21 C
আবহাওয়া
৪:০৮ পূর্বাহ্ণ - নভেম্বর ২৩, ২০২৪
Bnanews24.com
Home » পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ার নিয়ম

পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ার নিয়ম

পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ার নিয়ম

নামাজ বা সালাত হলো আমাদের ইসলাম ধর্মের প্রধান উপাসনাকর্ম। নামাজ ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। নামাজ মূলত একটি ফার্সি শব্দ। এটি আরবি শব্দ সালাত বা সালাহ থেকে এসেছে। আরবি- ٱلصَّلَوَات‎‎ আস-সালাওয়াত এর অর্থ হলো- দোয়া, প্রার্থনা, প্রশংসা বা আশীর্বাদ’। ঈমান বা বিশ্বাসের পর নামাজই ইসলামের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ। প্রতিদিন ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্যই ফরজ। নামাজের সঠিক নিয়ম জানা তাই আমাদের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ফরজ (আরবিতে: فَرْضُ) সাধারণত দুই প্রকার। দুই প্রকার ফরজের মধ্যে নামাজ ফরজে আইনের অন্তর্ভুক্ত।

পাঁচওয়াক্ত নামাজ পড়ার নিয়ম

প্রথমে ওজুসহকারে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। নামাজের নিয়ত করে উভয় হাত কান পর্যন্ত উঠাতে হবে। এরপরে তাকবিরে তাহরিমা পড়ার পর বাম হাতের ওপর ডান হাত রেখে নাভির নিচে হাত বাঁধতে হবে। এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে পড়তে হবে – ‘সুবহানাকাল্লাহুম্মা ওয়াবি হামদিকা ওয়া তাবারা কাসমুকা ওয়া তাআলা জাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা।’বাংলা অর্থ- হে আল্লাহ! আমরা তোমারই পবিত্রতা ও প্রশংসা বর্ণনা করছি, তোমার নামই বরকতপূর্ণ এবং তোমার গৌরবই সর্বোচ্চ, তুমি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই।

এরপর অনুচ্চৈঃস্বরে আউজু বিল্লাহি মিনাশ শায়তানির রাজিম, বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ুন।

এবার সূরা ফাতিহা পড়তে হবে। শেষ হলে আমিন বলতে হবে। হানাফি মাজহাব মতে, আমিন আস্তে পড়া উত্তম। তবে জোরে আমিন বলার ব্যাপারেও ইমামদের মতামত পাওয়া যায়। সূরা ফাতিহা পড়া শেষ হলে একটি সূরা অথবা তিনটি ছোট আয়াত, যা কমপক্ষে লম্বা একটি আয়াতের সমতুল্য হয়, তাই পড়তে হবে।

ইমামরা বলেন, এই পরিমাণ তিলাওয়াত সালাত বা নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য আবশ্যক। তবে নামাজে কোরআন তিলাওয়াতের সুন্নত পরিমাণের বিষয়ের বিবরণ ফিকহের কিতাবে উল্লেখ করা আছে।

অতঃপর আল্লাহু আকবার বলে রুকুতে যেতে হবে। রুকুতে মাথা নিতম্বের বরাবর করতে হবে। রুকুতে আঙুলগুলো ছড়িয়ে দিয়ে হাঁটু আঁকড়ে ধরতে হবে। রুকুতে তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার; কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আজিম’ পড়তে হবে।

এবার রুকু থেকে ‘সামিয়াল্লাহু লিমান হামিদাহ’ বলে মাথা উঠান। মুক্তাদি হলে অনুচ্চৈঃস্বরে শুধু ‘রাব্বানা লাকাল হামদ’ বলতে হবে। এরপর তাকবির পড়ে অর্থাৎ আল্লাহু আকবার বলে সিজদায় যেতে হবে।

সিজদায় যাওয়ার সময় প্রথমে হাঁটু, তারপর হাত, তারপর উভয় হাতের মধ্যে প্রথমে নাক এবং পরে কপাল মাটিতে রাখতে হবে। নিজের পেট রান থেকে এবং বাহুকে পার্শ্বদেশ থেকে পৃথক করে রাখুন। হাত ও পায়ের আঙুলকে কিবলামুখী করে রাখতে হবে।

