বিএনএ ডেস্ক: কোরবানির ঈদের আগেই দাম বেড়েছে সব মসলাজাতীয় পণ্যের। রসুন, আদা, জিরা প্রত্যেকটি পণ্যের দামই ঊর্ধ্বমুখী। গত সপ্তাহের তুলনায় বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে সবজি। কয়েক দিন কমে আবারও বাড়তির দিকে আদা। অন্যদিকে আমদানি করা পেঁয়াজে বাজার ভরে গেলেও নাগালে আসেনি দেশি পেঁয়াজ। কেজিতে ২০ টাকা দাম বেড়েছে রসুনের।
তবে ব্যবসায়ীদের দাবি, চাহিদার তুলনায় আমদানি কম হওয়ায় দাম বাড়ছে। তবে ভোক্তারা এ যুক্তি মানতে নারাজ। তাদের অভিযোগ, সামনে কোরবানির ঈদ। এ সুযোগও কাজে লাগাচ্ছেন তারা।
কাঁচামরিচসহ সব সবজির দাম বাড়ছে জানিয়ে কারওয়ান বাজারের সবজি বিক্রেতা বিল্লাল হোসেন বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে অনেক সবজি ক্ষেতে পানি উইঠা গেছে। এ জন্য সবিজর দাম বাইড়া গেছে।’
প্রকারভেদে কেজিতে ২০ টাকা করে দাম বৃদ্ধি পেয়েছে বলে জানান এই বিক্রেতা। গত সপ্তাহে মরিচ ১২০ টাকা ছিল উল্লেখ করে বিক্রেতা বলেন, ‘এহন ২০০ টাকা। মরিচের দাম তো মেলাই বাড়ছে। টমেটো ছিল ৬০ থেকে ৭০ টাকা, এখন ১০০ থেকে ১২০ টাকা হইয়া গেছে। গাজর চাইনিজটা ৯০ থেকে ১০০ টাকা কেজি। গাজরের দাম ঠিকই আছে।’ ৫০ টাকা কেজি বরবটি এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা দাম জানিয়ে বিল্লাল বলেন, ‘পটলের দাম বাড়ে নাই। করলার দাম দ্বিগুণ বাড়ছে এখন ৭০ থেকে ৮০ টাকা। শসার দাম একটু বাড়ছে। কেজিতে ১০ টাকা।’
সবজির দাম বৃদ্ধির পাশাপাশি যেসব পণ্য দিয়ে সাধারণত সালাদ তৈরি করা হয়, সেসব পণ্যের মূল্য বৃদ্ধি হয়েছে। গত সপ্তাহে ৭০ টাকায় বিক্রি হওয়া টমেটো ১০০ থেকে ১২০ টাকা, গাজর ৯০ থেকে ১০০ টাকা। ১০ টাকা বেড়ে শসা বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ১২০ টাকায় বিক্রি হওয়া মরিচের বর্তমান মূল্য ২০০ টাকা। এ ছাড়া পেঁয়াজের দামও কেজিতে বেড়েছে ৪-৫ টাকা। চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে লাউ, করলা, বরবটি, ঝিঙা, কচুরলতিসহ সব ধরনের সবজি। এক পিস লাউ বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকা। বরবটির কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০-৮০ টাকা। গত সপ্তাহে ৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া করলা এখন ৮০ টাকা। এ ছাড়া কচুরলতি, ঝিঙা, ধুন্দল, কাঁকরোল বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকা কেজি দরে। অন্যদিকে ঢেড়শ বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি দরে।
আমদানি বন্ধের অজুহাতে হু হু করে বেড়ে যায় পেঁয়াজের দর। আমদানির অনুমতি দেয়ায় প্রতিদিনই পেঁয়াজ আমদানি হচ্ছে। বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ দেখা গেছে। খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা দরে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দেশি পেঁয়াজের ঝাঁজ সে তুলনায় তেমন কমেনি।
বাজারে ভারতীয় পেঁয়াজের প্রচুর সরবরাহ দেখা গেছে। খুচরা পর্যায়ে ৩৫ থেকে ৪৫ টাকা দরে এসব পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। কিন্তু দেশি পেঁয়াজের তেজ এখনো সে তুলনায় কমেনি। দেশি পেঁয়াজ কিনতে ক্রেতাকে গুনতে হচ্ছে ৭২ থেকে ৭৫ টাকা।
বাছা আদার দাম কিছুটা বেড়েছে জানিয়ে কারওয়ান বাজারের পাইকারি পেঁয়াজ-রসুন বিক্রেতা এনামুল হোসেন বলেন, ‘রসুন দেশি ১৫০ টাকা কেজি। আর ইন্ডিয়ান ১৬০ টাকা। পাল্লা প্রতি ১০ টাকা, কেজি প্রতি ৩ থেকে ৫ টাকা বাড়ছে পেঁয়াজে। গত সপ্তাহে পাল্লা বেচছি ৩৭০ টাকা, এহন ৩৮০ টাকা।’
