বিএনএ, আদালত প্রতিবেদক :সচিবালয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি কক্ষ থেকে সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র ও ডকুমেন্টের ছবি তুলে চুরির অভিযোগে প্রথম আলোর সাংবাদিক রোজিনা ইসলামের বিরুদ্ধে করা মামলার জামিন শুনানির উপর আদেশের জন্য আজ রোববার (২৩ মে) দিন ধার্য করা রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (২০ মে) ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট বাকী বিল্লার ভার্চুয়াল আদালতে ১২ টা ৫০ মিনিটে জামিন শুনানি শুরু করেন তার আইনজীবী এহসানুল হক সমাজি ও প্রশান্ত কুমার কর্মকার।অপরদিকে রাষ্ট্রপক্ষের জামিনের বিরোধিতা করেন হেমায়েত উদ্দিন হিরোন।
জামিন শুনানি শেষে আদালত জামিন বিষয়ের আদেশ পরে দিবেন বলে জানান।কিছুক্ষণ পরই আদালত তার জামিন শুনানির উপর আদেশের জন্য রোববার (২৩ মে) দিন ধার্য করেন।
এর আগে মঙ্গলবার (১৮ মে) তাকে শাহবাগ থানা থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসীমের আদালতে হাজির করা হয়।এসময় তার বিরুদ্ধে করা মামলায় পাঁচ দিনের রিমান্ড নিতে আবেদন করেন মামলার তদন্ত কর্মকর্তা।অপর দিকে আসামিপক্ষের আইনজীবী রিমান্ড বাতিল ও জামিন চেয়ে আবেদন করেন।আদালত উভয়পক্ষের শুনানি শেষ রিমান্ড নামঞ্জুর করে তাকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন এবং জামিন শুনানির জন্য ২০ মে দিন ধার্য করেন।
গত সোমবার (১৭ মে) সাড়ে তিনটার দিকে রোজিনা ইসলাম পেশাগত দায়িত্ব পালনের জন্য সচিবালয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান।এই সময় স্বাস্থ্য সচিবের পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে কেউ না থাকায় তিনি কিছু কাগজপত্র ও ডকুমেন্টের ছবি তুলে চুরির অভিযোগে তাকে ঐ রুমে আটক করে দায়িত্বরত এক পুলিশ সদস্য।
প্রায় পাঁচ ঘণ্টা আটকে রাখার পর তাকে রাত সাড়ে ৮টার দিকে রোজিনা ইসলামকে সচিবালয় থেকে পুলিশি পাহারায় শাহবাগ থানায় নেওয়া হয়। তার বিরুদ্ধে সরকারি নথি সরানো ও ছবি তোলার অভিযোগে ১২টার দিকে তার বিরুদ্ধে শাহবাগ থানায় স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের উপ-সচিব সিব্বির আহমেদ ওসমানী একটি মামলা দায়ের করেন।
এই মামলার একমাত্র আসামি করা হয়েছে তাকে।
বিকেলে স্বাস্থ্য সচিবের ব্যক্তিগত কর্মকর্তা (পিএস) সাইফুল ইসলামের রুমে আটকে রাখার পর রোজিনা ইসলাম সহকর্মীদের বলেন, ‘সচিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য আমি পিএস সাইফুল ইসলামের রুমে অপেক্ষা করছিলাম। এ সময় তিনি নথিপত্র গায়েবের অভিযোগ তুলে আমার সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন। একপর্যায়ে একজন পুলিশ কনস্টেবল ডেকে আমার শরীরে হাত দেন। সাজানো অভিযোগে আমাকে আটকে রাখা হয়েছে। আমি কোনো নথিপত্র নিইনি।’
পরে রাত ৯টার দিকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মাইদুল ইসলাম প্রধান সাংবাদিকদের জানান, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম সচিবের পিএসের রুমে ঢুকে মোবাইলে কিছু গুরুত্বপূর্ণ ফাইল-নথির ছবি তোলেন। আর কিছু কাগজপত্র তিনি সঙ্গে নিয়ে যাচ্ছিলেন। একজন অতিরিক্ত সচিব, পুলিশের একজন সদস্য তাকে চ্যালেঞ্জ করে বলেন, এটা নিয়ে যেতে পারেন না। তখন পুলিশকে জানানোর পর মহিলা পুলিশ এসেছে। এখন অভিযোগ দায়ের করা হয়েছে। তাকে থানায় নেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, রোজিনা ইসলামকে আটকে রাখার খবর পেয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সাংবাদিকরা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে যান। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়ন, ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটি ও বাংলাদেশ সেক্রেটারিয়েট রিপোর্টার্স ফোরামের নেতারা সেখানে উপস্থিত হন।পরে রোজিনা ইসলাম কে শাহবাগ থানায় আনা হলে তার মুক্তির দাবিতে শাহবাগ থানার সামনে শতাধিক সাংবাদিক বিক্ষোভ করেন।তাকে গ্রেফতারের পর থেকেই দেশে ও দেশের বাহিরের গণমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনার ঝড় উঠে।ঢাকাসহ দেশ ব্যাপী সাংবাদিক সংগঠন গুলো বিক্ষোভ ও মানববন্ধন করেন।গ্রেফতারের ঘটনায় উদ্বেগ জানিয়েছেন জাতিসংঘ মহাসচিবসহ বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তজার্তিক মানবাধিকার সংগঠন।
বিএনএ নিউজ/এসবি,জেবি