সিজদায় তিনবার, পাঁচবার বা সাতবার; কমপক্ষে তিনবার ‘সুবহানা রাব্বিয়াল আলা’ পড়তে হবে।

এরপর সিজদা থেকে উঠার সময় সর্বপ্রথম মাথা উঠিয়ে উভয় হাত রানের ওপর রেখে স্থিরতার সঙ্গে বসে পড়তে হবে। এরপর তাকবির বলে দ্বিতীয় সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদায়ও এরপর কমপক্ষে তিনবার তাসবিহ পড়তে হবে। বিজোড় সংখ্যায় এর বেশিও তাসবিহ পড়া যাবে। এরপর জমিনে হাত দ্বারা ঠেক না দিয়ে এবং না বসে সরাসরি তাকবির বলে দাঁড়িয়ে যেতে হবে। এ পর্যন্ত আমাদের প্রথম রাকাত সম্পন্ন হয়েছে।

এবার দ্বিতীয় রাকাত আরম্ভ হলো। এতে হাত উঠাতে হবে না, ছানাও পড়বেন না, আউজুবিল্লাহও পড়তে হবে না। তবে আগের মতো সূরা ফাতিহা ও এর সাথে অন্য একটি সূরা পড়ে রুকু-সিজদা করতে হবে। দ্বিতীয় সিজদা শেষ করে ডান পা খাড়া করে বাম পা জায়নামাজে বিছিয়ে দিয়ে তার ওপর বসে যেতে হবে। তখন হাত রাখতে হবে রানের ওপর এবং ডান পায়ের আঙুলগুলো থাকবে কিবলামুখী। অতঃপর তাশাহুদ পড়তে হবে। এরপর দরুদ শরীফ এবং দোয়ায় মাছুরা পড়তে হবে।

অতঃপর ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলতে বলতে ডানে এবং বাঁয়ে মাথা ফেরাতে হবে। সালাম ফেরানোর সময় পাশের নামাজি ব্যক্তি এবং ফেরেশতাদের কথা স্মরণ করবেন। যদি নামাজ তিন রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—মাগরিবের নামাজ, তখন প্রথম বৈঠকে তাশাহহুদের পর আর কিছু পড়বে না। বরং ‘আল্লাহু আকবার’ বলে সোজা দাঁড়িয়ে যেতে হবে।

তবে তৃতীয় রাকাতে শুধু সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। আর নামাজ যদি চার রাকাতবিশিষ্ট হয়, যেমন—জোহর, আসর ও এশার নামাজ, তখন চতুর্থ রাকাতেও শুধু সুরা ফাতিহা পড়তে হবে। এরপর প্রথম দুই রাকাতের মতো রুকু-সিজদা করে দুই রাকাত সম্পন্ন করে শেষ বৈঠকে বসবেন। সেখানে উল্লিখিত পদ্ধতিতে তাশাহহুদের পর দরুদ এবং এরপর দোয়ায়ে মাসুরা পড়ে উভয় দিকে সালাম ফেরাতে হবে।

এবার আমরা পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ সম্পর্কে জেনে নেই

ফজরের নামাজ কত রাকাত

দৈনন্দিন পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের দিনের শুরুর নামাজ হল ফজরের নামাজ। এ নামাজ অবশ্য পালনীয়। ফজরের নামাজ আদায় করেই মুসলিমরা তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম শুরু করেন। ফজরের নামাজ দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ নামাজ নিয়ে গঠিত। আপনারা নামাজের নিয়মাবলি থেকে দুই রাকাআত নামাজের জন্য নামাজের নিয়ম ও প্রয়োজনীয় দোয়া দেখে নিতে পারেন।
সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয়ের আগ পর্যন্ত ফজরের নামাজের সময়। অর্থাৎ ফজরের নামাজ খুব দ্রুত পড়ে ফেলতে হয়।

যোহর নামাজ কত রাকাত

যোহরের নামাজ দুপুর থেকে আসরের পূর্ব পর্যন্ত আদায় করা হয়। এটি দৈনিক নামাজের মধ্যে দ্বিতীয় নামাজ। যোহরের নামাজ প্রথমে চার রাকাত সুন্নত, চার রাকাত ফরজ ও এরপর দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত নফল নিয়ে গঠিত। নামাজি ব্যক্তি যদি মুসাফির অবস্থায় থাকে তাহলে সে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করতে পারে ও সুন্নত আদায় না করতে পারে। শুক্রবার যোহরের পরিবর্তে জুম্মার নামাজ আদায় করা হয়। জুম্মা ও যোহরের সময় শুরু ও শেষ হওয়ার সময়সীমা একইরকম।

