24 C
আবহাওয়া
৮:৫২ অপরাহ্ণ - নভেম্বর ১৯, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » রনির ছোঁয়ায় ‘রাখাল’ আবছার শতকোটি টাকার মালিক!

রনির ছোঁয়ায় ‘রাখাল’ আবছার শতকোটি টাকার মালিক!


।। এনামুল হক নাবিদ।। 

সম্প্রতি আর্ন্তজাতিক সংবাদ মাধ্যম আল জাজিরার মাধ্যেমে দেশ-বিদেশের মানুষ জেনেছে ক্ষমতাচ্যুত হাসিনা সরকারের সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ কীভাবে বিদেশে ৮ হাজার কোটি টাকার সম্পত্তির বিশাল পাহাড় গড়েছেন, কীভাবে দেশ থেকে অর্থপাচার করেছেন।জেনেছেন সাইফুজ্জামান কুমির ও উট পাখির চামড়ায় তৈরি ১০ লাখ টাকা দামের জুতা পরিধানসহ তার বিলাসি লাইফ স্টাইলের কথা।

YouTube player

শুধু সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদ ও তার স্ত্রী রুকমিলা জামান বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন? না, তার ভাই আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি ও তার স্ত্রী ইমরানা জামান চৌধুরী বিদেশে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। লন্ডন, দুবাইসহ বিভিন্ন দেশে হাজার কোটি টাকার সম্পদ। আর বিলাসিতায় সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের চেয়ে ছোট ভাই আনিসুজ্জান চৌধুরী রনি এক কাঠি সারেস। লন্ডন-দুবাই-বেভারলি হিলসে পার্সোনালাইজড নম্বর প্লেট সহ বহুমূল্যবান সব গাড়ি আর বাড়ি তো আছেই। রনি পরেন রিচার্ড মিলের প্রায় ৪ লাখ ডলারের হাত ঘড়ি। যা বাংলাদেশী মুদ্রায় ৪ কোটি ৭৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এই ধরনের অসংখ্য ঘড়ি রয়েছে রনির সংগ্রহ শালায়।

আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য প্রয়াত আখতারুজ্জামানের সন্তান আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনি রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের আগে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের এক্সিকিউটিভ কমিটির চেয়ারম্যান ছিলেন। আর সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাবেদের স্ত্রী রুখমিলা জামান চৌধুরী ছিলেন ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের চেয়ারম্যান। দেবর ভাবি মিলে ব্যাংক থেকে হাজার হাজার কোটি টাকা বিভিন্ন লোকজনের নামে সরিয়ে নিয়েছেন। আর সেই টাকায় আনিসুজ্জামান রনি এবং তার স্ত্রী ইমরানা জামান চৌধুরী যুক্তরাজ্যে খুলেছে পাঁচটি কোম্পানি।

কথায় আছে, চুম্বকের ছোঁয়ায় লোহা থাকলে সেটিও চুম্বকে পরিণত হয়। আনিসুজ্জামান চৌধুরী রনির ছোঁয়ায় অনেকে এখন শত কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন। এদের অন্যতম আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের আবছার নামের সাবেক এক ইউপি সদস্য নুরুল আবছার।

চিটাগং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেড (সিইউএফএলএ) এবং কর্ণফুলী ফার্টাইলাইজার কোম্পানি (কাফকো), কোরিয়ান ইপিজেড ইউনাইটেড পাওয়ার প্লান্টসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে একক ব্যবসা, চাঁদাবাজি ও সার চুরি, ইয়াবা পাচারের মাধ্যমে এই টাকার পাহাড় গড়ে তুলেছেন এই আবছার।

সিইউএফএল এবং কাফকো সার কারখানায় রনির একক ব্যবসার সিন্ডিকেট রয়েছে। গত সাড়ে ১৫ বছর ধরে দুটি সার কারখানায় সার পরিবহণ থেকে শুরু করে কোটি কোটি টাকা টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতেন আনিসুজ্জামান রনি। তার মধ্যে অন্যতম সহযোগী আনোয়ারা উপজেলার বৈরাগ ইউনিয়নের সাবেক মেম্বার নুরুল আবছার। আনোয়ারা উপজেলা আওয়ামী লীগ নেতা বোরহান উদ্দীন চৌধুরী মুরাদ, সিইউএফএল সাবেক সিবিএ নেতা বর্তমান সিইউএফএল শ্রমিক ইমরান খান।
বৈরাগ ইউনিয়নের উত্তর বন্দর গ্রামের হতদরিদ্র ইট ভাটার নিরাপত্তা কর্মি জাফর আলীর প্রথম স্ত্রীর দ্বিতীয় পুত্র সন্তান নুরুল আবছার কোনদিন প্রাইমারি স্কুলের চৌহদ্দি পার হয় নি। অভাবের কারণে এক সময় সাবেক ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নবী হোসেনের গৃহ পালিত গরু মহিষ দেখা শুনা করতেন। নানা চড়াই উৎরাই পেরিয়ে আবছার হয়েছেন ইউপি মেম্বার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতাসীন হওয়ার পর সিইউএফএল ও কাফকো থেকে নবাব খানের নেতৃত্বাধীন বিএনপির সিন্ডিকেটকে বিতাড়িত করে নুরুল আবছার। সেই কারণে নুরুল আবছার প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরীর ছেলে আনিসুজ্জামান রনির কাছের মানুষ হয়ে ওঠেন। এরপর নুরুল আবছারকে আর পিছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। সেই অশিক্ষিত হতদরিদ্র আবছার এখন শত শত কোটি টাকার মালিক। উত্তর বন্দর গ্রামে তার ক্রয় করা ৪০ শতক জায়গার সামনের অংশে রয়েছে দোকান মার্কেট এবং পিছনের অংশে রয়েছে ৫ তলা বিলাসবহুল বাড়ী। ব্যবহার করেন একাধিক বিলাসবহুল গাড়ী।

