27 C
আবহাওয়া
৬:৪৫ অপরাহ্ণ - মার্চ ২৮, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট, অনিয়ম যেখানে নিয়ম

গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট, অনিয়ম যেখানে নিয়ম

গম ও ভুট্টা গবেষণা ইনষ্টিটিউট

।। শাহ আলম শাহী।।

বিএনএ দিনাজপুর: দিনাজপুরে নশিপুরস্থ বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই)তে তুঘলকি কারবার চলছে। এই প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অনিয়ম, ঘুষ-দূর্নীতি, নিয়োগ বাণিজ্য, আত্মসাৎ, যৌন কেলেংকারীর অভিযোগও রয়েছে। নিন্ম পদস্থ সেবক-পরিচারক, নৈশ্য প্রহরী থেকে শুরু করে উচ্চ পদস্থ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার বিরুদ্ধেও রয়েছে-এমন নানা অভিযোগ। অবৈধ টাকায় জোরে এদের অনেকেই রাতারাতি কোটিপতি হয়ে গেছেন। এক একজন একাধিক আবাসিক ফ্ল্যাট-প্লট, বাড়ি-গাড়িসহ স্বনামে-বেনামে সম্পদের গড়েছেন। কিন্তু, এরপরও উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষ নিশ্চুপ রয়েছে!

গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউটের সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি’র কারিগর হচ্ছেন ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম। তার বিরুদ্ধে সম্প্রতি একই বিভাগের কর্মরত এক নারী কর্মচারী যৌন হয়রানী ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অশ্লীল ছবি ধারণ করে ব্লাকমেইল করার অভিযোগ তুলে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম পলাতক থাকলেও কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি। বরং নেপথ্যে তাকে সহযোগিতার অভিযোগ ওঠেছে।

কয়েকজনের কর্মকতা ও কর্মচারী অভিযুক্ত শহিদুলকে প্রকাশ্যেই সহযোগিতা করে যাচ্ছেন। ফলে গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউটে কর্মরত নারী কর্মকর্তা-কর্মচারী ও শ্রমিক নারীরা চরম আতংকে এবং ভয়ে দিনাতিপাত করছেন।

দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় দায়ের করা মামলার নথি থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই)’র হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি এলাকার বাসিন্দা নুরুজ্জামানের ছেলে। বর্তমানে দিনাজপুর শহরের ঘাসিপাড়া এলাকার জনৈক আইনজীবী’র বাসার ভাড়াটিয়া। তিনি একই বিভাগে কর্মরত জনৈক নারী কর্মচারীকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দেন। পরিধানের কাপড় ধরে টানা হ্যাচড়া ছাড়াও ওই নারী কর্মচারীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়া এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে আসছিলেন। ইতোমধ্যে ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম জোরপূর্বক ওই নারী কর্মচারী’র কিছু নগ্ন ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করেন। পরে ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাঁস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বেশ কয়েকবার ধর্ষণের অপচেষ্টা চালান। কুচরিতার্থ হাসিল না হওয়ায় বিডাব্লুউএমআরআই’র ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম গত ৯ সেপ্টেম্বর  সন্ধ্যায় ওই নারী’র উপশহরস্থ বাড়িতে গিয়ে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। টাকা না দিলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত নগ্ন-অশ্লীল ছবিগুলো ইন্টারনেট এবং ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেন তিনি।

ওই নারী কর্মচারী চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসেন। সে সময় শহিদুল হুমকি দেয় যে ১২ লাখ টাকা না দিলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত নগ্ন-অশ্লীল ছবিগুলো ইন্টারনেট এবং ফেসবুকে শুধু ছেড়ে দেয়ার পাশাপাশি ওই নারীকে ধর্ষণের পর হত্যা করে মরদেহ গুম করবেন।

এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে গত ২৬ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং চাঁদাবাজি’র একটি মামলা দায়ের করেন নির্যাতনের শিকার ওই নারী। মামলা দায়েরের পর থেকেই অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম পলাতক রয়েছেন।

তার কর্মস্থল বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই)’র হিসাব বিভাগে সরজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো. শহিদুল ইসলাম যে কক্ষে বসতেন তার চেয়ার ফাঁকা এবং কক্ষে তালা মারা রয়েছে। সাংবাদিকে আগমনে কর্মরত সকলেই যেনো অস্বস্তিবোধ করছিলেন। অফিস জুড়ে কানাঘুষা চললেও কেউই মুখ খুলেন নি।

গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই)’র চলতি দায়িত্বে নিয়োজিত মহাপরিচালক ড. মো. আমিরুজ্জামানের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তিনি জানান, বিষয়টি মামলায় গড়িয়েছে। তাই এ নিয়ে কথা না বলাই ভালো। ঘটনা খতিয়ে দেখতে ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানান তিনি।

