আবদুল হক ১৯১৮ সালের অক্টোবর মাসে রাজশাহীর নওয়াবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর থানার উদয়নপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম-সহিমুদ্দিন বিশ্বাস, মাতার নাম- সায়েমা খাতুন। তিনি ১৯৩৬ সালে ম্যাট্রিক, ১৯৩৯ সালে করটিয়া সাদ’ত কলেজ থেকে অনার্সসহ বি.এ এবং ১৯৪৬ সালে এম.এ. পাশ করেন।
আবদুল হককে শিক্ষাজীবনেই কাজের সন্ধান করতে হয় দারিদ্রের কারণে। ১৯৪৪ সালে তিনি দৈনিক আজাদ-এ সাব এডিটর পদে চাকুরি নেন পরে সওগাতের সহযোগী সম্পাদক পদে চাকুরি করেন।
১৯৫১ সালে পাকিস্তান সরকারের তথ্য দফতরে এবং ১৯৬৫ সালে কেন্দ্রিয় বাংলা উন্নয়ন বোর্ড (পরে বাংলা একাডেমী) এ সহকারী প্রকাশন অফিসার পদে চাকুরি গ্রহণ করেন। ১৯৮১ সালে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। সাহিত্যিক ও সাংবাদিক আবদুল হক বেশ কয়েকটি গ্রন্থ রচনা করেন। আবদুল হক ছিলেন বাংলাদেশে একজন অগ্রণী চিন্তাবিদ। তিনি ১৯৯৭ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি মৃত্যুবরণ করেন।
বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার তত্বগত দিকটি নিয়ে যারা সর্বপ্রথম আলোচনা শুরু করেন তাদের মধ্যে আবদুল হক অন্যতম। তিনি ১৯৪৭ সালের জুন ও জুলাই মাসে রাষ্ট্রভাষার প্রশ্নে চারটি প্রবন্ধ লিখে বাংলা ভাষার গুরুত্ব তুলে ধরেন।
“আবদুল হক রচিত ‘বাংলা ভাষা বিষয়ক প্রস্তাব’ বাংলা ভাষার রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে যু্ক্তি প্রদর্শন করে প্রথম প্রবন্ধ। প্রবন্ধটি দুই কিস্তেতে যথাক্রমে ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ২২ ও ২৩ জুন দৈনিক ‘ইত্তেহাদ’ পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল।
ভাষা-আন্দোলন ইতিহাস গবেষক বশীর আলহেলাল বলেন:
“১৯৪৭ সালে ভাষা সমস্যা সম্পর্কে প্রথম কার প্রবন্ধ প্রকাশিত হয়েছিল আমরা জানি না। তবে এ পর্যন্ত যতদূর দেখা যাচ্ছে, আবদুল হকের প্রবন্ধই প্রথম প্রকাশিত হয়।” (সূত্র : রাষ্ট্রভাষা-আন্দোলনের ইতিহাস-বশীর আলহেলাল, পৃ. ১৮৯)
মহিলা ছদ্মনামে বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় প্রথম প্রবন্ধ রচনা করেন আবদুল হক। প্রবন্ধটির নাম ছিল ‘পূর্ব পাকিস্তানের রাষ্ট্রভাষা’। বাংলা ভাষার মর্যাদা প্রতিষ্ঠার স্বপক্ষে এটা ছিল আবদুল হকের চতুর্থ প্রবন্ধ এবং মহিলা ছদ্মনামে লিখিত প্রথম প্রবন্ধ। মিসেস এম এ হক ছদ্মনামে সাপ্তাহিক বেগম পত্রিকার ১৯৪৭ খ্রিষ্টাব্দের ৩ আগস্ট সংখ্যায় প্রবন্ধটি প্রকাশিত হয়। প্রবন্ধটি মহিলাদের এতই অনুপ্রাণিত করেছিল যে, এরপর অনেক মহিলা এ বিষয়ে লিখতে শুরু করেন।
উক্ত প্রবন্ধে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা করার পক্ষে তিনি বলেন: “…যেহেতু পাকিস্তানের তিন ভাগের প্রায় দুই ভাগের অধিবাসীরই মাতৃভাষা বাংলা, সেহেতু রাষ্ট্রভাষা হওয়ার দাবি সর্বাপেক্ষা প্রবল বাংলা ভাষার। অতএব পূর্ব পাকিস্তানে যাতে বাংলা ভাষা রাষ্ট্রভাষা রূপে ব্যবহৃত হয়, সেজন্য আমাদের নারী সমাজ সর্বত্র আন্দোলন করবেন আশা করি।’ (সূত্র : বেগম, ৩ আগস্ট, ১৯৪৭)
সূত্র: যারা অমর ভাষা সংগ্রামে, লেখক: এমআর মাহবুব
সম্পাদনায়: মনির ফয়সাল
পড়ুন আগের পর্ব: ভাষা সৈনিক (১২) আব্দুল হাই, ডা.