33 C
আবহাওয়া
১০:৩৩ অপরাহ্ণ - এপ্রিল ২৬, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » কালো পানিতে কর্ণফুলীর মরন দশা

কালো পানিতে কর্ণফুলীর মরন দশা

কালো পানিতে কর্ণফুলীর মরন দশা

বিএনএ ডেস্ক: শিল্প কলকারখানার দূষিত কালো পানিতে মরন দশা কর্ণফুলীর। গত ৩০ বছর ধরে কর্ণফুলীর তলদেশে ক্রোমিয়াম, তামা, নিকেল, সীসা ও দস্তার মতো ভারী ধাতু জমে কমেছে নদীর গভীরতা।

নির্বিচারে নদী দখল, গৃহস্থালি ও শিল্পবর্জ্যে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বন্দরনগরীর জীবননালী। নদীর তীর দখল করে গড়ে তোলা হয়েছে শত শত আবাসিক ও বাণিজ্যিক ভবন। এসব ভবনের বর্জ্য ফেলা হচ্ছে নদীর পানিতে। নদীর নাব্য সংকটে মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে নৌ-বাণিজ্য। অন্যদিকে লাগামহীন দূষণে চরম ঝুঁকিতে পড়ে জনস্বাস্থ্য।

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন নামে একটি সংগঠনের ২০২০ সালের প্রতিবেদনে দেখা যায়, শাহ আমানত সেতু এলাকায় জোয়ারের সময় নদীটির প্রস্থ এখন ৫১০ মিটার আর ভাটার সময় ৪১০ মিটার, যা আগে ছিল ৮৮৬ মিটার। রাজাখালী খালের মুখে নদীর প্রশস্ততা প্রায় অর্ধেকে নেমে এসেছে। ফিরিঙ্গিবাজার পয়েন্টে নদীর প্রস্থ ছিল ৯০৪ মিটার, চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ গাইড ওয়াল নির্মাণের পর সেখানে নদী আছে ৭৫০ মিটার।

চট্টগ্রামের জলাবদ্ধতা নিরসন ও কর্ণফুলীর নাব্য ফেরাতে গত পাঁচ বছরে চারটি প্রকল্প অনুমোদন দেয় সরকার। এসব প্রকল্পে খরচ হচ্ছে ৯ হাজার কোটি টাকা। কর্ণফুলী রক্ষায় হাইকোর্টও নির্দেশনা দিয়েছেন। নদীটিকে অবৈধ দখল ও দূষণমুক্ত করার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় নদী সংরক্ষণ কমিশন। কর্ণফুলীকে দূষণ ও দখলমুক্ত করতে গত বছর মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। তবে কোনো কিছুই যেন কাজে আসছে না।

কর্ণফুলীর দুই তীরে বাংলাবাজার ঘাট থেকে শাহ আমানত সেতু পয়েন্ট পর্যন্ত মাত্র তিন কিলোমিটার এলাকায় গড়ে উঠেছে ১৪০টি জেটি ও ঘাট। নদীর গুরুত্বপূর্ণ এই অংশে বিপুল স্থাপনার কারণে জাহাজ চলাচলে বিঘ্ন ঘটছে। কর্ণফুলী রক্ষার দায়িত্বে থাকা চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষ  এ নিয়ে কোনো উদ্যোগ নেয়নি। অভিযোগ আছে, বন্দর কর্তৃপক্ষের কিছু অসাধু কর্মকর্তার যোগসাজশেই নদীর তীর দখল করে এসব জেটি-ঘাট তৈরি হচ্ছে।

কর্ণফুলী নদীর শাহ আমানত সেতুর আশপাশে জেগে ওঠা চর দখল করে বস্তি-বাণিজ্য করছেন কিছু রাজনৈতিক নেতা। নদীভাঙন ও জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে শহরে আসা দরিদ্র লোকজনকে ভাড়া দিয়ে চাক্তাই ও রাজাখালী খালের মুখে অন্তত ৩০ একর সরকারি খাসজমি ২০ বছর ধরে দখল করে রেখেছেন তারা। দখল বজায় রাখতে গঠন করা হয়েছে ‘ভেড়া মার্কেট শ্রমজীবী সমবায় কল্যাণ সমিতি’ নামে একটি সংগঠন।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়সহ আন্তর্জাতিক কয়েকটি প্রতিষ্ঠানের প্রতিবেদনে দেখা যায়, কর্ণফুলীতে কেবল সার কারখানাগুলোই প্রতিদিন ১৪৫ ঘনমিটার দূষিত পানি, ৩৫ মেট্রিক টন চায়না মাটি, ৪ মেট্রিক টন সেলুলোজ এবং সোডিয়াম হাইড্রক্সাইড ফেলে।

এছাড়া বিষাক্ত বর্জ্য নিঃসরণকারী শিল্পের মধ্যে রয়েছে ২৬টি টেক্সটাইল, একটি তেল শোধনাগার, একটি সার কারখানা, দুটি রাসায়নিক শিল্প, পাঁচটি মৎস্য প্রক্রিয়াকরণ ইউনিট, পাঁচটি কীটনাশক শিল্প প্রতিষ্ঠান। চট্টগ্রামের ১৭টি শিল্পজোনের প্রায় ৩০০ শিল্প প্রতিষ্ঠান এই দূষণের জন্য দায়ী। এদিকে চট্টগ্রাম মহানগরে ৫০ হাজার স্যানিটারি এবং ২৪ হাজার কাঁচা শৌচাগার রয়েছে। চট্টগ্রাম ওয়াসার কোনো স্যুয়ারেজ সিস্টেম না থাকায় এ বর্জ্য সরাসরি নদীর পানিতে মিশে যাচ্ছে।

পরিবেশ অধিদপ্তর জানায়, কর্ণফুলীর প্রতি লিটার পানিতে জৈব-রাসায়নিক অক্সিজেন (বিওডি) পাওয়া গেছে ১৫ থেকে ২৫ মিলিগ্রাম পর্যন্ত, যা ৬ মিলিগ্রামের নিচে থাকার কথা।

২০১৬ সালের ১৬ আগস্ট কর্ণফুলী নদীর দুই তীরে গড়ে ওঠা অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদে রায় দেন হাইকোর্ট। ২০১৯ সালে সুপ্রিমকোর্ট পূর্ণাঙ্গ রায়ে ২ হাজার ১৮১টি অবৈধ স্থাপনা সরাতে ৯০ দিনের সময় বেঁধে দেন জেলা প্রশাসনকে। সে বছর প্রথম ধাপে ২৩০টি স্থাপনা উচ্ছেদ করে ১০ একর ভূমি উদ্ধার করে জেলা প্রশাসন। কিন্তু এরপর থেকে কর্ণফুলীর তীর থেকে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ অভিযান বন্ধ রয়েছে।

বিএনএ/এ আর

Loading


শিরোনাম বিএনএ