বিএনএ, রাবি: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ‘ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন দিবস’ শীর্ষক আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। বুধবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহীর মোহনপুর-পবা আসনের সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন।
তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে ২০০৭ সালের ২০ আগস্ট ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের একটি ঘটনাকে কেন্দ্র করে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ দেশের বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের সাথে সেনা সদস্যদের সংঘর্ষ হয়।
ঢাবিতে ছাত্র নির্যাতনের প্রতিবাদ জানানো হয় রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও। সেসময় সেনাবাহিনী ও পুলিশের দ্বারা বিশ্ববিদ্যালয়ের বেশ কয়েকজন ছাত্র ও শিক্ষক নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন।
বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. গোলাম সাব্বির সাত্তারের সভাপতিত্বে এই আলোচনা সভায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন রাজশাহী-৩ (পবা-মোহনপুর) আসনের মাননীয় সংসদ সদস্য মো. আয়েন উদ্দিন এমপি। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন উপ-উপাচার্য প্রফেসর মো. সুলতান-উল-ইসলাম ও কোষাধ্যক্ষ প্রফেসর (অব.) মো. অবায়দুর রহমান প্রামানিক। সেখানে নির্যাতিত শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে প্রফেসর মলয় ভৌমিক (ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ), প্রফেসর দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস ও প্রফেসর আব্দুল্লাহ আল-মামুন (গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা), ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন (প্রাণরসায়ন ও অনুপ্রাণবিজ্ঞান), মো. সাদেকুল ইসলাম (উপ-প্রধান তথ্য অফিসার) প্রমুখ স্মৃতিচারণ করেন। সভার শুরুতে ১৯৭৫ সালের আগস্টে নিহত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়।
উপাচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, ২০০৭ সালের আগস্টে সেনা সমর্থিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা প্রতিবাদমুখর হয়ে ওঠে। তারা নৈতিক কারণেই এর বিরুদ্ধে ক্যাম্পাসে মৌন মিছিলসহ প্রতিবাদী সমাবেশ করে। বিশ্ববিদ্যালয়সমাজ সবসময়েই নৈতিক ও বিবেকবোধের দৃষ্টিকোণ থেকেই সব অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে এবং অবশেষে তারাই জয়ী হয়েছে। আগামীতেও সকল ন্যায় সঙ্গত আন্দোলন সংগ্রামে বিশ্ববিদ্যালয় সমাজের এই গৌরবময় ধারা অক্ষুণ্ন থাকবে।
অধ্যাপক দুলাল চন্দ্র বিশ্বাস তাঁর বক্তব্যে সেই নিপীড়ন ও হয়রানির নিন্দা জানান। তিনি বলেন, হয়রানিমূলক মামলার মাধ্যমে প্রতিবাদী কণ্ঠকে স্তব্ধ করার যে চক্রান্ত করা হয় তা ব্যর্থ হয়ে সত্য প্রতিষ্ঠিত হয়। দিবসটি যাতে নিয়মিত পালন করা হয় তার জন্যও কর্তৃপক্ষের প্রতি তিনি আহ্বানন জানান। এছাড়াও নির্যাতনের সঠিক তদন্তের জন্য নিরপেক্ষ তদন্ত কমিশনের প্রস্তাব করেন তিনি।
অধ্যাপক আব্দুল্লাহ আল মামুন বলেন, সেদিনের সেই সম্মিলিত প্রতিবাদের ধারাবাহিকতায় ক্ষমতাসীন গোষ্ঠী পিছু হটতে বাধ্য হয়েছিল। ফলে দেশে গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠা লাভ করে।
সাংসদ আয়েন উদ্দীন বলেন, এদেশের ছাত্র সমাজ সবসময় অন্যায়-অবিচারের বিরুদ্ধে প্রতিবাদী হয়েছে। রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাজ দেশের সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলন সংগ্রামে অংশ নিয়ে এসেছে। ২০০৭ সালের আগস্টে অগণতান্ত্রিক সরকারের দমন-পীড়নমূলক কর্মকাণ্ডের বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়ে আবারও তাদের দায়িত্ববোধের পরিচয় দিয়েছে।
আলোচনাকালে প্রফেসর মলয় কুমার ভৌমিক বলেন, ২০০৭ সালের আগস্টে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা যে প্রতিবাদে ফেটে পড়ে তা তাঁদের মূল্যবোধ ও সামাজিক দায়িত্বের চেতনা থেকেই করেন। জাতির ক্লান্তিকালে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সমাজ এক ঐতিহাসিক দায়িত্ব পালন করেছে।
প্রসঙ্গত, ছাত্রদের উস্কে দেওয়ার অভিযোগে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ৮ জন শিক্ষক ও ১ জন কর্মকর্তাকে গ্রেফতার করা হয়। এছাড়া, টানা দুই দিন শিক্ষার্থীদের সাথে পুলিশের সংঘর্ষে শতাধিক আহত হন। সেই সময় থেকেই প্রতিবছর দিনটিকে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘ছাত্র-শিক্ষক নির্যাতন’ দিবস হিসেবে পালিত হয়ে থাকে।
বিএনএ/সাকিব, এমএফ