বিএনএ, ঢাকা: দেশের বিচারব্যবস্থায় এক ধরনের ভয়ের সংস্কৃতি ভর করেছে। বিচারপতিদের সবারই চিন্তা হচ্ছে, আমি কী করলে, কে আমার বিরুদ্ধে কথা বলবে। কোনো একটা গোষ্ঠী তার বিরুদ্ধে কিছু একটা নিয়ে জোরে আওয়াজ তুললেই তো শেষ। সে বিচারপতির আর কোনো ভবিষ্যৎই থাকবে না। এমন ভয়ের পরিবেশে কে ঠিকমতো রায় দেবে বলুন? রায় তো দূরের কথা, আদেশই–বা কে দেবে? জুলাই-আগস্টের কোনো মামলাতেই জামিন হচ্ছে না কেন?

বুধবার প্রথম আলো কার্যালয়ে এক গোলটেবিল বৈঠকে ‘জুলাই গণ-অভ্যুত্থান: এক বছরের অভিজ্ঞতা ও ভবিষ্যৎ’ শীর্ষক গোলটেবিল বৈঠকে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সারা হোসেন এমন মন্তব্য করেন।
বৈঠকে সারা হোসেন বলেন, ‘গত এক বছরে বিচারব্যবস্থার স্বাধীনতা নিয়ে অনেক কথা হলেও এর কাঠামোতে এমন কোনো পরিবর্তন আসেনি, যেটা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি। হাইকোর্টের বিচারকদের সরিয়ে দেওয়া হয়েছে কেন? সেসব কারণ আমরা আজও জানি না। এগুলো নিয়ে কথাও বলা যাচ্ছে না। এ নিয়ে পত্রিকাগুলোও বেশি কিছু লেখার চেষ্টা করছে না।
সারা হোসেন বলেন, আটক ব্যক্তির রাজনৈতিক পরিচয়ের ভিত্তিতে বিচার করে রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিল করা হচ্ছে। জামিনের আদেশ নিয়ে যে কথা হচ্ছে, তাতে বলা হচ্ছে জুলাই-আগস্টের কোনো মামলাতেই কোনো জামিন হবে না। এই যে মানবাধিকার লঙ্ঘনের দায় সরাসরি রাষ্ট্রের কোনো বাহিনী বা কর্তৃপক্ষের না হলেও এ ক্ষেত্রে তাদের অনুপস্থিতি এবং গাফিলতি রয়েছে।
জুলাই-আগস্ট পরবর্তী সময়ে সারা দেশে গণহারে করা ঢালাও মামলার বিষয়ে সারা হোসেন বলেন, ‘মামলায় লাখ লাখ নাম দেওয়া হয়েছে। সেগুলো ঠিক কি না, সেটা স্বাধীনভাবে পর্যবেক্ষণ করা প্রয়োজন। ঢালাও মামলা সাংঘাতিক লজ্জার ব্যাপার। সরকার এ ব্যাপারে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে। সরকারকে বললে বলে আমরা তো মামলা করিনি, জনগণ করেছে। কিন্তু সরকার পক্ষের আইনজীবীরা তো কোর্টে দাঁড়িয়ে বলেন না, এটা ঠিক হয়নি।
সারা হোসেন প্রশ্ন করেন জুলাই-আগস্টের কোনো মামলাতেই জামিন হচ্ছে না কেন? নিরপরাধ যাঁরা ১০ মাস ধরে জেলে আটক আছেন, তাঁদের ব্যক্তি স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়ার দায় কিন্তু তাদেরই।’ অন্তত এখানে একটি জায়গা তৈরি করতে হবে, যেন মানুষ বিচার চাইতে পারে।
বিচারব্যবস্থায় শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড রাখার প্রতিবাদ জানান সারা হোসেন। তিনি বলেন, ‘জুলাই-আগস্টের এই আমূল পরিবর্তনের পর আমরা কেন নতুন করে ভাবতে পারিনি? বর্তমান সরকারে বেশ কয়েকজন আছেন, যাঁরা সারা জীবন মৃত্যুদণ্ডের বিরুদ্ধে কথা বলেছেন। কিন্তু এখন পাল্টে গেছেন!
সংখ্যালঘুদের ওপর অন্যায় হলে তারা ভয়ে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারে না বলে মন্তব্য করেন সারা হোসেন। ভুক্তভোগীকে দোষারোপ করার সংস্কৃতি পরিবর্তন হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
সারা হোসেন বলেন, ‘আমরা কি এটাই চেয়েছিলাম? নাকি চেয়েছিলাম যে সত্য উদ্ঘাটন হবে, জবাবদিহির ব্যবস্থা হবে, বিচার হবে, ন্যায্যতা প্রতিষ্ঠা করা হবে। সেখান থেকে আমরা অনেক দূরে আছি।সেখানে কেমন করে যাওয়া যাবে, সেটা আমাদের খুঁজে বের করতে হবে।’
এদিকে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী হাইকোর্টে জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফেরামের সভায় বলেছেন. ড. মুহাম্মদ ইউনূস রাষ্ট্রকে দুর্যোগের মধ্যে ঠেলে দিচ্ছেন। বিচার বিভাগের ওপর চেপে বসেছেন।
সুব্রত চৌধুরী আরও বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বিচারপতি নিয়োগে নয়- ছয় করেছেন এখন ড. ইউনূস আবার তা শুরু করছেন। সংবিধান পরিপন্থী, বাছাই কমিটির মাধ্যমে বিচারপতি নিয়োগ সারাদেশের ৮০ হাজার, আইনজীবী রুখে দিবে বলে হুশিঁয়ারি উচ্চারণ করেন।
সৈয়দ সাকিব