আছর নামাজ কত রাকাত

দৈনিক নামাজের দিক দিয়ে তৃতীয় আছরের নামাজ বিকেলের সময় আদায় করা হয়। আসরের নামাজ চার রাকাত সুন্নত ও চার রাকাত ফরজ নিয়ে গঠিত। তবে ব্যক্তি মুসাফির অবস্থায় থাকলে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করে কসর আদায় করতে পারবেন।

মাগরিবের নামাজ কত রাকাত

দৈনিক নামাজগুলোর ক্রমের মধ্যে চতুর্থ মাগরিবের নামাজ। এটি সূর্যাস্তের পর থেকে গোধূলি পর্যন্ত আদায় করা যায়। এটিও দ্রুততম সময়ে পড়ে ফেলা উত্তম। মাগরিবের নামাজ তিন রাকাত ফরজ, দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত নফল নিয়ে গঠিত। ফরজ অংশ সাধারণত ইমামের নেতৃত্বে জামাতের সাথে আদায় করা হয় আবার একা ও আদায় করা যায়। তবে ব্যক্তি যদি মুসাফির অবস্থায় থাকে তাহলে শুধু তিন রাকাত ফরজ আদায় করতে পারে কসর হিসেবে।

এশার নামাজ কত রাকাত

এশার নামাজ  দৈনিক নামাজগুলোর মধ্যে এটি পঞ্চম। এটি রাতের সময় আদায় করা হয়। এশার নামাজের ফরজ চার রাকাত। এরপর দুই রাকাত সুন্নত, দুই রাকাত নফল নামাজ রয়েছে। এরপর তিন রাকাত বিতর নামাজ রয়েছে। তবে এটা আলাদা নামাজ। ফরজ নামাজের পূর্বে ৪ রাকাত সুন্নত নামাজ পড়া হয়। তবে এটি না পড়লে কোনো গুনাহ হবে না। ব্যক্তি মুসাফির অবস্থায় থাকলে চার রাকাত ফরজকে সংক্ষিপ্ত করে দুই রাকাত করতে পারেন কসর হিসেবে।

জুম্মার নামাজের নিয়ত

মুসলিম ধর্মাবলম্বীদের বিশেষ দিন শুক্রবার। এদিন ধর্মপ্রাণ মুসল্লিরা শরিক হন জুম্মার নামাজে। বলা হয়ে থাকে শুক্রবার তথা জুম্মাবার হচ্ছে মুসলিম জাহানের সাপ্তাহিক ঈদ।

এদিন যোহরের নামাজের পরিবর্তে দুই রাকাত জুম্মার নামাজ আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের উপর ফরজ। জুম্মার নামাজের নিয়ম ও নিয়ত তুলে ধরা হলো।

জুম্মার নামাজের রাকাতের সংখ্যা:

চার রাকাত কাবলাল জুম্মা,
দুই রাকাত ফরজ ও
চার রাকাত বাদাল জুম্মা।

চার রাকাত কাবলাল জুম্মার নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণঃ নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি কাব্‌লাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্‌ ক্বাবাতিশ্‌ শারীফাতি আল্লাহু আক্‌বার।

বাংলা অর্থ- আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে চার রাকাত কাবলাল জুম্মার সুন্নতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।

জুম্মার দুই রাকাত ফরজ নামাজের নিয়ত:

বাংলা উচ্চারণ- নাওয়াইতু আন্‌ উসকিতা আন্‌ জিম্মাতী ফারদুজ্জহ্‌রি, বি-আদায়ি রাকয়াতাই ছালাতিল্‌ জুমুয়াতি, ফারজুল্লাহি তায়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্‌ ক্বাবাতিশ্‌ শারীফাতি আল্লাহু আক্‌বার।

বাংলা অর্থঃ আমার উপর জুহরের ফরজ নামাজ আদায়ের যে দায়িত্ব রয়েছে, আমি কেবলামুখী হয়ে, জুম্মার দুই রাকাত ফরজ নামাজ আদায়ের মাধ্যমে তা পালনের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।

