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর এর গবেষণা টিম দৈবচয়ন পদ্ধতিতে সারাদেশে জরিপ চালায়। জরিপে অংশগ্রহণকারি বেশীরভাগ ভোটার ১৯৯১ সালের পঞ্চম, ১৯৯৬ সালের সপ্তম, ২০০১ সালের অষ্টম ও ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরেপক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হয়েছে বলে অভিমত ব্যক্ত করেন। তারই ভিত্তিতে বিএনএ নিউজ টুয়েন্টি ফোর ঢাকা-৯ আসনে পঞ্চম, সপ্তম, অষ্টম ও নবম এই ৪টি নির্বাচনের প্রদত্ত ভোটের পরিসংখ্যানকে মানদন্ড ধরে আওয়ামী লীগ,বিএনপি, জাতীয় পার্টি ও জামায়াত ইসলামীর সাংগঠনিক শক্তি বিশ্লেষণের মাধ্যমে একটি কল্পানুমান উপস্থাপনের চেষ্টা করেছে।
অনুসন্ধানে দেখা যায়, ঢাকা-৯ সংসদীয় আসনে ১৯৯১ সালের পঞ্চম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫০.২৮% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩১.৭৮%, বিএনপি ৬০.৩৫%, জাতীয় পাটি ১.৯৭% জামায়াত ইসলামী ২.৭০ %স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.২০%ভোট পায়।
১৯৯৬ সালের সপ্তম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৬৬.৫২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৪৪.২৯%, বিএনপি ৩৯.৯২% জাতীয় পাটি ৪.৬০%, জামায়াত ইসলামী ২.৯৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৮.২৩%ভোট পায়।
২০০১ সালের অষ্টম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৫৬.৩২ % ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে আওয়ামী লীগ ৩৯.২১%, ৪ দলীয় জোট ৫৭.২৯%, জাতীয় পার্টি ২.৫৪ % স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ০.৯৬% ভোট পায়।
২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে ভোট প্রদান করেন ৭৯.০২% ভোটার। প্রদত্ত ভোটের মধ্যে ১৪ দলীয় জোট ৬৩.৮৫%, ৪ দলীয় জোট ৩২.৭৬% স্বতন্ত্র ও অন্যান্য ৩.৩৯% ভোট পায়।
ঢাকা-৯ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য সাবেক মন্ত্রী, ইন্টার-পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তিনি আবারও মনোনয়ন চাইবেন। তিনি আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী।
বিএনপি থেকে মনোনয়ন চাইবেন জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস এবং বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও ঢাকা দক্ষিন বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক হাবিবুর রশীদ হাবিব।
তথ্য উপাত্ত বিশ্লেষণে জানা যায়, টানা তৃতীয়বারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন সাবের হোসেন চৌধুরী। ১৪ বছরের বেশি সময় তার হাত ধরেই সংসদীয় আসনটির বিভিন্ন উন্নয়ন কাজ সাধিত হয়েছে। শিক্ষা-প্রতিষ্ঠান, সড়ক-অবকাঠামো থেকে শুরু করে সব পর্যায়ে উন্নয়ন কাজ করেছেন তিনি।
আসনটিতে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের সভাপতি আফরোজা আব্বাস। তাকে ঘিরেই নানা ছক কষছেন স্থানীয় বিএনপির নেতাকর্মীরা। বিএনপি যতই ছক কষুক, এই আসনে আওয়ামী লীগের ক্লিন ইমেজের প্রার্থী সাবের হোসেন চৌধুরীর পাল্লাই ভারি।
দ্বাদশ সংসদ নির্বাচন সুষ্ঠু নিরপেক্ষ ও অংশগ্রহণমূলক হলে জাতীয় সংসদের ১৮২তম সংসদীয় আসন (ঢাকা-৯) আসনটিতে আওয়ামী লীগই বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা বেশি বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা।
বিএনএ/ শাম্মী, রেহানা, ওজি, ওয়াইএইচ
আরও পড়ুন : দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনের হালচাল: সংসদীয় আসন-১৮১ (ঢাকা-৮)