বিএনএ বিশ্ব ডেস্ক : ১ফেব্রুয়ারি সামরিক জান্তা জরুরি অবস্থা জারি করে ক্ষমতা দখল করার পর হতে মিয়ানমারে চলছে অসহযোগ আন্দোলন। এতে অনেক সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীর পাশাপাশি দেশটির সব রাজনৈতিকদল ও সামাজিক সংগঠনের কর্মীরা অংশ নিচ্ছে। মিয়ানমারের বিভিন্ন প্রদেশ ও অঞ্চলে চলছে সেনাশাসন বিরোধী তীব্রগণ আন্দোলন। সরকারি হাসপাতালগুলোর ৮০% ডাক্তার ও স্বাস্থ্যকর্মীরা সরকার বিরোধী জোটে যোগ দেয়ায় কার্যত দেশটির সরকারি হাসপাতালগুলো পরচিালনা ব্যবস্থা ভেঙ্গে পড়েছে। জান্তা বিরোধী আন্দোলনে পুলিশ ও সেনাদের গুলি ও নির্যাতনে দেশটির সাতশতাধিক রাজনৈতিক কর্মী নিহত হয়েছে। এদের মধ্যে নির্বিচার গুলি বর্ষনে প্রাণ হারিয়েছে ৩০টিরও বেশি শিশু কিশোর। সূত্র: দি ইরাবতী।
ডাক্তার,নার্সসহ স্বাস্থ্যখাতের সাথে জড়িত ১০সহস্রাধিক মানুষ সরকার বিরোধী আন্দোলনে হতাহতদের নানাভাবে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। বেসরকারি হাসপাতাল ও বাসাবাড়িতে তারা গোপনে চিকিৎসা সেবা চালিয়ে যাচ্ছেন। অনেকে অজ্ঞাত স্থান থেকে ফোনে চিকিৎসা পরামর্শ দেন।
মিয়ানমারে প্রায় ৩০হাজার ডাক্তার রয়েছে। তারমধ্যে সরকারি হাসপাতালে চাকরি করেন ২০হাজার জন। সরকারি হাসপাতালের ডাক্তারদের ৭৫ভাগই সিভিল ডিজওবিডেন্স মুভমেন্ট(সিডিএম)এর সাথে জড়িত। জান্তা সরকার ৩০জনের বেশি সিনিয়র ডাক্তারকে সিডিএমএর সাথে জড়িত থাকার অপরাধে ইতোমধ্যে গ্রেফতার করেছে।
ডাক্তারদের প্রতি জান্তার হুমকি: কাজে যোগ দাও নয়তো কারাবরণ
সামরিক সরকার মঙ্গলবার ১৩৯জন প্রখ্যাত ডাক্তারকে অবিলম্বে সরকারি হাসপাতালে চাকুরিতে যোগ দিতে বলেছে অন্যথায় তাদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা জারী করা হবে। সরকারি আদেশ লংঘনের দায়ে এসব ডাক্তারকে ৩-৪বছর কারাবরণ করতে হতে পারে। ইয়াঙ্গুন ও মান্দালার এক তৃতীয়াংশ বেসরকারি হাসপাতালসহ সারাদেশে ৪শতাধিক বেসরকারি হাসপাতাল জান্তা সরকার আন্দোলনকারীদের চিকিৎসা দেয়ার অজুহাতে ইতোমধ্যে বন্ধ করে দিয়েছে।খবরে বলা হয়, দেশটিতে ১ হাজার২৬২টি প্রাইভেট হাসপাতাল রয়েছে।
আন্দোলনে সক্রিয় অংশ নেয়া ডাক্তাররা বলেন, জান্তা সরকারকে দমাতে সবচেয়ে বড় অস্ত্র হল চিকিৎসক ধর্মঘট। এ কারণে সরকারি হাসপাতালসমূহ অচল থাকায় জান্তা সরকার অনেক বেশি বেকায়দায়।ধর্মঘটি ডাক্তাররা আন্দোলনকারীদের বিনা খরচে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন। সবারই একটাই উদ্দেশ্য দেশে গণতন্ত্র পুন প্রতিষ্ঠা করা, রাজনৈতিক নেতাদের কারাগার থেকে মুক্ত করা।
অন্যদিকে সিভিল ডিজওবিডেন্স মুভমেন্ট(সিডিএম)এবং বিরোধী রাজনৈতিক দল জোট ও গোষ্টির সমন্বয়ে গড়ে তোলা ছায়া সরকারের আহবানে মিয়ানমারের জনগণ সবধরনের সরকারি ট্যাক্স প্রদান বন্ধ রেখেছে। সরকারি বেসরকারি অনেক বড় বড় ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান পদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীর অভাবে পরিচালনা করা যাচ্ছে না। বন্ধ রয়েছে এ সব প্রতিষ্টান।
কাচিন প্রদেশে তীব্র প্রতিরোধ:
কাচিন প্রদেশে জান্তা বিরোধী আন্দোলনে গুলি চালিয়ে ২জনকে হত্যার প্রতিবাদে কাচিন ইন্ডিপেন্ডডেন্ট আর্মি ( কে আইএ) মিয়ানমার পুলিশ ও সেনাবাহিনীর বিভিন্ন চৌকি ও ঘাটির ওপর রাতের অন্ধকারে চোরাগুপ্তা হামলা অব্যাহত রেখেছে। প্রদেশটিতে ১৪জন মিয়ানমার পুলিশ নিহত হয়েছে। কাচিনের সংখ্যালঘু রাজনৈতিক দলগুলো জান্তাবিরোধী জোটে ও ছায়া সরকারে যোগ দিয়েছে। পুলিশ নিহত হবার পর থেকে একাধিকবার মিয়ানমার সেনাবাহিনী প্রদেশটিতে বিমান থেকে গোলা বর্ষন করেছে। এ সব ঘটনায় ভীতসন্ত্রস্ত কয়েকহাজার গ্রামবাসী বার্মা-থাই সীমান্তে আশ্রয় নিয়েছে।
সেনা লিডার সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লা সম্প্রতি বলেছেন, ডাক্তার ও নার্সদের ধর্মঘট অবৈধ।তারা যদি শিগগির কাজে যোগ না দেয় তাহলে তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।সামরিক হাসপাতালগুলোর ডাক্তার নার্স দিয়ে বর্তমানে মিয়ানমারের সরকারি হাসপাতালগুলো পরিচালনা করা হচ্ছে। জেনারেল মিন অং হ্লা বলেন, গত ৫ ফেব্রুয়ারি থেকে ১৮ এপ্রিল পর্যন্ত সরকারি হাসপাতালগুলোতে একলাখ রোগীকে আউটডোরের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। তার মধ্যে ৫হাজার ছিল সিরিয়াস রোগী।তাছাড়া সে সময় ৯হাজার ২০০ শিশু জম্ম নিয়েছে হাসপাতালে।
বিএনএনিউজ২৪/এসজিএন