চার রাকাত বাদাল জুম্মার নিয়ত:
বাংলা উচ্চারণ- নাওয়াইতু আন উছাল্লিয়া লিল্লাহি তায়ালা আরবায়া রাকাআতি ছালাতি বাদাল জুমুয়াতি, সুন্নাতি রাসূলিল্লাহি তয়ালা মুতাওয়াজ্জিহান ইলা জিহাতিল্‌ ক্বাবাতিশ্‌ শারীফাতি আল্লাহু আক্‌বার।

বাংলা অর্থঃ আমি কেবলামুখী হয়ে আল্লাহ্‌র ওয়াস্তে চার রাকাত বাদাল জুম্মা সুন্নাতে মুয়াক্কাদা নামাজের নিয়ত করলাম। আল্লাহু আকবর।

জুম্মার নামাজ যাদের উপর ফরজ ও যাদের উপর নয়:
বালেগের উপর জুম্মার নামাজ পড়া ফরজ। না-বালেগের উপর বাকি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ যেমন ফরয নয়, তেমনি জুম্মার নামাজও ফরজ নয়। পুরুষের উপর জুমার নামাজ ফরজ।

যে ব্যক্তি মুকিম তার উপর জুম্মার নামাজ ফরজ নয়। যে ব্যক্তি কারও ক্রীতদাস নয়, তার উপর জুম্মার নামাজ পড়া ফরজ। পরের খরীদা-গোলাম এর উপর জুম্মা ফরজ নয়। যে সমস্ত ওজরের কারণে জামায়াতে উপস্থিত না হওয়ার অনুমতি রয়েছে, সে সমস্ত ওজরের কোনটি যার নাই, তার উপর জুম্মার নামাজ ফরজ।

জুম্মার নামাজের দিন বেশ কিছু সুন্নত রয়েছে। এদিন ভালো বা পারলে নতুন জামা বা পাঞ্জাবি পরা, খোশবু নেওয়া, হাত-পায়ের নখ কাটা সুন্নত।

আজকের (২২ মার্চ) ফজরের নামাজ কয়টায়

ফজরের নামাজের ওয়াক্ত শুরু ভোর ৫:৪৩ মিনিটে।

ফজরের নামাজের শেষ সময়

ফজরের নামাজের ওয়াক্তের শেষ সময় ভোর ৭:১১ মিনিট।

কাযা নামাজ আদায়ের নিয়ম

ভুলবশত কিংবা অন্য কোনো বিশেষ কারণে কোনো ওয়াক্তের নামাজ আদায় করতে না পারলে এই নামাজ পরবর্তী সময়ে আদায় করাকে কাজা নামাজ বলা হয়। ফরজ কিংবা ওয়াজিব নামাজ ছুটে গেলে এর কাজা আদায় করা আবশ্যক। এশার নামাজের সময় বিতেরসহ যেকোনো ওয়াজিব নামাজের কাজা করা ওয়াজিব। নফল নামাজ শুরু করার পর ওয়াজিব হয়ে যায়। কোনো কারণে নফল নামাজ নষ্ট হলে অথবা শুরু করার পর কোনো কারণে যদি ছেড়ে দিতে হয়, তাহলে এর কাজা করাও ওয়াজিব। সুন্নতে মুয়াক্কাদা এবং নফলের কাজা নেই। তবে ফজরের নামাজ সুন্নত-ফরজ উভয়টা পড়তে না পারলে সুন্নত-ফরজ একসঙ্গে কাজা করা উত্তম। জোহরের চার রাকাত সুন্নত আদায় করতে না পারলে ফরজের পরও আদায় করা যায়। তবে জোহরের ওয়াক্ত চলে গেলে সুন্নতের কাজা ওয়াজিব হবে না। জুম্মার নামাজের কাজা নেই। জুমা পড়তে না পারলে চার রাকাত জোহর কাজা পড়তে হবে।

কাজা নামাজ আদায় করার নিয়ত ও নিয়ম

কাজা নামাজ কি ‌?

