বিএনএ, সীতাকুণ্ড: চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডের দুর্গম পাহাড়ী এলাকা জঙ্গল সলিমপুরের শীর্ষ সন্ত্রাসী ও আলিনগরের স্বঘোষিত রাজা ইয়াছিনের আলীনগরে দিনব্যাপী অভিযান চালিয়েছে জেলা প্রশাসন। শুক্রবার(২২ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬ টা পর্যন্ত টানা ৮ ঘন্টা প্রশাসনের বিভিন্ন দপ্তরের সমন্বয়ে চালানো এ অভিযানে অংশ নেয় পুলিশ ও র্যাবের বিশাল বাহিনী।
অভিযানকালে সন্ত্রাসী ইয়াছিনের বিশাল আকৃতির বেশ কয়েকটি পাহাড় কেটে প্লট বিক্রির মহোৎসব দেখে বিস্মিত হন প্রশাসনের কর্মকর্তারা। এসময় ঘটনাস্থল থেকে পাহাড় কাটায় ব্যবহৃত ৩টি স্কেবেটর,৬টি ড্রাম ট্রাক ও একটি ট্রাকসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম জব্দ করা হয়।
অভিযানের নেতৃত্বে ছিলেন সীতাকুণ্ডের সহকারী কমিশনার (ভূমি) ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো. আশরাফুল আলম,জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আব্দুল্লাহ আল মামুন,সীতাকুণ্ড সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মো. আশরাফুল করিম,সীতাকুণ্ড থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ,পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ফেরদৌস আনোয়ার,র্যাবের সহকারী পরিচালক জিন্নাতুল ইসলাম প্রমুখ। এসময় র্যাব ও পুলিশের যৌথবাহিনী অভিযানে পূর্ণ সহযোগিতা করে।
নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট মো.আশরাফুল আলম জানান,এই অভিযানের পরিকল্পনা করা হয় খুব গোপনে। কিন্তু এরপরও যখন ম্যাজিষ্ট্রেট,র্যাব ও পুলিশের বিভিন্ন টিম ঘটনাস্থলের কাছাকাছি আসার খবর পেয়ে দুষ্কৃতিরা পালিয়ে যায়। তবে সেখানে গিয়ে দেখা যায় বিপুল পরিমান পাহাড় কেটে প্লট তৈরী করেছে ইয়াছিনের দলবল। পাহাড়ের পর পাহাড় কেটেছে তারা। শেষে সেখান থেকে ৩টি স্কেবেটর,৬টি ড্রাম ট্রাক ও ১ ট্রাক জব্দ করা হয়েছে। এসব ঘটনায় মামলা দায়েরের প্রক্রিয়া চলছে। এছাড়া খুব শীঘ্রই সেখান থেকে সব অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করা হবে বলেও জানান তিনি।
সীতাকুণ্ড থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ জানান,সন্ত্রাসীদের নেতৃত্বে অবৈধ বসতি স্থাপনের মাধ্যমে জঙ্গল সলিমপুরকে কয়েকটি সমাজে বিভক্ত করেছে সন্ত্রাসীরা। তাদের নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে বিভিন্ন সমিতি। এসব সমিতির হিসেবে গত দুই দশকে এই এলাকায় লক্ষাধিক মানুষের বসতি স্থাপিত হয়েছে। এদের কাছ থেকে নানান অযুহাতে অর্থ আদায় করেন ইয়াছিন-মশিউররা। এভাবে আঙ্গুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়ায় এখন ধরাকে সরা জ্ঞান করছে এই বাহিনী। প্রশাসনের কর্মকর্তাদেরও তেমন একটা পরোয়া করে না তারা।
সম্প্রতি চট্টগ্রামের প্রশাসনের উর্দ্ধতন কর্মকর্তারা এই এলাকা পরিদর্শন করে ফিরে যাবার পথে তাদের গাড়ি বহর থেকে এক ইউপি সদস্যকে টেনে নামিয়ে ব্যাপক মারধর করেছে ইয়াছিনের বাহিনী। এই বিষয়টি প্রশাসনকে ভাবিয়ে তোলে। এরপরই মূলত বেপরোয়া ইয়াছিনের লাগাম টেনে ধরার পরিকল্পনা নিয়ে অভিযান শুরু হয়। ইউপি সদস্যের উপর হামলার মামলায় ইতিমধ্যেই গ্রেপ্তার হয়েছে ইয়াছিন আলী (৫৫)। পুলিশ তাকে রিমান্ডেও এনেছে। এরই মধ্যে তারা জানতে পারেন সলিমপুরে ইয়াছিনের সাম্রাজ্যে আলীনগর এলাকায় ইয়াছিন না থাকলেও তার বাহিনী একের পর এক পাহাড় কেটে সমতল ভূমি ও প্লট তৈরী করছে। ফলে শুক্রবার সকাল ১০টা থেকে সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সেখানে যৌথ অভিযান চালানো হয়।
বিএনএ/সবুজ শর্মা শাকিল,ওজি