বিএনএ, ঢাকা: প্রতীক ছাড়া উপজেলা নির্বাচন হলে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কি না এমন প্রশ্নের জবাবে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, শেখ হাসিনা তো জনগণের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করেন না। তিনি প্রভুদের সমর্থন নিয়ে একতরফা তামাশার নির্বাচন করেছেন। বিএনপির এখন পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। দলের নীতিনির্ধারকরা পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে নিবেন। অদ্যাবধি বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না।
সোমবার (২৩ জানুয়ারি) দুপুরে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
রিজভী সরকারের সমালোচনা করে বলেছেন, দেশের অভ্যন্তরে মানুষের যেমন নিরাপত্তা নেই সীমান্তে কি বাংলাদেশিদের নিরাপত্তা রয়েছে? এতদিন দেখেছি, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফের হাতে সাধারণ বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। আর এখন দেখছি, সীমান্তেও বিজিবির নিরাপত্তা নেই।
তিনি বলেন, আমরা উদ্বেগের সঙ্গে বলতে বাধ্য হচ্ছি, শেখ হাসিনার ক্ষমতা লোভের ফলশ্রুতিতে নতজানু পররাষ্ট্রনীতির কারণে বাংলাদেশ আজ তাবেদার রাষ্ট্র। অবৈধ সরকার আজ দেশবিরোধী ঘৃণ্যচক্রান্তের ক্রীড়নক। সীমান্তরক্ষিবাহিনী বিজিবি পর্যন্ত নিরাপত্তাহীনতায়। বাংলাদেশের সঙ্গে ভারতের ক্ষমতাসীন সরকারের আচরণ এখন আর ‘বন্ধুপ্রতিম’ নয় ‘বন্দুক প্রতিম’। সীমান্তে বিজিবি সদস্য বিএসএফের গুলিতে মারা গেছেন। এর কী জবাব দিবেন শেখ হাসিনা? অথচ এ নিয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কোনো বক্তব্য বা বিবৃতি দেওয়া হয়নি।
রিজভী আরও বলেন, ভোটারবিহীন গণবিচ্ছিন্ন সরকার বাংলাদেশকে উপসংহারহীন পরিস্থিতির দিকে ধাবিত করছে। নিজেদের অমরত্ব লাভের জন্য ডামি সরকারের প্রধান শেখ হাসিনা দেশকে এক গভীর অন্ধকারের দিকে নিয়ে যাচ্ছেন। দেশকে ক্রমাগত স্বেচ্ছাতন্ত্রের বিষাক্ত আবর্তের মধ্যে নিপতিত করেছেন তিনি। প্রাণবন্ত গণতন্ত্রকে ধ্বংস ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে ক্রমান্বয়ে খর্ব করে লুট, দাঙ্গা, হত্যা, ধ্বংস আর রক্তাক্ত উন্মাদনা সমার্থক অবৈধ আওয়ামী সরকার দেশকে অর্থনৈতিকভাবে দেওলিয়া হওয়ার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব বলেন, দ্রব্যমূল্যের দামের চাপে নিঃস্ব হয়ে যাচ্ছে সাধারণ মানুষ। শ্রমজীবী মানুষকে এখনো রক্ত দিয়ে অধিকার আদায়ের সংগ্রাম করতে হচ্ছে। এই ডামি সরকার ডাকাতদের সরকার। ওরা নিজেরাই ডাকাত, ভোট ডাকাতি করেছে। বিরোধী নেতাকর্মীদের জেলে পুরে বাড়ি ছাড়া করে হামলা গায়েবি মামলা দিয়ে খুন গুম নিষ্পেষণ করে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের নামে আওয়ামী লীগের কাউন্সিল মার্কা ভোট নাটক মঞ্চায়ন করে। গতকাল ডামি ভোটের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘৭ জানুয়ারির নির্বাচন নতুন ইতিহাস তৈরি করেছে। ভোটে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। কিন্তু কিছু আঁতেল নির্বাচন নিয়ে ধূম্রজাল সৃষ্টির চেষ্টা করছে।’ তার এই বক্তব্য বেতালমার্কা নির্লজ্জতা। তিনি যে ইতিহাস গড়েছেন তাহলো ভোট ডাকাতির এক নজীরবিহীন অভিনব দৃশ্য। এই আমি-ডামির পাতানো ভোটারবিহীন নির্বাচনকে শেখ হাসিনা বলছেন, ভোটে জনগণের মতের প্রতিফলন ঘটেছে। বাস্তবতা হলো জনগণের মতের প্রতিফলন নয়, সেটা হলো এক ক্ষমতার নেশায় আচ্ছন্ন একটি অপরাধপ্রবণ অবৈধ ক্ষমতা দখলকারীদের ভোট নিয়ে তেলেসমাতি। আর যে কারণে জনগণ একযোগে ভোট বর্জন করেছেন। সন্ত্রাসীদের কায়দায় দখলদার অবৈধ প্রধানমন্ত্রীর মিথ্যা কথা চেঁচানোর রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। প্রতিনিয়ত তারা লোক হাসানোর পাত্র হচ্ছেন। মিথ্যার বাড়াবাড়িতে কোনো বিজয় হতে পারে না।
প্রতীক ছাড়া উপজেলা নির্বাচন হলে বিএনপি কি অংশ নেবে? এমন প্রশ্নের জবাবে রিজভী বলেন, আমরা বরাবরই বলি শেখ হাসিনার অধীনে নির্বাচনের ধরন সকলে দেখছেন বা জানেন। ২০১৪ ও ২০১৮ সালের নির্বাচনেও প্রমাণিত হয়েছে। শেখ হাসিনা তো জনগণের ভোটাধিকারে বিশ্বাস করে না। তিনি প্রভুদের সমর্থন নিয়ে একতরফা তামাশার নির্বাচন করেছেন। বিএনপির এখন পর্যন্ত যে সিদ্ধান্ত এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচনে অংশ নেবে না। দলের নীতিনির্ধারকরা পরবর্তী কোনো সিদ্ধান্ত নিলে নিবেন। অদ্যাবধি বিএনপি কোনো নির্বাচনে যাবে না।
রিজভী বলেন, বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সম্পর্কে বিভিন্ন অনলাইন ও সংবাদ মাধ্যম কাল্পনিক তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। আমি এর তীব্র নিন্দা জানাই।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মনিরুল হক চৌধুরী, তাহসিনা রুশদির লুনা, স্বাস্থ্যবিষয়ক সম্পাদক ডা. মো. রফিকুল ইসলাম, কেন্দ্রীয় নেতা মো. মুনির হোসেন, আসাদুল করিম শাহীন, আমিনুল ইসলাম, তারিকুল আলম তেনজিং, ছাত্রদলের ডা. তৌহিদ আউয়াল প্রমুখ।
বিএনএনিউজ/ বিএম/ হাসনা