বিএনএ, রাঙামাটি : হ্রদ পাহাড়ের জেলা রাঙামাটির মেঘের রাজ্য সাজেক। সুযোগ পেলেই অবকাশ যাপনের জন্য ঘুরতে আসেন পর্যটকরা। মুগ্ধ হন সাজেকের সৌন্দর্য দেখে, ফিরে যান নীড়ে। তবে এবার মন ভাল করার সাজেকে নানা দুর্বিষহ জীবন পার করছেন পর্যটকরা। চারদিন ধরে নেই বিদ্যুৎ সুবিধা।
বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকা অবরোধের কারণে গত শনিবার থেকে সাজেকে আটকা পড়েছেন প্রায় দেড় হাজার পর্যটক। অবরোধ এবং সাজেকে টানা চার দিন বিদ্যুৎ না থাকায় জ্বালানি ফুরিয়ে যাওয়ার কারণে খাবার ও বিশুদ্ধ পানির সংকট দেখা দিয়েছে। গরমে শিশুরা কষ্ট পাচ্ছেন। অনেক অসুস্থ রোগী আরও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। এতে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন পর্যটকরা।
জানা গেছে, সাপ্তাহিক ছুটিতে শুক্রবার সকালে সাজেক যান বেশকিছু পর্যটক, যারা শনিবার ফিরে আসার কথা থাকলেও বিক্ষুব্ধ জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকা (শনিবার সকাল ৬টা থেকে টানা ৭২ ঘণ্টার) অবরোধের কারণে ফিরতে পারছেন না। এসব পর্যটকের মধ্যে নারী, শিশু ও বয়োবৃদ্ধ রয়েছেন।আবার অনেক চাকরিজীবী রয়েছেন, যারা সাপ্তাহিক ছুটিতে বেড়াতে এলে সাপ্তাহিক ছুটির পরও ফিরতে পারছেন না।
জানা যায়, সাজেকে তেমন অগ্রিম খাবার মজুদ রাখা হয় না। ৪০ কিলোমিটার দূরের বাঘাইহাট থেকে খাবার নিয়ে যেতে হয়। কিন্তু অবরোধের কারণে তা নেওয়া সম্ভব হওয়ায় অনেক কটেজ লোকজনের জন্য খাবারের ব্যবস্থা করতে হিমশিম খাচ্ছে। গত ১৮ তারিখ খাগড়াছড়ি দীঘিনালায় সংঘর্ষের ঘটনার পর বাঘাইছড়ি ও সাজেকে বিদ্যুৎ নাই।
সাজেক কটেজ মালিকদের সূত্রে জানা যায়, সাজেকে প্রায় দেড় হাজার পর্যটক ও ১৭৮টি পর্যটকবাহী গাড়ি শনিবার থেকে আটকা পড়ে আছে। সাজেকে বিদ্যুৎ সংযোগ বৃহস্পতিবার থেকে বন্ধ। জেনারেটর দিয়ে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা হলেও অবরোধের কারণে জ্বালানি তেলের সংকট দেখা দিয়েছে। এতে অনেক কটেজে জেনারেটর সুবিধাও বন্ধ হয়ে পড়ছে। আবার জ্বালানি তেল না থাকায় পানি উত্তোলনও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।
এদিকে সাজেকে তিন শতাধিক কটেজ ও রেস্টুরেন্টের মালিক-কর্মচারী মিলে রয়েছে আরও প্রায় দেড় হাজার মানুষ। জ্বালানি তেল, জ্বালানি গ্যাস সংকটে বেশকিছু রেস্টুরেন্ট ইতোমধ্যে বন্ধ হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতে সাজেকে অবস্থান করা পর্যটকসহ প্রায় তিন হাজার মানুষের খাবার সংকট দেখা দিয়েছে।
পর্যটক আল-আমিন বলেন, খাবার পানির সংকটে আছি। গত দুই দিন ধরে বিদ্যুৎ নাই, নেটওয়ার্ক ও সমস্যা। অকটেনের মাধ্যমে যে জেনারেটর চলত তাদেরও জ্বালানি ফুরিয়ে গেছে। হোটেলে গেলে সেখানেও খাবার নাই। জীবন বাঁচাতে আমরা ঝর্ণার পানি পান করে বেঁচে আছি। এই মুহূর্তে আমাদের একটাই চাওয়া, সুস্থভাবে বাসায় ফিরে যাওয়া।
সাজেক নিরিবিলি কটেজের মালিক মো. ফয়সাল আহমেদ বলেন, সাজেকে প্রচুর পর্যটক আটকা পড়ছেন। অবরোধের কারণে তেল নিতে না পারায় পানিসহ বেশকিছু সংকট দেখা দিয়েছে। যদি পর্যটকদের আজকের মধ্যে ফেরানো না যায়, অবস্থা খুব খারাপ হবে।
এ বিষয়ে রাঙামাটির জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ মোশারফ হোসেন খান বলেন, সাজেকে আটকে পড়া পর্যটকদের বিভিন্ন সংকটের বিষয় আমরা জেনেছি। বিভিন্নজনের সঙ্গে কথা বলছি। পর্যটকদের সাজেক থেকে ফেরানোর ব্যাপারে সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি।
এদিকে যেসব পর্যটকদের আর্থিক অবস্থা ভালো, তাদের অনেকে ব্যক্তিগত হেলিকপ্টার ভাড়া করে ২০-২৫ জন চলে গেছেন বলে জানা যায়।
বিএনএনিউজ/ কাইমুল ইসলাম ছোটন/এইচ.এম।