এ ছাড়া মিয়ানমারের বাছা আদা ৩৫০ টাকা কেজি এবং ইন্দোনেশিয়ার আদা ৩২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করতে দেখা গেছে। তবে চায়না আদা বাজারে পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে খুচরা বাজারে ৩০০ থেকে ৩২০ টাকায় আদা বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া ৮০ থেকে ৭৫ টাকায় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে। অন্যদিকে রসুন বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকায়।
সব জিনিসেরই দাম বেশি বলে মন্তব্য করেছেন বাজারে আসা ব্যবসায়ী নূরে আলম।বলেন, ‘পেঁয়াজেরও দাম বেশি। আমদানির পরও কমে নাই। যা আছে এখন বাড়ছে। আগে ৭০ টাকা ছিল পেঁয়াজ, এখন পাল্লায় ৭৪ টাকা কেজি দিয়া নিতে হইতেছে। কাঁচামরিচ ২৫০ গ্রাম ৫০ টাকা। মানে ২০০ টাকা কেজি। অন্য সময়ে ২০ টাকায় আধা কেজি পাওয়া যাইত। চারদিকেই অবস্থা খারাপ, কেউই আমরা ভালো নাই।’
চলতি মাসের শুরুতে ৭০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়া জিরার দাম কেজি প্রতি ২৫০ টাকা বেড়ে ৯৫০ টাকা। এলাচ ২ হাজার ২০০ থেকে ২ হাজার ৫০০ টাকা কেজি। ১০০ গ্রাম ২২০ থেকে ২৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এ ছাড়া ৪৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে দারুচিনি। লবঙ্গ বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৬০০ টাকা কেজি দরে।
বাজারে জিরার ক্রাইসিস আছে বলে মনে করেন আল্লাহর দান ভ্যারাইটিজ স্টোরের বিক্রেতা মো. ফারুক। তিনি বলেন, ‘এ মাসের শুরুতে জিরা ৭০০ টাকা বেচছি। এহন ৯৫০ টাকা। কেজিতে ২৫০ টাকা বাড়ছে। চিনি ১৫০ টাকা কেজি বেচতেছি। আমরা তো চিনিই পাই না। প্যাকেট চিনি পাই না। ১৫০ টাকা কেজি খোলা। তেলের দাম কমছে ১০ টাকা লিটারে।’ জিনিসপত্রের দাম বেশি জানিয়ে এই বিক্রেতা বলেন, ‘যে নিব এক কেজি। হে নেয় আধা কেজি। আমগো লাভের সংখ্যা কইমা গেছে। বিক্রিও কইমা গেছে। চিনি গায়ের রেট ১২৫। বেচতে হয় ১৫০ টাকা। কাস্টমারের লগে ঝগড়া হয়। তাই চিনি সবার কাছে বেচি না।’
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, পরিশোধিত খোলা চিনির দাম বাড়িয়ে প্রতি কেজি ১২০ টাকা এবং প্যাকেটজাত পরিশোধিত চিনির দাম প্রতি কেজি ১২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। তবে বাজারে প্যাকেট চিনি উধাও। খোলা চিনিও খুব একটা চোখে পড়ছে না। খোলা চিনি নির্ধারিত মূল্যের চেয়ে ৩০ টাকা বেশি এবং প্যাকেট চিনি ২৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি করতে দেখা গেছে।
ব্রয়লার মুরগির দাম প্রায় অপরিবর্তিত আছে। গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও ১৯০ থেকে ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। তবে সোনালি মুরগির দাম কিছুটা কমেছে। কেজি প্রতি ৩০ টাকা দাম কমে সোনালি মুরগির বিক্রি হচ্ছে ২৪০ থেকে ২৭০ টাকা।
গরুর মাংস অনেকটা অপরিবর্তিত মূল্যে, বাজারে ৭৮০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
এ ছাড়া ইলিশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১ হাজার ৩০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকা। ছোট সাইজের ইলিশ পাওয়া যাচ্ছে ৬০০ থেকে ১ হাজার টাকা কেজি দরে। রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। তেলাপিয়া, পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০০ থেকে ২২০ টাকা। শিং মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৫০০ টাকা। কৈ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৩০ থেকে ২৫০ টাকা। পাবদা মিলছে ৩০০ থেকে ৪৫০ টাকা। সপ্তাহের ব্যবধানে এসব মাছের দামে পরিবর্তন আসেনি। বোয়াল, চিতল, আইড় মাছ বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৯০০ টাকা কেজি দরে।
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ/ এইচ এইচ