নামাজ একটি গুরুত্বপূর্ণ ইবাদাত । ইসলামে ঈমানের পর নামাজের স্থান । পবিত্র কুরআনে প্রায় ৮২ আয়াতে নামাজের কথা বলা হয়েছে। শত শত হাদীসের মধ্যে নামাজের গুরুত্ব, ফজিলত ও বিধিবিধান সম্পর্কে নির্দেশনা এসেছে। তাই অন্যান্য শিক্ষার পাশাপাশি নামাজের বিষয়গুলো অর্থাৎ ফরজ , ওয়াজিব , সুন্নাত, নফল ইত্যাদি বিষয়ক শিক্ষা অর্জন করা ফরজ ।

আপনারা সেই শিক্ষা অর্জন করতে সচেষ্ট হবেন।‌ আপনাদের জানিয়ে রাখছি নামাজ মূলত দুই প্রকার ।

১. আদা

২. কাযা

আদা নামাজ কাকে বলে?

যে নামাজ নিয়মিত আদায় করা হয় তাকে আদা নামাজ বলে।

কাজা নামাজ কাকে বলে?

আর কাযা বলা হয় অনিচ্ছাকৃত ­ভুলবশত কিংবা অন্য কোন কারণে নামাজ ওয়াক্তের পড়তে না পারলে সেই নামাজ পরবর্তীতে আদায় করাকে কাজা বলে।

কাজা নামাজ কয় প্রকার?

একটু আগে কাজা নামাজের পরিচয় ‌পেয়েছেন । এবার জানুন কাজা নামাজের প্রকার। কাজা নামাজ হচ্ছে দুই প্রকার ।‌

১. ফাওয়ায়েতে কালীল

২. ফায়াওয়েতে কাসীর

কাজা নামাজের নিয়ত

নামাজের আরবী নিয়তের কোনো বাধ্যবাধকতা নেই। অন্তরে খেয়াল থাকলেই নিয়ত হয়ে যায়। যদিও বা মুখে উচ্চারণ করা উত্তম। বাজারে প্রচলিত বইগুলোতে আরবী নিয়তগুলো এক প্রকার বাড়াবাড়ি। এগুলো নির্ভরযোগ্য কোন কিতাবে আসেনি।‌

তাছাড়া মানুষ এগুলো শিখতে গিয়ে ফরয-ওয়াজিব অনেক ক্ষেত্রে শিখতে পারে না। অতএব ঐগুলিকে এড়িয়ে যান। নিয়ত কেমন হতে পারে সহজে বোঝার জন্য কয়েকটি নমুনা দিচ্ছি। হুবহু এভাবে অথবা নিজের মতো করে নিয়ত করতে পারেন।

ঈদুল ফিতরের নামাজ আদায়ের নিয়ম

মুসলমানদের অন্যতম প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর আনন্দ-উল্লাসের মধ্য দিয়ে উদযাপিত হয়। ঈদ বছরে ঘুরে আসায় অনেকেই ঈদের নামাজের নিয়ম, নিয়ত ও তাকবির ভুলে যান। ঈদুল ফিতরের নামাজ যথাযথভাবে আদায় করার জন্য নিয়ম, নিয়ত ও তাকরিব তুলে ধরা হলো-

ঈদের চাঁদ দেখার পর থেকে অর্থাৎ ৩০ রমজান ইফতারের পর প্রথম কাজই হচ্ছে তাকবির তথা আল্লাহর কৃতজ্ঞতাজ্ঞাপন করা। আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করে তাকবির পড়া। এটিই ঈদের প্রথম কাজ।

ঈদের নামাজের নিয়ত:

উচ্চারণ: ‘নাওয়াইতু আন উসাল্লিয়া লিল্লাহি তাআলা রাকাআতাইন সালাতিল ইদিল ফিতরি মাআ সিত্তাতিত তাকবিরাতি ওয়াঝিবুল্লাহি তাআলা ইকতাদাইতু বিহাজাল ইমামি মুতাওয়াঝঝিহান ইলা ঝিহাতিল কাবাতিশ শারিফাতি ‘আল্লাহু আকবার’।’

বাংলা অর্থ : আমি ঈদুল ফিতরের দুই রাকাত ওয়াজিব নামাজ অতিরিক্ত ৬ তাকবিরের সঙ্গে এই ইমামের পেছনে কেবলামুখী হয়ে আল্লাহর জন্য আদায় করছি- ‘আল্লাহু আকবার’।

