বিএনএ বিশ্ব ডেস্ক, ঢাকা: আমেরিকার সেন্ট্রাল ইনভেস্টিগেশন এজেন্সির (সিআইএ) উচ্চপদের দায়িত্বে নিযুক্ত ছিলেন তিনি। ওই সংস্থা দক্ষিণ-মধ্য এশিয়ায় বিভিন্ন বিষয়ের দেখভালের দায়িত্বও তার ওপরই ন্যস্ত করেছিলো। জীবনের বেশির ভাগ সময় কাটিয়েছেন আফগানিস্তান, পাকিস্তান এবং ইরানের মতো দেশে। একটুও প্রাণ হারানোর ভয় করেননি তিনি। সময়েই আফগানিস্তানের তালেবান নেতাদের কাছাকাছিও এসেছিলেন তিনি। কাজকর্মের জন্য পরিচিত হয়ে উঠেছিলেন ‘লেডি তালেবান’ নামে।
তালেবানে কখনও কোনো নারী নাম লিখিয়েছে, এমনটা শুনেছেন বা স্বপ্নেও ভেবেনি কেউ। তিনিই একমাত্র নারী, যার নামে সঙ্গে ‘তালেবান’ শব্দটি যোগ হয়েছিলো। ওই নারীর পুরো নাম রবিন রাফেল।
রবিন থেকে ‘লেডি তালেবান’ হয়ে ওঠার গল্পটা অবশ্য একটু বিভিন্ন। তালেবানের মতো কট্টরপন্থি মানসিকতার মানুষ ছিলেন না তিনি। তালেবান নেতাদের মতো নৃশংসও ছিলেন না। তা সত্ত্বেও তিনি ছিলেন ‘লেডি তালেবান’।
রবিনের জন্ম ১৯৪৭ সালে ওয়াশিংটনে। মেধাবী রবিন ইতিহাস এবং অর্থনীতিতে পড়েছেন। কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক এবং পরে মেরিল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপরই সিআইএর অ্যানালিস্ট হিসেবে তাকে নিয়োগ দেন আমেরিকার তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বিল ক্লিন্টন। পেশাগত কারণেই তিনি অনেকটা সময় আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানে কাটিয়েছেন। এক সময় দিল্লিতে আমেরিকার দূতাবাসে রাজনৈতিক কাউন্সিলর হিসেবেও কাজ করেছিলেন।
১৯৯৬ সালে তখন আফগানিস্তানে তালেবান-রাজ কায়েম ছিলো। তালেবানের সঙ্গে সেসময় আমেরিকার যে কয়জন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা সরাসরি দেখা করতে পেরেছিলেন, রবিন ছিলেন তাদেরই অন্যতম। ওই বছর আফগানিস্তান এবং পাকিস্তানের মধ্যের একটি পাইপলাইন প্রকল্পের জন্য সওয়ালও করেছিলেন তিনি। সশরীরে তালেবানের মুখোমুখি হওয়া এবং পাইপলাইন প্রকল্প নিয়ে তাদের হয়ে কথা বলার জন্যই ভারতীয় সংবাদমাধ্যম সেসময় রবিনকে ‘লেডি তালেবান’ নাম দিয়েছিলো।
১৯৯৬ সালে তালেবানের দখলে কাবুল চলে আসার পর তালেবান নেতাদের সঙ্গে তার সুসম্পর্কের কথা মাথায় রেখে দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক স্থাপনের জন্য আমেরিকা রবিনের ওপর অনেকটাই নির্ভর করেছিলো। কিন্তু পরবর্তীকালে তার বিরুদ্ধে পাকিস্তানের হয়ে গুপ্তচরবৃত্তির অভিযোগ ওঠে। অনেকেই তার কথাবার্তার মধ্যে একদিকে পাকিস্তান এবং অন্যদিকে আফগানিস্তানের তালেবানের প্রতি পক্ষপাতিত্ব লক্ষ্য করেছিলেন।
ভারতের কাছে রবিন অবশ্য এরও অনেক আগে থেকে অপ্রিয় ছিলেন। ভারতীয় সংবাদমাধ্যমে ১৯৯৩ সালে প্রথম বার তার নাম ছাপা হয়। কাশ্মীরকে প্রকাশ্যে ‘বিতর্কিত অঞ্চল’ বলেছিলেন তিনি। খবর ওয়াশিংটন পোস্ট, টাইমস ইউকে, টেলিগ্রাফ।
এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে কাশ্মীর ইস্যুতে পাকিস্তানের পক্ষে কথা বলতে দেখা গিয়েছিলো তাকে। তার ফোনে আড়ি পেতেও সেই প্রমাণ পেয়েছিলো এফবিআই। গোপনে পাকিস্তানের হাতে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পৌঁছে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছিলো তার নামে।
২০১৩ সালে তার বাড়িতে তল্লাশি চালিয়ে একটি আলমারি থেকে ২০ বছরের পুরনো নথি বাজেয়াপ্ত করেছিলো এফবিআই। পরে যদিও তেমন কোনো প্রমাণ দিতে না পারায় তদন্ত বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছিলো এফবিআই। তবে আমেরিকা তার নিরাপত্তা এবং সুযোগ-সুবিধা বন্ধ করে দিয়েছিলো। এখন রবিনের বয়স ৭৪ বছর। দুই বার বিয়ে করেছেন রবিন। তার দুটো বিয়েই ঠিকেনি। রবিন ইংরেজি ও উর্দু এবং ফরাসি ভাষা বলতে পারেন সাবলীলভাবে।
বিএনএনিউজ২৪/এমএইচ