জানা গেছে, বিডাব্লুউএমআরআই’র মহাপরিচালক ড. মো. আমিরুজ্জামানের চাকুরি আর কিছুদিন রয়েছে। কয়েকদিনের মধ্যেই অবসরে যাচ্ছেন তিনি। তাই, বিডাব্লুউএমআরআই’র সকল অনিয়ম ও দুর্নীতি’র কারিগর ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো. শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নিতে চায় না মহাপরিচালক। শহিদুলের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে হয়তো তাকেও চাকুরির শেষ মুর্হুতে হয়তো ঝামেলায় পড়তে হতে পারে। এই শঙ্কায় তিনিও এক প্রকার নীরব রয়েছেন।

তবে, এই ইনস্টিটিউটে পরবর্তীতে যারা মহাপরিচালক হওয়ার তালিকায় রয়েছেন, তাদের মধ্যে দুইজন দুইপক্ষে কাজ করছে বলেও অভিযোগ ওঠেছে।

এ বিষয়ে প্রকাশ্যে কেউ মুখ না খুললেও ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো. শহিদুল ইসলামকে অনেকেই সহযোগিতা করছেন। আর এ কারণেই শহিদুল ইসলাম অফিসের দায়িত্ব ও কাগজপত্র বুঝিয়ে না দিয়েও দীর্ঘদিন (২মাস) অফিস ছেড়ে বাইবে অবস্থান করছেন। কিন্তু, কর্তৃপক্ষ কোন ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো নানাভাবে হয়রানী এবং অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করছে, যৌন হয়রানির শিকার ওই নারীকে। বিশেষ করে ওই নারীকে অফিসের এস এ কামাল মাহমুদ শরীফ প্রকাশ্যে নানাভাবে হয়রানী এবং অশ্লীল ভাষায় গালি গালাজ করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম এবং কামাল মাহমুদ শরীফের বাড়ি একই জেলা গাইবান্ধায়। শহিদুল ইসলামের এজেন্ট হিসেবে কাজ করছেন, কামাল মাহমুদ শরীফ।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করা হলেও তার মুঠোফোন অধিকাংশ সময় বন্ধ পাওয়া যায়। মাঝে মধ্যে খোলা থাকলেও ফোন রিসিভ করছেনা তিনি।

এ বিষয়ে কোতয়ালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো.মোজাফফর হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, মামলা গ্রহণ করে আদালতে পাঠানো হয়েছে। অভিযুক্ত শহিদুল পলাতক রয়েছেন। থানা পুলিশ প্রয়োজনীয় আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছে বলে জানান তিনি।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, গবেষণাগারের কেমিক্যাল ক্রয়, টিএলসি গম ক্রয়, জৈব সার ক্রয়, প্রযুক্তি যন্ত্রাংশ ক্রয়, গাড়ির জ্বালানি ক্রয় থেকে শুরু করে সব ক্রয় খাতে মহা দূর্নীতি হচ্ছে এই প্রতিষ্ঠানে। এছাড়াও ইনষ্টিটিউটের অভ্যন্তরে শহীদ মিনার, ফ্লাগ ষ্ট্যান্ড, ড্রেন নির্মাণ, ষ্টাফ কোয়াটার এবং আনসার ক্যাম্প সংস্কারের অর্থ এবং উৎপাদিত ফসল, বীজ ক্রয়-বিক্রয়ের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করা হয়েছে। আর এফ কিউ’র মাধ্যমে মাটি ভরাটের কাজ, মাটি ক্রয়, রিপিয়ারিং, চাষীদের প্রশিক্ষণ, সভা-সেমিনার, কর্মশালা, গবেষণা কর্মসূচীসহ বেশ কিছু প্রকল্পে প্রতারণা আশ্রয় নিয়ে জালিয়াতি করে কয়েক কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগ রয়েছে। এসব হিসাব-নিকাশ এবং বাজেট ফাইল থাকে হিসাব বিভাগে। তাই, বাজেট বা প্রকল্পের অর্থ আত্মসাৎ ও চুরি করতে ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলামের সহযোগিতা সবারই লেগেছে। তাই, সব দূর্নীতিবাজ কর্তকর্তা-কর্মচারীরা সব সময় শহিদুলের কাছে জিন্মি। আর শহিদুলের সব অন্যায় এবং লুচ্চামি নীরবে মেনে নিতে হচ্ছে, ইনস্টিটিউটের অনিয়ম-দূর্নীতিবাজ কর্মকর্তা-কর্মচারিদের। শহিদুল ইসলাম নাকি হুমকি দিয়েছেন, তিনি ফেঁসে গেলে সকলের অন্যায় এবং দূনীতি ফাঁস করে দেবেন। ফলে শহিদুল ইসলামকে বাঁচারে অনেকেই এখন মরিয়া।

বিএনএনিউজ/আরকেসি

 

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