বিএনএ ডেস্ক: জনগণের জন্য সরকারের কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কোনো ব্যক্তি যেন খাদ্যের অভাবের শিকার না হয়, তা আমরা গুরুত্বসহকারে নিশ্চিত করেছি।
প্রধানমন্ত্রী শুক্রবার গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপে (জিসিআরজি) ভার্চুয়ালি অংশ নিয়ে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন। খবর বাসসের।
তিনি কঠিন সময়ে জনগণের সহায়তায় তার সরকারের কিছু পদক্ষেপের কথা উল্লেখ করেন। সরকারপ্রধান বলেন, ‘এতে আমাদের অর্থনীতির ঘুরে দাঁড়ানোর কিছু লক্ষণ প্রকাশ করে যা আমাদের স্বস্তির অনুভূতি দেয়।’
তিনি বলেন, ‘আমাদের এই পর্যায়ে পৌঁছাতে কিছু কঠিন আর্থিক ও নীতিগত সিদ্ধান্ত নিতে হয়। এছাড়া আমাদের অপ্রয়োজনীয় ও বিলাসদ্রব্য আমদানি সীমিত করতে হয়, জ্বালানি খাতে গুরুত্বপূর্ণ ভর্তুকি প্রত্যাহার করতে হয়, সরকারি খাতে সামগ্রিক ব্যয় হ্রাস করতে হয়, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা হিসাবে আইএমএফের কাছ থেকে ৪.৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের ঋণ প্যাকেজ নিয়ে আলোচনা করতে হয়, মুদ্রাস্ফীতি কমিয়ে রাখতে কঠোর পরিশ্রম করতে হয় এবং আমাদের জনগণকে কোনো জমি অনাবাদি জমি না রেখে খাদ্য উৎপাদনে উৎসাহিত করতে হয়।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘আমরা গুরুত্ব সহকারে নিশ্চিত করেছি যে—কোনো ব্যক্তি যেন খাদ্যের অভাবের শিকার না হয়।’
প্রধানমন্ত্রী ইউক্রেন যুদ্ধ অবসানের জরুরি প্রয়োজনীয়তার ওপর আবারও জোর দিয়ে বলেন, ‘ক্রমবর্ধমান অস্থিতিশীলতার এই সময়ে ভবিষ্যতের ধকল মোকাবিলায় বিশ্ব সম্প্রদায়ের মধ্যে দুর্বলদের জন্য সহনশীলতা তৈরিতে স্পষ্টত আন্তর্জাতিক সহযোগিতা আবশ্যক।’
তিনি বলেন, ‘প্রলম্বিত যুদ্ধ এবং আরোপিত নিষেধাজ্ঞা ও পাল্টা নিষেধাজ্ঞা বিশ্বকে অস্থিতিশীল করে চলেছে। যুদ্ধের প্রতিটি দিন সংঘাতপূর্ণ অঞ্চলে এবং বিশ্বের দূরতম প্রান্তে অনেক জীবন কেড়ে নিচ্ছে এবং ধ্বংস করছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘দুঃখজনকভাবে আমরা আজকে যখন ক্রমবর্ধমান সংকট এবং মানবতার ওপর এর বিধ্বংসী প্রভাব নিয়ে চিন্তাভাবনা করছি, তখন ইউক্রেনে সংঘাত চলছে। প্রকৃতপক্ষে, প্রতিদিন যুদ্ধে নতুন নতুন অত্যাধুনিক অস্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে যা আরও বেশি ধ্বংস ডেকে আনছে এবং সারা বিশ্বের মানুষের জীবনে মারাত্মক বিরূপ প্রভাব ফেলছে।’
দারিদ্র্য ও বৈষম্য তীব্রভাবে বাড়ছে এবং দরিদ্র দেশগুলোর ঋণের বোঝা বেড়ে যাচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এসব সমস্যা এবং অন্যান্য ধাক্কা বিশ্বজুড়ে খাদ্য, শক্তি ও অন্যান্য পণ্যের দাম বাড়িয়েছে, যার ফলে টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রার অগ্রগতিতে বিলম্ব হচ্ছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘বাংলাদেশ জ্বালানি ও খাদ্য আমদানিকারক দেশ হিসেবে ক্রমবর্ধমান আমদানি ব্যয়, মূল্যস্ফীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভের চাপে ভুগছে।’
এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী ভবিষ্যতের ধকল মোকাবিলায় সহনশীলতা তৈরি করতে তার কয়েকটি নির্দিষ্ট চিন্তাভাবনা তুলে ধরেন।
শেখ হাসিনা তার প্রথম চিন্তায় বলেন, ‘আমাদের জরুরিভাবে একটি সংস্কারকৃত আন্তর্জাতিক আর্থিক কাঠামো প্রয়োজন যা স্বল্পোন্নত ও উন্নয়নশীল দেশগুলোকে বিনাশর্তে রেয়াতি, স্বল্প-মূল্যের, স্বল্প সুদের তহবিলে প্রবেশাধিকারসহ আর্থিক সুবিধা দেবে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর অবশ্যই জরুরি অবস্থার সময় আইএমএফের এসডিআর তহবিলের ন্যায়সঙ্গত অ্যাক্সেসসহ সংকট ও বিপর্যয়কালে তহবিলে সহজ অ্যাক্সেস থাকতে হবে। এছাড়া, আইএফআই ও এমডিবি থেকে নিম্ন সুদে তহবিল প্রাপ্তির সুযোগ থাকতে হবে।’
‘দ্বিতীয়ত, যে কারণগুলো খাদ্যের মূল্য ও অ্যাক্সেসকে প্রভাবিত করে- যেমন রপ্তানি বিধিনিষেধ, মজুদ ও সরবরাহ চেইন বিকৃতি- এসবের সুরাহা করতে হবে। এ প্রসঙ্গে আমরা খাদ্য সরবরাহের উন্নতিতে (জাতিসংঘ) মহাসচিবের বাজার উন্মুক্ত রাখা, রপ্তানি নিষেধাজ্ঞা অপসারণ এবং খাদ্য মজুদ ছেড়ে দেয়ার আহ্বানকে পূর্ণ সমর্থন করি।’
প্রধানমন্ত্রী ব্ল্যাক সি ইনিশিয়েটিভের জন্য জাতিসংঘ মহাসচিবকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, ‘মানুষকে খাদ্য দিতে এবং জীবন বাঁচাতে এটি আরও সম্প্রসারণ করা দরকার।’
তৃতীয় পর্যবেক্ষণে শেখ হাসিনা বলেন, ‘অভ্যন্তরীণ জ্বালানি সংমিশ্রণ এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির মাধ্যমে জ্বালানি আমদানি হ্রাসের পাশাপাশি জ্বালানি শক্তিকে বিচক্ষণতার সাথে ব্যবহার করতে হবে। আমাদের সরকার নীতি সহায়তা প্রদান করে এবং জ্বালানি খাতে ও সবুজ জ্বালানির রূপান্তরে স্থানীয় সরকারি ও বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করার মাধ্যমে জ্বালানির রূপান্তরকে সহায়তা দেয়।’
খাদ্য ও জ্বালানি নিরাপত্তা এবং জলবায়ু পরিবর্তন পরস্পর সম্পর্কিত উল্লেখ করে শেখ হাসিনা তার চতুর্থ চিন্তাধারায় বলেন, ‘জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়ানো জলবায়ুু পরিবর্তনকে ত্বরান্বিত করে যা প্রাকৃতিক দুর্যোগের পৌনপুন্য ও তীব্রতা বাড়ায়। এটি আবার কৃষি, খাদ্য উৎপাদন এবং মানুষের বাস্তুচ্যুতিকে প্রভাবিত করে। তাই টেকসই জ্বালানি, খাদ্য উৎপাদনে উত্তরণ এবং জলবায়ু পদক্ষেপ অপরিহার্য।’
জলবায়ু পরিবর্তন ইস্যু প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “এই বছর (২০২৩) প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন পর্যালোচনা ও মূল্যায়নের কথা রয়েছে। ‘আমরা ‘ক্ষয়ক্ষতি তহবিল’-এ সুনির্দিষ্ট অগ্রগতি এবং বিদ্যমান জলবায়ু তহবিলে প্রবেশাধিকার সুবিন্যস্ত হয়েছে দেখতে চাই।”
শেখ হাসিনা বলেন, ‘এছাড়া শিপিং সেক্টরে প্রস্তাবিত কার্বন শুল্ক দ্বারা উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রভাবিত হওয়া উচিত নয়। আমরা জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবিলায় গ্লোবাল শিল্ডের আওতায় বিভিন্ন প্রকল্পগুলো চালু হয়েছে এমনটি দেখতে পাব বলে আশা করছি।’
বিএনএনিউজ২৪/ এমএইচ