এই আবছার রনির হয়ে বিদেশে অর্থ পাচারে অন্যতম সহযোগীর ভূমিকার পুরুস্কার স্বরূপ রনির কাছ থেকে উপহার পেয়েছেন হোন্ডা কোম্পানির এসইউভি গাড়ী। এছাড়া তার রয়েছে হোন্ডা ভেজেল ও টয়োটা প্রিমিও ব্রান্ডের কার। আবছারের মালিকানাধীন কোম্পানি এস এ এন্টারপ্রাইজ (ব্যাংক একাউন্ট ০০২২১০১০০০০১১২১৮) এর নামে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জ শাখা হতে ৩০ কোটি টাকার ঋণ নিয়েছেন। যার পুরোটাই তিনি হুন্ডির মাধ্যমে পাচার করে দিয়েছেন বিদেশে। ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক ছাড়াও রনির সহযোগীতায় একাধিক ভুয়া-ভুঁইফোঁড় কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করে নামে-বেনামে আবছার এবং তার ছেলে জয়নাল আবেদিন যে ঋণ নিয়েছেন তা দেশে বিনিয়োগ করেনি।

অনুসন্ধানে বেরিয়ে আসে আবছারের ছেলে জয়নাল আবেদিনের কাহিনীও। জয়নাল ছিলেন বিভিন্ন সমুদ্রগামী জাহাজের একজন ক্রু, তার পিতা আবছার অশিক্ষিত হওয়ায় সে সব ডকুমেন্টারি কাজ সমূহ দেখভাল করতো। যার নিজের রয়েছে চট্টগ্রাম এবং ঢাকায় নামে বেনামে বিলাস বহুল ফ্ল্যাট ও গাড়ি। রয়েছে অসংখ্য ব্যাংক এফ ডি আর।

আবছারের বিরুদ্ধে রয়েছে সিইউএফএল সার কারখানার ডিলারদের জিম্মি করে শতকোটি টাকা চাঁদাবাজির অভিযোগ। বাংলাদেশ কৃষি অধিদপ্তরের নিয়োগকৃত ডিলারদের মাধ্যমে বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পরেশনের। বিসিআইসি নিয়ন্ত্রণাধীন সিইউএফএল সার কারখানার নিজস্ব উৎপাদিত অথবা কাফকো হতে ক্রয়কৃত কিংবা বিদেশ হতে আমদানিকৃত সার তাদের নিজস্ব গোডাউন হতে বাংলাদেশ ফার্টিলাইজার এসোসিয়েশনের তালিকাভুক্ত ডিলারগণকে চাহিদা মোতাবেক সরবরাহ করে থাকে। সেক্ষেত্রে ডিলারগণ সার পরিবহনের জন্য যে গাড়ী সরবরাহ করেন তা ১০-১৫ মে টন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন।

বর্তমানে আবছার এবং তার ছেলে নিয়োজিত আছেন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ কর্পরেশানের {বিসিআইসি) নিয়ন্ত্রণাধীন বিভিন্ন বাফার গুদামে সার পরিবহনের কাজে। দরপত্র আহবানের মাধ্যমে কাজ নিলেও উক্ত কাজের আড়ালে তাদের মূল ব্যবসা সরকারি সারের গাড়িতে ইয়াবা পাচার করার অভিযোগ রয়েছে।
প্রসঙ্গত, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সময় গুলিতে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হৃদয় চন্দ্র তরুয়ার মৃত্যুর ঘটনায় ১১৪ নং মামলার আসামী এই নুরুল আবছার।

এ সব অভিযোগের বিষয়ে জানতে নুরুলআবছারের মোবাইলে ফোন করা হলেও মোবাইল নম্বর টি বন্ধ পাওয়া যায়।##

বিএনএনিউজ২৪ডটকম /এইচমুন্নী

 

Loading


শিরোনাম বিএনএ