ঈদের নামাজ পড়ার নিয়ম: প্রথম রাকাতে ঈমামের সঙ্গে তাকবিরে তাহরিমা ‘আল্লাহু আকবার’ বলে উভয় হাত বাঁধা। তাকবিরে তাহরিমার পর ছানা পড়া (সুবহানাকা আল্লাহুম্মা ওয়া বিহামদিকা ওয়া তাবারাকাসমুকা ওয়াতাআলা যাদ্দুকা ওয়া লা ইলাহা গাইরুকা)।

এরপর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া। তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নেওয়া। এরপর নিয়মিত নামাজের মতো রুকু ও সেজদার মাধ্যমে প্রথম রাকাত শেষ করা।

দ্বিতীয় রাকাতে সুরা মিলানোর পর অতিরিক্ত ৩ তাকবির দেওয়া। প্রথম ও দ্বিতীয় তাকবিরে উভয় হাত উঠিয়ে তা ছেড়ে দেওয়া।

তৃতীয় তাকবির দিয়ে উভয় হাত তাকবিরে তাহরিমার মতো বেঁধে নেওয়া। এরপর রুকুর তাকবির দিয়ে রুকুতে যাওয়া। সেজদা আদায় করা। বৈঠকে বসা; তাশাহহুদ, দরূদ, দোয়া মাসুরা পড়ে সালাম ফেরানোর মাধ্যমে নামাজ সম্পন্ন করা।

সালাম ফেরানোর পর তাকবির পড়া

উচ্চারণ : ‘আল্লাহু আকবর, আল্লাহু আকবার, লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবর ওয়া লিল্লাহিল হামদ।’

তারাবির নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া

রমজান মাসের রাতে এশার নামাজের চার রাকাত ফরজ ও দুই রাকাত সুন্নতের পর এবং বিতর নামাজের আগে দুই দুই রাকাত করে নামাজ আদায় করা হয়, একে ‘তারাবি নামাজ’ বলা হয়। আরবি ‘তারাবিহ’ শব্দটির মূল ধাতু ‘রাহাতুন’ অর্থ আরাম বা বিশ্রাম করা। শরিয়তের পরিভাষায় মাহে রমজানে তারাবি নামাজ পড়াকালীন প্রতি দুই রাকাত অথবা চার রাকাত পরপর বিশ্রাম করার জন্য একটু বসার নামই ‘তারাবি’।

তারাবির নামাজের নিয়ত

নাওয়াইতুআন উসালি­য়া লিল্লাহি তাআলা, রাকাআ’তাই সালাতিত তারাবিহ সুন্নাতু রাসুলিল্লাহি তাআ’লা মুতাওয়াযজ্জিহান ইলা যিহাতিল কা’বাতিশ শারিফাতি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআতের সহিত নামাজ হয় তবে- ইক্বতাদাইতু বি হাজাল ইমাম বলতে হবে)।

বাংলা অর্থ : আমি কিবলামুখী হয়ে দুই রাকাআ’ত তারাবিহ সুন্নাত নামাজ আল্লাহর জন্য আদায়ের নিয়্যত করছি, আল্লাহু আকবার। (যদি জামাআ’তের সহিত নামাজ হয় তবে- এই ইমামের ইমামতিতে জামাআ’তের সহিত)।

যাদের আরবী উচ্ছারণ করতে সমস্যা হয় অথবা পড়তে পারেন না, তারা বাংলায় নিয়ত করতে পারবেন।

তারাবির নামাজের সহীহ নিয়ম

এশা’র চার রাকাত ফরজ নামাজ ও ২ রাকাত সুন্নত আদায় করার পর এবং বিতর নামাজের আগে তারাবীহ্ নামাজ আদায় করতে হয়।

তারাবি নামাজের চার রাকাত পরপর দোয়া

উচ্চারণ : সুব্হানাযিল মুলকি ওয়াল মালাকুতি, সুব্হানাযিল ইয্যাতি, ওয়াল আয্মাতি, ওয়াল হাইবাতি, ওয়াল কুদরাতি, ওয়াল কিবরিয়াই, ওয়াল যাবারুত। সুব্হানাল মালিকিল হাইয়্যিল্লাজি লা-ইয়ানামু ওয়ালা ইয়ামুতু আবাদান আবাদা। সুব্বুহুন কুদ্দুছুন রাব্বুনা ওয়া রাব্বুল মালাইকাতি ওয়ার রূহ।

