রাতের বেলায় মুক্তিবাহিনীর গুলির শব্দ পেলে সে পথে তারা হাঁটে না। প্রথমে তাদের পরম ভৃত্য রাজাকারদের পাঠিয়ে খোঁজখবর নেই, পরে বিশ্বাসযোগ্য মনে হলে সেখানে যায়।
একবার রাতের বেলায় গেরিলারা একজন পাক দালালের বাড়ী ঘেরাও করে তাকে হত্যা করে। দালালের এক শুভানুধ্যায়ী ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে যায় পার্শ্ববর্তী জল্লাদবাহিনীর ক্যান্টনমেন্টে। খবর দেয়, ‘হুজুর, অমুককে মুক্তিবাহিনী এসে মেরে ফেলল। এখনো ওরা আছে, রাজাকারদের খুঁজে বেড়াচ্ছে। কাপুরুষ পশুপ্রবর, খেঁকিয়ে উঠে বলল, ‘হাম কিয়া করেগা। মুক্তিফৌজ আয়া হ্যায়, তুম লোগো যা কর হঠা দো। আভি হাম নেহি যায়েগা।’ নিরাশ হয়ে ফিরে এল দালালের সাগরেদ।
এখন ফল হয়েছে অন্যরকম। এখন বরং পশুগুলো এলে এইসব ঘা খাওয়া মানুষগুলোই এসে খবর দেয়, ‘ওরা এসেছে। তাদের সংখ্যা এবং শক্তি সমস্তই পুঙ্খানুপুঙ্খরূপে জানিয়ে দেয় মুক্তিবাহিনীকে।
যারা নেহাৎই প্রাণের দায়ে শান্তি কমিটির সদস্য হয়েছিল বা রাজাকারে নাম লিখিয়েছিল, আজ তারা সর্বতোভাবে সাহায্য করতে প্রস্তুত। শুধু তাই নয়, মুক্তিবাহিনীর প্রচণ্ড মারের সামনে টিকতে না পেরে দলে দলে রাজাকার আত্মসমর্পণ করছে। জঙ্গীশাহীর জঘন্যতার রূপটাও ফাঁস করে দিচ্ছে।
আজ স্পষ্টভাবে প্রমাণ হয়ে গেছে ভাড়াটে সৈন্যের চেয়ে হাজার গুণ শক্তিশালী দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ সৈনিক। আমাদের গেরিলারা আজ তাই হয়ে উঠেছে অজেয়, দুর্বার।
আর পক্ষান্তরে জল্লাদবাহিনীর সাম্রাজ্য বাসনা তাসের ঘরের মতো ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাচ্ছে।
দু:সাহসী গেরিলাদের এবং মুক্তিবাহিনীর আক্রমণে খতমকৃত জালেম বাহিনীর অফিসারদের জন্য আর কতো কাঠের বাক্স লাগবে, তার খতিয়ান কি করেছে ইয়াহিয়া খান?
(মোস্তাফিজুর রহমান রচিত)
(তথ্যসুত্র:বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ দলিলপত্র -৫ম খন্ড। পৃষ্ঠা নং ১০১) চলবে।
আগের পর্ব সমূহ :
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭৩
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭২
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭১
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ : দলিলপত্র-পর্ব-৭০
সম্পাদনা: এইচ চৌধুরী, গ্রন্থনায়: ইয়াসীন হীরা