‘নির্বাচন কমিশন গঠনের দায়িত্ব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে দিলেই কেবল বিএনপি খুশি হবে, অন্যথায় নয়’ বলেছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহ্মুদ।
সোমবার(২৪ জানুয়ারি) সচিবালয়ে সাংবাদিকদের বিভিন্ন প্রশ্নের জবাব দেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী। এসময় ইসি গঠন আইনের খসড়া নিয়ে বিএনপি’র বিরূপ মন্তব্য প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের সংবিধান যা দেশের সর্বোচ্চ আইন, সেখানে একটি আইনের মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন গঠনের কথা বলা আছে। যদিও পঞ্চাশ বছরে সেই আইন হয়নি। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশন গঠন করার লক্ষ্যে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সাথে সংলাপে বসেছিলেন এবং বেশিরভাগ দলই বলেছিলো সংবিধান অনুযায়ী একটি আইনের মাধ্যমে যাতে নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়।
ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপি রাষ্ট্রপতির সংলাপে যায়নি কিন্তু বিভিন্ন রাজনৈতিক সভা, মিছিল, টকশো এবং অন্যান্য জায়গায় তারা বলেছিলো আইন করতে সময় লাগে না, দু’দিনেই করা যায়, দেশে অনেক কিছুই প্রয়োজনের নিরিখে হয়েছে এটি রাষ্ট্রের প্রয়োজনে, এজন্য তারা আইন করতে তাগাদা দিয়েছিলেন। কিন্তু আজকে যখন আইন করার উদ্যোগ নেয়া হয়েছে তখন তারা বিরোধিতা করছে। আইন কিন্তু এখনো হয়নি, প্রস্তাবনাটি সংসদে উঠেছে, সংসদীয় স্থায়ী কমিটিতে গেছে, বৈঠক শেষে আইনমন্ত্রী, সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ব্রিফ করেছেন, বিএনপি’র প্রতিনিধিদের পক্ষেও ব্রিফ করা হয়েছে এবং আইনের খসড়ায় তারা যে সংশোধনীগুলো প্রস্তাব করেছিলেন তার অনেক কিছুই গ্রহণ করা হয়েছে বলে সংসদীয় কমিটি বলেছে। অর্থাৎ সবাইকে সাথে নিয়ে পুরো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইন করা হচ্ছে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আসলে বিএনপি চায় বাংলাদেশে একটি ঘোলাটে পরিস্থিতি তৈরি হোক। বিএনপি কোনো কিছুতেই খুশি হবে না, যদি তিনমাস সময় নিয়ে আইন করা হয় এরপরও বিএনপি খুশি হবে না। বিএনপি খুশি হবে যদি বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাহেবকে নির্বাচন কমিশনের দায়িত্ব দেয়া হয়। এছাড়া তাদের খুশি হওয়ার লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।’
‘সুশীল সমাজের প্রতিনিধি বদিউল আলম মজুমদার সাহেব, শাহদীন মালিক সাহেবসহ বেশ কয়েকজন আমাদের আইনমন্ত্রীর সাথে দেখা করে এ আইন করার তাগাদা দিয়েছিলেন, একটি রূপরেখাও হস্তান্তর করেছিলেন এবং তখন তারা এই পরামর্শও দিয়েছিলেন আইন করতে যদি তাড়াহুড়ো হয়, রাষ্ট্রপতির অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে অন্তত আইনটি করা হোক, দেশে দুই দিনেও আইন হয়েছে, সুতরাং চাইলে একদিনেও পারা যায়’ স্মরণ করিয়ে দিয়ে ড. হাছান বলেন, ‘আজকে যখন ভালো উদ্যোগ সরকার গ্রহণ করেছে তখন যারা আইনমন্ত্রীকে সে কথা বলে এসেছিলেন তারা এখন আবার দেখলাম একটি অনলাইন মিটিংয়ে বলেছেন, তাড়াহুড়ো করে আইন করা সমীচীন হচ্ছে না। নিজেরা যে অবস্থানে ছিলেন, নিজেরা যে দাবি দিয়েছিলেন সেটার বিপরীতে কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন। তাহলে তাদের উদ্দেশ্যটা কী।’
সুশীল সমাজের এই প্রতিনিধিরা যারা আইনের জন্য তাগাদা দিয়েছেন আবার সরকার যখন পুরো প্রক্রিয়া অনুসরণ করে আইন করার উদ্যোগ নিয়েছে, তখন তারা আবার অন্য কথা বলছেন, তাহলে তাদের উদ্দেশ্য মহৎ নয়, তারা আসলে পানিটা ঘোলা করতে চায় এবং তারাও রাজনীতির ক্রীড়নকে পরিণত হচ্ছে এটিই স্পষ্ট হয়, উল্লেখ করেন মন্ত্রী।
এসময় সিলেটের শাহজালাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের আন্দোলন নিয়ে প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা আমাদের সন্তান এবং সন্তানের মতো। তাদের দাবিদাওয়ার প্রতি সরকার সহানুভূতিশীল। আমরাও বিশ্ববিদ্যালয়ে থাকাকালীন নানা দাবিদাওয়া নিয়ে আন্দোলন করেছি। ভিসির বাসভবনের সামনে অবস্থান ধর্মঘট আমরাও করেছি। কিন্তু আমরা কখনো বাড়ির বিদ্যুতের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করি নাই। আজকে শুনলাম ভিসির বাংলোতে পানি প্রবেশ করতে দেয়া হচ্ছে না। ভিসির জন্য খাবার পাঠানো হয়েছিলো সে খাবারও ঢুকতে দেয়া হচ্ছে না। জেলখানার কয়েদিরাও খাবার পায়, পানি পায়। খাবার বন্ধ করে দেয়া, ভিসির বাংলো কিংবা ক্যাম্পাসে বিদ্যুৎ সংযোগ কেটে দেয়া বা কেটে দেয়ার জন্য চেষ্টা করা এগুলো আন্দোলনের অংশ হতে পারে না, এগুলো প্রতিহিংসামূলক। আমি ছাত্রছাত্রীদের অনুরোধ জানাবো, রাজনৈতিক ক্রীড়নক হিসেবে তাদেরকে যেন কেউ ব্যবহার না করে। আমি আশা করবো এর একটি যৌক্তিক সমাধান হবে।’