প্রত্যেক দুই রাকাআ’ত পর সালাম ফিরানোর পর ইসতেগফার পড়তে হয়, দুরুদ পড়তে হয়, আল্লাহর স্মরণে জিকির করতে হয়। তারপর চার রাকাআ’ত হলেও কুরআন হাদিসের দুআ’গুলো পড়া হয়; যে দুআ’গুলো পাঁচ ওয়াক্ত নামাজে পড়া হয়। কিন্তু তারাবির যে দুআ’টি বর্তমানে জারি আছে, এই দুআ’টি কোরআন-হাদিস সম্বলিত নয়; এটিও কোনো এক বুজুর্গ ব্যক্তি লিখে এর প্রচলন করেছেন, যার অর্থও ভালো বিধায় আমরা পড়ে থাকি।

তারাবি নামাজের ফজিলত

রমজান মাসে তারাবি নামাজের ফজিলত ও মর্যাদা সম্পর্কে রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যে ব্যক্তি ইমান ও আত্মবিশ্লেষণের সঙ্গে পুণ্য লাভের আশায় রোজা রাখেন, তারাবি নামাজ পড়েন এবং কদরের রাতে জাগ্রত থেকে আল্লাহর ইবাদত করেন, তাঁর জীবনের পূর্বের সব গুনাহ মাফ করা হবে।’ (বুখারি ও মুসলিম)

আজান

আজান শব্দের অর্থ হচ্ছে ডাকা, আহবান করা। ইসলামি শরিয়তের পরিভাষায় জামাআতের সহিত নামাজ আদায় করার লক্ষ্যে মানুষকে মসজিদে একত্রিত করার জন্য আরবি নির্দিষ্ট শব্দ ও বাক্যের মাধ্যমে উচ্চকণ্ঠে ডাক দেয়া বা ঘোষণা করাকেই আজান বলা হয়।

আজানের দোয়া

আজান শেষ হবার পর আজানের দোয়া পড়তে হয়।

বাংলা উচ্চারণ: আল্লাহুম্মা রাব্বা হাযিহিদ দা’ওয়াতিত্তা-ম্মাতি ওয়াসসালা-তিল ক্বা-ইমাতি আ-তি সায়্যেদানা মুহাম্মাদানিল ওয়াসী-লাতা ওয়াল ফাদ্বী-লাতা ওয়াদ দারাজাতার রাফী-‘আতা ওয়াবআসহু মাক্বা-মাম মাহমূদানিল্লাযী ওয়া’আদতাহূ ওয়ারযুক্বনা শাফা-‘আতাহূ ইয়াওমাল ক্বিয়া-মাতি ইন্নাকা লা-তুখলিফুল মী-‘আদ।

বাংলা অর্থ: হে আল্লাহ! এই পরিপূর্ণ আহ্বান এবং প্রতিষ্ঠিত সালাতের রব্ব! মুহাম্মাদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কে ওসীলা তথা জান্নাতের একটি স্তর এবং ফযীলত তথা সকল সৃষ্টির উপর অতিরিক্ত মর্যাদা দান করুন। আর তাঁকে মাকামে মাহমূদে (প্রশংসিত স্থানে) পৌঁছে দিন, যার প্রতিশ্রুতি আপনি তাঁকে দিয়েছেন। নিশ্চয় আপনি প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেন না।

ইকামত

আজানের পর নামাজ শুরুর আগে ইকামত দিতে হয়।

ইক্বামাত শব্দের অর্থ হচ্ছে দাঁড় করানো, প্রতিষ্ঠা করা। অর্থাৎ জামাআতে নামাজ পড়ার উদ্দেশ্যে নামাজের পূর্ব মূহুর্তে আজানের শব্দ বা বাক্য দ্বারা নামাজ আরম্ভ হওয়ার ঘোষণাকেই ইক্বামাত বলা হয়। যাতে আজানের চেয়ে একটি বাক্য অতিরিক্ত রয়েছে। তা হলো (ক্বাদ ক্বামাতিস সালাহ)। মৌখিকভাবে মুয়াজ্জিনের সঙ্গে শ্রবণকারীদের জন্য আজানের উত্তর দেয়া সুন্নাত।a

বিএনএ/ বিএম, হাফিজ, এসজিএন

Loading


শিরোনাম বিএনএ